Barak UpdatesHappeningsBreaking News

ব্রিটিশের লিগ্যাসিই বহন করছে বিজেপি সরকার, বক্রোক্তি তমালের

ওয়েটুবরাক, ১২ ফেব্রুয়ারি : বর্তমান সরকার কালা কানুন প্রয়োগের সরকার। ইংরাজ আমলে সাধারণ মানুষকে নানাবিধ পন্থায় বিভিন্ন ধরনের জনবিরোধী আইন বানিয়ে অত্যাচার করা হতো, বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সেই লিগ্যাসি বহন করে চলেছে। এই অভিযোগ করেছেন শিলচর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তমালকান্তি বণিক। তিনি বলেন, নির্যাতন করার মানদণ্ডে ইংরাজদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছেন মোদি-শর্মারা। এর নবীনতম নিদর্শন হলো, মিউনিসিপ্যালিটির দ্বারা গৃহ নির্মাণের অনুমতি প্রদানে সরকার নির্দ্ধারিত নতুন নিয়ম।গৃহ নির্মাণের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে পুরনো যে নিয়ম ছিল,  সেই নিয়মানুসারে ধার্য মূল্য থেকে বর্তমানে প্রায় ২৫ গুণ বৃদ্ধি ঘটানো হয়েছে। তাঁর কথায়, এই ভাবে সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করার যে ফন্দি সরকার করেছে, তা শুধু নিন্দনীয়ই নয় বেআইনিও বটে।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি জানান, আগে বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে মাত্র ২০০ টাকা প্রসেসিং ফি দিতে হতো, যা পরে মূল খরচের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হতো। এখন সেখানে বাঁশ বেতের আসাম টাইপ ঘরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গ ফুট ৫০ পয়সা ও ফুল ওয়ালের ক্ষেত্রে দিতে হবে ১ টাকা প্রতি বর্গ ফুট। আরসিসি ঘরের ক্ষেত্রে ১০ টাকা প্রতি বর্গ ফুট। উপরের দিকে প্রতি তলায় ২ টাকা হারে দর বৃদ্ধি পাবে। কমার্শিয়াল, মন্দির, মসজিদ, ফ্ল্যাট বাড়ির ক্ষেত্রে তা আরও বেশি।
উপরোন্তু বিল্ডিং নির্মাণের অনুমতির দরখাস্তের সঙ্গে বিল্ডিং নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হবে যেসব সামগ্রী তার পরিমাণ ও দর কষে এস্টিমেট বানিয়ে জমা করতে হবে।
গৃহ নির্মানের মোট খরচের এক শতাংশ হারে লেবার সেস্ ও বালি পাথর সহ যাবতীয় ফরেস্ট মেটেরিয়্যাল যা যা ব্যবহৃত হবে তার উপর ২ % হারে ফরেষ্ট রয়্যালটি জমা করতে হবে। ফরেস্টের সব জিনিসের জন্যই রাজ্যের বন বিভাগ’কে রয়্যালটি দিয়ে পারমিট নিয়ে মাল সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু মিউনিসিপ্যালকে যে রয়্যালটি দেওয়া হবে তার সঙ্গে পারমিটের কোনও সম্পর্ক নেই। মাল সংগ্রহের পারমিটের জন্য আসামের বন বিভাগেকে আলাদা রয়্যালটি দিতে হবে। কাজেই নজিরবিহীন ভাবে একই মালের জন্য ২ বার টাকা দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। নির্মাণ শ্রমিক’রা অসংঠিত বর্গের শ্রমিক, সরকারি খাতায় তাদের অধিকাংশের নামেরই কোনও পঞ্জিয়ন অদ্যাবধি হয়নি। লেবারদের নামে ১ শতাংশ হারে শ্রমিকদের জন্য মিউনিসিপ্যালিটিতে যে সেস জমা করা হবে সেটার বেনিফিট লেবার ওয়েল ফেয়ার ফান্ডে জমা হবে ঠিকই, কিন্তু ওয়েলফেয়ারের সুবিধা কারা পাবেন, সে সম্পর্কে কোনও কথা সরকারি ফরমানে নেই।
যদি একটা সাধারণ বিল্ডিং নির্মাণের এস্টিমেট ৫০ লক্ষ টাকা হয়, তবে একজন মানুষকে তার ৫০ লক্ষ টাকার বাড়ির জন্য বর্দ্ধিত প্রসেসিং ফি ছাড়াও লেবার ও ফরেষ্ট মেটেরিয়্যালের ফিস বাবদ ১,৮০,০০০ টাকা দিতে হবে।এবং আরও রহস্যজনক বিষয় হল যে, সাধারণ বাড়ি নির্মাণের যে এস্টিমেট জমা করতে হবে, সেখানে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে সেন্ট্রাল পিডব্লিউডি-র যে বিল্ডিং সিডিউল রয়েছে সেই রাশি অনুসারে। সেন্ট্রাল পিডাব্লিউডি যে গাইড লাইন মেনে নির্মাণ কাজ করে, সাধারণ মানুষ গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই গাইড লাইন অনুসরন করেন না। সেন্ট্রাল পিডাব্লিউডি-এর অধীনে সরকারের বিশেষ প্রকল্পের ব্যয়বহুল কাজগুলি হয়ে থাকে।সেন্ট্রাল পিডাব্লিউডি-এর গাইড লাইন মেনে এস্টিমেট তৈরি করলে ৫০ লক্ষ টাকার এস্টিমেট গিয়ে দাঁড়াবে ৯০ লক্ষ টাকায় এবং ফরেস্ট ও লেবার সেস্ ৯০ লক্ষ টাকার হিসাবেই জমা করতে হবে।
একটি নিজের ছোট্ট বাড়ি তৈরি করা, নিদেন পক্ষে একটি ফ্ল্যাট বাড়ির মালিক হওয়া নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের সযত্নে লালিত সুখস্বপ্ন। বর্তমানের মুল্যবৃদ্ধির বাজারে ওষুধপত্র সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্যবৃদ্ধিতেই সাধারণ মানুষের যেভাবে নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে গৃহ নির্মাণের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত কর আরোপ করে সাধারণ মানুষের গৃহ নির্মাণের স্বপ্নকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে বর্তমান সরকার।
সরকারি এই ফরমান অবিলম্বে রদ না করলে জনগণের স্বার্থে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে তমাল হুঁশিয়ারি দেন। পাশাপাশি শুনিয়ে রাখেন, এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে তার সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে বিজেপি সরকারকে।
একের পর এক জনবিরোধী কাজ ও জনগণের ভোটে জিতে জনগণের সাথে বঞ্চনা করার অপরাধে অপরাধী এই সরকারকে তীব্র ধিক্কার জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker