Barak UpdatesBreaking News
প্রতি সন্ধ্যায় নিয়মিত যান নিয়ন্ত্রণ করলেও ট্রাফিক নন সত্যব্রতHe is not a traffic police, yet Satyabrata helps them to control traffic every evening
২৬ নভেম্বরঃ ঘরের খেয়ে বনের মোষ কে তাড়ায়!
তাড়ান শিলচরের ২৭ বছরের যুবক সত্যব্রত ভট্টাচার্য। তিনি নিজে অবশ্য সেই কথা মানতে নারাজ। বলেন, ঘরের খেয়ে ঠিকই আছে। তবে তা মোষ তাড়ানোর মত অর্থহীন কাজ নয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শহরের যানজটে দেখা যায় ট্রাফিকের মতো দাঁড়িয়ে হালকা গড়নের এক যুবক। কখনও ডানদিকের যানবাহন হাতের ইশারায় আটকে দিচ্ছেন, কখনও বাঁদিকের গাড়ি-রিকশা।
গত বছরের ১৩ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরিয়ে চরম ঝঞ্ঝাটে পড়েন সত্যব্রত। বাই-সাইকেল নিয়ে কিছুতেই এগোতে পারছিলেন না। ও-দিকে অফিসের তাড়া। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি! কাজটাই না চলে যায়! সাইকেলটি এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে লেগে পড়লেন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে। কিছুক্ষণের মধ্যে জট খুলে যায়। দেখতে দেখতে শহরও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তৃপ্ত হলেন মোবাইল রিপেয়ারিং কর্মী সত্যব্রত। সে দিনেই সিদ্ধান্ত নেন, নিয়মিত একঘণ্টা ট্রাফিকের কাজ করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরদিন অফিস থেকে ফেরার পথে দাঁড়িয়ে পড়লেন ব্যস্ত রাস্তায়। এ ভাবেই চলতে থাকে।
কিছুদিনের মধ্যে বিষয়টি নেশায় পরিণত হয়ে যায়। কোনদিকে একঘণ্টা পেরিয়ে যায়, টেরই পান না। এখন থাকেন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। ব্যস্ততম শিব কলোনির মোড়ে বা নেতাজি মার্কেটের সামনেই বেশি সময় দেন। কখনও অন্যত্র ছুটে যান। যে কোনও মোড়ে যানজট তীব্র চেহারা নিলে ডাক পড়ে সত্যব্রতর। তবে পুলিশের ট্রাফিক শাখা কখনও তাঁকে কোনও নির্দেশ দেয় না। বরং খেয়াল রাখেন, উতসাহিত করেন। উতসাহ দেন সাধারণ জনতাও। গত বছর দেশবন্ধু রোড পূজা কমিটি তাঁকে জ্যাকেট উপহার দিয়েছে। এটা পরলে দূর থেকে বোঝা যায়, রাস্তায় কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। একদিন এক বাইকচালক মাস্ক কিনে দিয়ে গিয়েছেন। সত্যব্রত চেনেনও না সেই বাইকচালককে।
তবে তাঁর ঝুলিতে শুধুই যে সুখের কথা, তা নয়। যাদের গতিরোধ হয়, তাদের অনেকে বিরক্তও হন। পুলিশের ওপরও ক্ষিপ্ত হন এরা, আর তিনি তো স্বেচ্ছা-ট্রাফিক! এখন অবশ্য আর কারও তাঁর কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার সুযোগ মেলে না। উচ্চবাচ্য করতে দেখলে পুলিশ তো বটেই, সাধারণ মানুষও তেড়ে যান।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান সত্যব্রত। সে থেকে পরিবারে আর্থিক সঙ্কট। মাধ্যমিক পাশের পর আর ভর্তির কথা ভাবেননি। সে নিয়ে এখন আর আক্ষেপ নেই তাঁর। বরং বললেন, ‘স্থানে স্থানে সংবর্ধিত হয়ে মনে হয়, এত ভালোবাসা সত্যিই কি আমার প্রাপ্য!’