NE UpdatesHappeningsBreaking News

নাগাল্যান্ডে সেনার গুলিতে নিহত ১৬ নিরীহ গ্রামবাসী

ওয়েটুবরাক, ৫ ডিসেম্বর: গ্রামবাসীদের ওপর দুই দফা গুলি চালনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে গ্রামবাসীদের আক্রমণে নিহত হয়েছেন এক প্যারা কম্যান্ডো। বিকেলে উত্তেজিত জনতা আসাম রাইফেলসের শিবিরে হানা দিলে তৃতীয় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে৷ অন্তত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ নাগাল্যান্ডের মন জেলায় এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন৷ তবে সরকারি সূত্রে মৃতের সংখ্যা ১৬ বলে জানানো হয়েছে। জখমের সংখ্যা বহু। উত্তেজনা এড়াতে রাজ্য সরকার মন জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট, ডেটা পরিষেবা, এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দিল। মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও দিল্লি সফর ও শান্তি আলোচনা সংক্রান্ত বৈঠক অসমাপ্ত রেখেই বিকেলে কোহিমা পৌঁছলেন।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,  শনিবার সন্ধ্যায় কয়লা খনির কাজ সেরে দিনমজুররা একটি পিক আপ ভ্যানে চেপে নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন। প্যারা কম্যান্ডোদের কাছে খবর ছিল, অরুণাচলের দিক থেকে জঙ্গিরা নাগাল্যান্ডে ঢুকবে। ওটিং গ্রামের কাছে খনিমজুরদের গাড়ি আসতে দেখেই কম্যান্ডোরা গুলি চালাতে থাকেন। পিক আপ ভ্যানে ছিলেন ৮জন। ঘটনাস্থলে ৬ জনের মৃত্যু হয়। ২ জন জখম হন। স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে গ্রামের মানুষ সেখানে হাজির হলে কম্যান্ডোদের সঙ্গে তাঁদের আরও এক প্রস্থ সংঘর্ষ হয়। কম্যান্ডোদের দু’টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এক কম্যান্ডোকে ঘিরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। তাঁর গুলিতে মারা যান আরও কয়েকজন গ্রামবাসী। গুলি শেষ হলে তাঁকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

মন জেলার বিজেপি সভাপতি ন্যাওয়াং কন্যাক দাবি করেন, বিজেপির পতাকা লাগানো গাড়িকেও রেয়াত করেনি সেনা। তাঁর বক্তব্য, গুলিচালনার কথা জেনে ভাইপো, প্রতিবেশী ও চালককে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু কাছাকাছি আসতেই তাদের গাড়ি আটকানো হয়। পরিচয় দেওয়ার পরেও গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় জওয়ানরা। কন্যাকের প্রতিবেশী মারা যান। বাকিরা জখম হন।

ঘটনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও বলেন, ওটিং গ্রামে ভুল করে সাধারণ গ্রামবাসীদের হত্যা করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। সরকার নিহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে। ঘটনার তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ তদন্তদল (সিট) গঠন করা হয়েছে। ন্যায়বিচার মিলবেই। তিনি সকলের কাছে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানান।
নাগাল্যান্ডের ঘটনায় কেন্দ্র ও রাজ্যের এনডিএ জোট সরকারকে তোপ দাগেন রাহুল গান্ধী৷ টুইট করেন, ‘নাগরিক হোক বা নিরাপত্তারক্ষী নিজেদের ভূমিতেই কেউ নিরাপদ নন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঠিক কী করছে? কেন্দ্র সরকারকে এর জবাব দিতেই হবে।’ ঘটনার নিন্দা করে টুইট করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে টুইটে লেখেন, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। নিহতদের পরিবার অবশ্যই ন্যায় পাবে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সর্বদলীয় সরকারের অন্যতম শীর্ষ নেতা টি আর জেলিয়াং বলেন, মন জেলার ওটিংয়ে নিরীহদের যে গণহত্যা হয়েছে- তার কোনও ক্ষমা বা অজুহাত হয় না। সভ্য সমাজে নিরাপত্তাবাহিনীর তরফে এমন নৃশংস হত্যা অকল্পনীয়। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে অবিলম্বে তদন্ত কমিশন গড়া হোক।

নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল জগদীশ মুখী বলেন, “আমি ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তদল গঠন করেছি। নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।” ঘটনা প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে এনএসসিএন (আইএম) বলে, এটি নাগাল্যান্ডের ইতিহাসে আরও এক কালা দিবস। সূত্রের ভুল খবরের অজুহাতে এত জনের হত্যার দায় এড়াতে পারবে না ভারতীয় বাহিনী। এক দিকে শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে অন্য দিকে নিরীহ নাগাদের রক্তপাত মেনে নেওয়া যায় না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker