Barak UpdatesCulture
শিলচরে মানুষ নেই, সবাই দেবতা-ফেরেস্তা, লিখলেন চার্লি লিটু
লিটু সাখাওয়াত
শিলচরে মানুষ নেই। যাঁরা রয়েছেন, আমার কাছে, তাঁরা সবাই দেবতা-ফেরেস্তা।
শিলচরে এসে এমন বললে অনেকে মনে করবেন, বাড়িয়ে বলছি। কিন্তু কথাটা আমি বাংলাদেশেও বহু বার বহু জায়গায় বলেছি। নইলে গত বছর অভিনয় করতে এসে ঠিক মঞ্চের পর্দা খুলতেই যে ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম, আর যে ভাবে আবার সুস্থও হয়ে উঠলাম, তা অসংখ্য দেবতা-ফেরেস্তার আশীর্বাদ ছাড়া সম্ভব হতে পারে না। আয়োজকদের একাংশের সঙ্গে তখন আমার মাত্র একদিনের সম্পর্ক। অনেকে আমাকে তখনও দেখেনইনি। দর্শকদের সঙ্গে তো দেখা হওয়ারই সুযোগ মেলেনি। এই অবস্থায় একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে গোটা শিলচর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল! স্রেফ ভাবা যায় না। অথচ তা-ই হল। কত মানুষ যে রাত জেগেছেন নার্সিং হোমে। পরে নিজের দলের কলাকুশলীদের কাছ থেকে সব জানতে পেরেছি। যে তৎপরতায় তাঁরা আমাকে উন্নত চিকিতসার জন্য কলকাতা পাঠালেন, আমি আজও ভাবি, তা দেবতা-ফেরেস্তা ছাড়া কেউ করতে পারেন না। তাই কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর থেকেই শিলচরে আসার জন্য মনটা পড়েছিল।
আমার দ্রুত সুস্থ হওয়ার পেছনে ভূমিকা রয়েছে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরেরও। আমরা তাঁকে নুরভাই বলি। তিনি কলকাতা থেকে বিমানে ঢাকা যাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। দেশে ফেরার পর চিকিতসার জন্য অনুদানও দেন। ওই সময়ে টাকার প্রয়োজন ছিল তো বটেই। তবে টাকার চেয়ে, আমার কাছে মনে হয়, একজন শিল্পীর জন্য রাষ্ট্রের অর্থমঞ্জুরির একটা ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। ঢাকায় ফিরে এনজিওপ্লাস্ট করি। ডাক্তারদের পরামর্শে চারমাস পুরো বিশ্রামে থাকি।
আমি পেশায় একজন টেলিভিশন নাট্যকার। বাংলাদেশে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখি। বিশ্রামের সময় সে সবও বন্ধ থাকে। আমার স্ত্রী শাহিনা আক্তার একজন স্কুল শিক্ষিকা। আমাদের ৩ সন্তান রয়েছে। সবাই ছোট। বড় মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। শাহিনাই সেই দিনগুলিতে সব সামলেছে।
সপ্তম শ্রেণি থেকে আমার নাটক লেখার হাতেখড়ি। সেটি আবার পাড়াতে অভিনীতও হয়। তবে থিয়েটারে পুরোদমে জড়িয়ে পড়া বললে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে নীলফামারি থেকে ঢাকায় আসার পর। এ পর্যন্ত ১২টি মঞ্চনাটক এবং ১২টি পথনাটকে অংশ নিয়েছি। এর মধ্যে বেশ কটি নিজের লেখা,কতগুলি আবার আমারই নির্দেশনায় অভিনীত হয়েছে, হচ্ছে।
ভারতে নাটক করতে আমার প্রথম আসা ২০০৮ সালে। এর আগের বছরই নাটকের জন্য দেশের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছি। এর ১০ বছর পরে শিলচরে এসে মনে হচ্ছে, আমি গত বছর এখানে যে পুরস্কার পেয়েছি, তা অন্য সব পুরস্কারের চেয়ে অনেক অনেক বেশি মূল্যবান। (অনুলিখন)