Barak UpdatesAnalyticsBreaking NewsFeature Story
উনিশ আমাদের শেকড়, লিখেছেন ভাস্কর দাস
১৯ মে : তখন আর বয়স কত হবে যখন প্রথমবার ফুল দিয়ে “নমো” (প্রণাম) করছিলাম শহিদবেদীতে। তার পর বহু বছর এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ফুল, মালা, শহিদবেদী, শ্মশানঘাট, শিলচর রেলস্টেশন, মিছিল পদযাত্রা, পথনাটক, গান এবং অবশ্যই আল্পনা — সব মিলিয়ে আমাদের উনিশ। এতবছর এতে বৃষ্টি বাদ দিয়ে কোনও বিপত্তি ছিল না৷ কিন্তু গেলো দুবছরের মহামারি সমস্ত স্মৃতিকেই পাল্টে দিচ্ছে যেন। তবে উনিশ জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বে, আমাদের সত্ত্বায়। চাইলেই মুছে ফেলা যায় না, মহামারির করাল থাবাও তা পারবে না।
উনিশ হঠাৎ, উনিশ প্রতিদিন, উনিশ অন্তহীন। একষট্টির পর রেলস্টেশনের রক্তমাখা ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি তা ঠিক, তবে আক্রমণ কিন্তু থেমে থাকেনি। ভাষা সার্কুলার হোক, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হোক , নাগরিক যন্ত্রণায় হোক আমরা প্রচুর বৈষম্যের শিকার হয়েছি। সে জন্যই উনিশ হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের অন্য নাম। নিজের আত্মপরিচয়, নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার অদম্য লড়াইর নাম উনিশ। এই লড়াই শুধুমাত্র বাংলাভাষীদের লড়াই নয়। এ লড়াই প্রত্যেকটি মানুষের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াই।
যেহেতু এই লড়াই অস্তিত্বের লড়াই, তাই আমার মনে হয়, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ ছাড়াও আমাদের আরও কিছু ভাবতে হবে। নবীন প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে হবে মাতৃভাষার বিজয়কেতন। পাঠ্য বই থেকে শুরু করে শিলচর রেলস্টেশনে উনিশের সরকারি স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হবে। নইলে যারা ক্ষমতার চর্চা করেন তারা তো চাইবেন, আমরা যেনো ভুলে যাই নিজের শেকড়কে। আর এ কথা কে না জানে বিশাল বটবৃক্ষকে স্থানচ্যুত করা যায় না কিন্তু ভাসমান শ্যাওলাকে নিমেষেই ছুড়ে ফেলা যায় বহুদূর! উনিশ আমাদের সেই শেকড়। এই শেকড়ের যত বিস্তার হবে, ততই আঁকড়ে ধরবে মাটিকে এবং ততই শক্তিশালী হবে আমাদের অস্তিত্বের লড়াই, আমাদের আত্মমর্যাদার লড়াই। আত্মপরিচয়ের যে আকাশের ঈশান কোণ এখনও খানিকটা মেঘাচ্ছন্ন, আমার বিশ্বাস সূূূর্যের রক্তিম আভা সেই ঈশানকোণ থেকেই আসবে এবং পথ দেখাবে। পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার জয় হোক।
(তরুণ লেখক ভাস্কর দাস একজন স্কুলশিক্ষক)