Barak UpdatesIndia & World UpdatesAnalyticsBreaking NewsFeature Story

শিলচরের মেয়ে ব্রিটেনে ডাক্তারি করে করোনায় আক্রান্ত
Silchar girl doctor by profession in Britain affected by Corona

বললেন, ঘরে থাকুন, নিয়মিত প্রাণায়াম করুন

২২ এপ্রিলঃ শিলচরের মেয়ে দীপমালা নাথ ব্রিটেনে চিকিৎসা করে এখন করোনায় আক্রান্ত৷ আশা করছেন, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ তিনি চিন্তিত ভারতের কথা ভেবে৷ ভাবছেন, ব্রিটেনের অবস্থা হলে তাঁর দেশের মানুষের কী হবে!

সোনাই রোডে বাড়ি দীপমালাদের৷ বাবা-মা এখানেই৷ ২০০৩ সালে হলিক্রশ স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ডাক্তারি পড়েন শিলচর মেডিক্যাল কলেজে। ২০১৩-র ডিসেম্বরে বিয়ে। সে বারই চলে যান ব্রিটেনে। স্বামী সেখানে একটা কোম্পানিতে আইটি ইঞ্জিনিয়ার।  তিনি নিজেও সেখানে প্র্যাকটিস করছেন। এখন আছেন লন্ডনের কাছে বাকিংহামশায়ারের অ্যামেরশাম হসপিটালে।

সেখান থেকেই টেলিফোনে তিনি জানান, ব্রিটেনে এখন কে যে করোনা আক্রান্ত নন, সেটাই বলা মুশকিল। রোগীর ঢল নামছে হাসপাতালগুলোতে। ডাক্তার কম, নার্স কম। কারণ সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেড। তাঁর কথায়, এমনকী, ডাক্তারদের পিপিই কিট-ও দুর্লভ। শুধু আইসিইউ-তে ডিউটি যাদের, তাঁরাই পিপিই পরছেন। তাঁকেও প্লাস্টিক গাউন, সার্জিক্যাল মাস্ক ও গ্লাভস পরেই রোগী দেখতে হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে ৫ জন রোগী ছিল তাঁদের দুই চিকিতসকের দায়িত্বে। রোগীদের ২ জন পজিটিভ। অন্য ৩ জনেরও লক্ষণ দেখে পজিটিভ বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ৩ এপ্রিল দুই চিকিতসকই আক্রান্ত হয়ে পড়েন। দীপমালা বললেন, প্রথমে শুকনো কাশি। সঙ্গে জ্বর। পরদিন থেকে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা।

এমন আশঙ্কা তাঁর অবশ্য আগে থেকেই ছিল। তাই আগে থেকে মালটি-ভিটামিন নিচ্ছিলেন। সঙ্গে ব্যায়াম। করছিলেন প্রাণায়ামও। সেখানকার ডাক্তারদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ব্রেথিং এক্সারসাইজ দেওয়া হয়েছিল। তাও নিয়মিত করছিলেন বলে জানান ডা. দীপমালা। বলেন, ‘কিছু অ্যান্টি-বায়োটিকও নিয়েছি। কারণ করোনায় অনেকের ফুসফুসে নিউমোনিয়া হয়ে যাচ্ছে।’

তাঁর কথায়, ‘বিছানায় শুয়ে আমি ভাবছি দেশের মানুষের কথা। ভারতেও প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে রোগীদের সংখ্যা। আতঙ্কে রয়েছি, কখন না অবস্থাটা এখানকার মত হয়ে যায়।’

ব্রিটেনে এখন করোনা রোগীদের হাসপাতালে রাখা হয় না। ধরা পড়লেই বলা হচ্ছে, ‘দ্রুত বাড়ি চলে যাও। বাড়িতে থাকো।’ আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীর পরিজনরা অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেই হাসপাতালে রাখা হয়।

নাগাড়ে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল শিলচরের মেয়ে, শিলঙের বধূ দীপমালারও। বললেন, ‘আমি তো তবু ডাক্তার বলে অ্যান্টি-বায়োটিক নিয়েছি। সাধারণ রোগীদের বাড়ি থাকো-র বাইরে কোনও প্রেসক্রিপশন নেই। ফলে টিভিতে বা অন্যান্য মাধ্যমে ব্রিটেনে আক্রান্তদের যে সংখ্যাটা দেখা যায়, বাস্তবে এর চেয়ে ঢের বেশি।’

এখন তো আরেক সমস্যা সেখানে। ডাক্তাররাই একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতাল চালানো মুশকিল। তাই করোনায় আক্রান্ত ডাক্তারদেরও ডাকাডাকি হচ্ছে। ডাক্তারের নিজের হলে নাকি ৭ দিনই সুস্থ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ‘ কিন্তু আমি তো আমার অবস্থাটা বুঝছি। সপ্তাহ পেরোতেই আমারও ডাকাডাকি শুরু।  এখনও আমি সুস্থ নই। আমার থেকেও অন্যদের পজিটিভ হতে পারি। তাই অন্তত আরও এক সপ্তাহের আগে রোগী দেখব না’, জানান তিনি।

ভয়ের কথা কি এখানেই শেষ ! বললেন, ‘আমি করোনা মুক্ত কিনা আমার কিন্তু আর টেস্ট হবে না। আবার পরীক্ষা করানো একেবারে অসম্ভব। কারণ যথেষ্ট সংখ্যক টেস্ট কিট নেই৷ কত মানুষের প্রথমবার পরীক্ষাই হচ্ছে না। ডাক্তার বলে আমার তো তবু একবার হয়েছে।’

চিন্তায় ডা. দীপমালা, ভারতে এই অবস্থা হলে কী হবে! তাই তাঁর পরামর্শ, ‘প্রত্যেকে সাধ্যমত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিন। ভিটামিন সি ট্যাবলেট, লেবুর সরবত, টম্যাটো, অরেঞ্জ জ্যুস খান। প্রাণায়াম করুন। বিশেষ করে কপালভাতি আর অনুলোম-বিলোম। শ্বাস নিয়ে ৫ সেকেন্ড আটকে রেখে পরে ছেড়ে দিন। এ ভাবে পরপর পাঁচবার করুন। ষষ্ঠবারে শ্বাস নিয়ে ৫ সেকেন্ড আটকে রেখে পরে কাশি দিন। পেট চেপে ১০ মিনিট শুয়ে থাকুন ও দীর্ঘশ্বাস নিতে থাকুন।’
সঙ্গে এও উল্লেখ করেন, এতসবের চেয়েও জরুরি কথাটা হল, বাড়িতে থাকা। কারণ কে যে আক্রান্ত, আর কে নন, বোঝার উপায় নেই। অনেকে হয়তো নিজের অজান্তেই সংক্রমণ নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। তাদের কে কখন কার পাশে দাঁড়িয়ে হাঁচি-কাশি দেবেন, বলা যায় না। তবু যুবাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। হাঁপানি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা বৃদ্ধ হলে তো দ্রুত সংক্রমণ ঘটে। আরও একটা বিষয় তিনি মনে রাখতে বলেন, করোনা সেরে গেলেও ফুসফুসে প্রভাব ফেলে যায়। তা থেকে রক্ষার একটাই উপায় নিয়মিত প্রাণায়াম। তাঁর বিশ্বাস, ‘আমি তা করছি বলেই ছয় সপ্তাহে পুরো সুস্থ হয়ে উঠব।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker