Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
যোগদিবস : কী বললেন আমাদের প্রশিক্ষকরাYoga Day: Let’s listen to the Instructors
আজ ২১ জুন, আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। করোনা মহামারির প্রবল প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিশ্বের দুশোটিরও বেশি দেশ এই দিনটি পালন করছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সুস্থ-সুন্দর দেহ-মন গড়ে তুলতে প্রত্যেকে সংকল্প নিচ্ছেন নিয়মিত যোগ চর্চা করার। হ্যাঁ, করোনা সতর্কতায় এবার প্রকাশ্যে হচ্ছে না অনুষ্ঠান। আয়োজন অনলাইনে। ‘ঘরে থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগ চর্চা’ এই থিম আঁকড়ে ধরেই চলছে যোগাভ্যাস। আর এই উপত্যকাও এই উদ্যম থেকে আলাদা নয়। দেশের সঙ্গে গ্রাম বরাকেও হচ্ছে যোগ দিবস।সরকারের সঙ্গে কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে ব্যস্ত যোগ প্রশিক্ষকরাও। এরই ফাঁকে একটু সময় চেয়ে প্রবীণ ও তরুণ প্রজন্মের ক’জন প্রশিক্ষকের সঙ্গে কথা বললেন ওয়ে টু বরাক-এর প্রতিনিধি শতাক্ষী ভট্টাচার্য। খুব ছোট্ট করে জানতে চাইলেন যোগ সম্পর্কে তাঁদের ভাবনা।
রাধেশচন্দ্র চক্রবর্তী
(বর্ষীয়ান যোগ প্রশিক্ষক ও একসময়ের জাতীয় স্তরের বিচারক, কাটিগড়া, কাছাড়)
জীবনের আট দশক পেরিয়ে এসেছি। সাক্ষী রয়েছি বহু ঘাত-প্রতিঘাতের। বহু প্রতিকূলতা আছে এখনও। কিন্তু নিয়মিত যোগাভ্যাস চলছে আমার। হয়তো তাই এই বয়সেও শরীর ও মনকে নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। আজকাল প্রায়ই অনেককে বলতে শোনা যায়, খুব বেশি চাপ ও ব্যস্ততার জন্য সময় বের করতে পারেন না। তাই যোগ অনুশীলন সম্ভব হয় না। আমি বলব, নিজেরা এই বাহানা থেকে বেরিয়ে আসুন। কারণ চাপ থেকে রেহাই পেতে তো আসন, প্রাণায়াম, ধ্যান এসব আরও বেশি জরুরি। তাই নিজে অভ্যাস করুন। ছেলেমেয়ে, পরিবার-পরিজনদেরও এই যোগ সম্পর্কে সচেতন করুন।
ডা: বিনয় ভট্টাচার্য
(যোগ থেরাপিস্ট ও জাতীয় যোগাসন বিচারক, করিমগঞ্জ)
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যোগ অতুলনীয়। তাই শুধু নিজে নয়, পরিবারের সবাই মিলে যোগাভ্যাস করুন। এভাবে ব্যক্তি থেকে পরিবার, পাড়া, গ্রাম হয়ে বৃহত্তর সমাজে ছড়িয়ে পড়বে এই যোগ প্রক্রিয়ার সুফল। গড়ে উঠবে এক সুস্থ ও নীরোগ সমাজ।
দীপঙ্কর চক্রবর্তী
(আর্ট অব লিভিং শিক্ষক ও যোগ প্রশিক্ষক, কলকাতা)
আমরা সবসময় নেতিবাচক কথাকেই বেশি পাত্তা দেই। খুব বেশি আলোচনা করি। পজিটিভ বা ইতিবাচক নিয়ে তেমন প্রভাবিত হই না। একজন গালাগাল দিলে খুব মনে রাখি, কিন্তু ওই মানুষটা যদি এর আগে আমাকে বহুবার প্রশংসা করে তা ভুলে যাই। মনে পজিটিভিটি নিয়ে আমাদের থাকা যেমন দুষ্কর। এক্ষেত্রে যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধ্যান, ধারণা ও সমাধি যোগ-এর এই আটটি ধাপের জ্ঞান খুব দরকার। এই জ্ঞান আমাদের পজিটিভ ভাবতে অনুপ্রাণিত করবে। মন্দকে বাদ দিয়ে শেখাবে ভালকে গ্রহণ করতে।
বিপ্রাশিস চক্রবর্তী
(যোগ প্রশিক্ষক ও জাতীয় যোগাসন বিচারক, শিলচর)
আজকের দিনে সমাজে নেশার প্রভাব বাড়ছে। বিশেষ করে আমাদের যুব প্রজন্মকে গ্রাস করছে নেশার আদত। আর একমাত্র যোগ প্রক্রিয়ার শৃঙ্খলাবদ্ধ দিনলিপিই এই কুপথ থেকে বাঁচাতে পারে দেশ ও সমাজের এই ভবিষ্যতদের। শুধুমাত্র আসন, প্রাণায়াম বা ধ্যান নয়, ভাল-মন্দ বিচার করার ক্ষমতাও গড়ে দেয় এই যোগ প্রক্রিয়া। তাই আসুন নেশামুক্ত ও সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে যোগকে করি নিত্যসঙ্গী।
অভিষেক মজুমদার
(আর্ট অব লিভিং শিক্ষক ও যোগ প্রশিক্ষক, বদরপুর)
প্রাচীন যোগ বিজ্ঞান সম্পর্কে জানার পরিধি বাড়াতে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে পাকাপোক্ত যোগ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কিছু শরীরচর্চার মাধ্যমে শুধুমাত্র দেহের বাইরের পেশীকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলাই মানে যোগ শিক্ষা নয়। প্রকৃত যোগশিক্ষা প্রত্যেককেই বাইরে-ভেতরে আলোকিত করে তোলে। আসুন যোগের আদর্শ মেনে আমার ও আপনার প্রতিটা মুহূর্তকে আলোকিত করে তুলি।
সঞ্জীব দাস
(যোগ প্রশিক্ষক ও জাতীয় যোগাসন বিচারক, করিমগঞ্জ)
আমার অনুমান, এই বরাক উপত্যকায় আজকের দিনে এক শতাংশ মানুষও যোগাভ্যাস করেন না। যা খুবই দুঃখের। সারা বিশ্ব যোগ চর্চার বিকল্প দেখছে না। অথচ, আমাদের এই অবস্থা। এ ব্যাপারে সজাগ হতে হবে। স্বাস্থ্যই সম্পদ একথা মাথায় রেখে নিয়মিত যোগ প্রক্রিয়া অনুশীলন করুন। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে জীবন কাটান।
পুলক ভট্টাচার্য
(আর্ট অব লিভিং অসম রাজ্য সংযোজক ও যোগ প্রশিক্ষক, শিলচর)
স্বাস্থ্যসম্মত জীবন -যাপনের একটি প্রাকৃতিক পথ হচ্ছে যোগ। দেহ-মনের যত্ন নেওয়ার একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ পথ হচ্ছে যোগ। তাই, এই যোগের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কিছুটা হলেও আত্মস্থ করা আমাদের জীবনে খুব জরুরি। একজনকে সর্বাঙ্গীন বিকশিত করতে যোগবিজ্ঞান সর্বোপরি।
সুমন পাল
(আর্ট অব লিভিং শিক্ষক ও যোগ প্রশিক্ষক, শিলচর)
যৌগিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পারাপার নেই। তবে দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসে সাধারণভাবে ততটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। উপযুক্ত শিক্ষকের পরামর্শে কিছুটা সময় বের করে যোগাভ্যাস করলেই হলো। কিন্তু শিক্ষক হতে গেলে আগে নিজে সমৃদ্ধ হতে হবে। একজন শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষক, উভয় প্ল্যাটফর্মে এব্যাপারে আমার উপলব্ধি থেকেই কথাটি বললাম।
পিঙ্কুরঞ্জন পাল
(যোগ প্রশিক্ষক, শিলচর)
সুস্থ দেহ ও প্রফুল্ল মন থাকলে সব কাজই ভালো হয়। পড়াশোনা, চাকরি সবকিছুই একাগ্রতা সহকারে করা যায়। কিন্তু অশান্ত মন ও অসুস্থ শরীরে কোনও কিছুই সঠিকভাবে হয় না। মন ঠিক না থাকলে শরীর খারাপ লাগবেই। অন্যদিকে শারীরিক সমস্যা হলে তার প্রভাব পড়বে মানসিক ক্ষেত্রেও। আর এই শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখতে যোগ প্রক্রিয়ার কোনও বিকল্প নেই।
চন্দন দেব
(যোগ প্রশিক্ষক, শিলচর)
যোগ’কে আমি জীবনের অঙ্গ মনে করি। চলার প্রতিটি মুহূর্তে এর গুরুত্ব রয়েছে। যোগাভ্যাসের উপকার বলে বোঝানো যাবে না। নিজে করুন বুঝতে পারবেন। এখানে কৃত্রিমতার জায়গা নেই। সবই প্রাকৃতিক। অভ্যাস করে যান, সুফল গুনে যান।