Barak UpdatesHappeningsBreaking News
পিতার হাতে ধর্ষিতা তরুণীকে এক বছর পর বাড়ি ফিরিয়ে নিল ভাইGirl raped by her father taken back home by brother after 1 year
২৮ জুন: মদ্যপ পিতার দ্বারা দফায় দফায় ধর্ষণের শিকার তরুণী অন্তসত্তা হয়ে পড়েছিল৷ শেষে সন্তানটিকেও বাঁচাতেও পারেনি৷ এতে বড় মানসিক ধাক্কা খায় কাছাড় জেলার ঠালিগ্রামের নিভা মুড়া ( নাম পরিবর্তিত)৷ জন্মদাতা পিতা ধর্ষক বলে বাড়িও ফিরতে পারছিল না৷
এ বার উজ্জ্বলা হোম থেকে প্রশাসনের সাহায্যে তাকে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নিতেই আপত্তি আসে নিজেদের সমাজ থেকে৷ অত্যাচারিতাকেই তারা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়৷ তার ভাই নিভাকে ফেরাতে চাইলে এলাকাবাসী জানিয়ে দেয়, তাহলে গোটা পরিবার একঘরে হয়ে থাকবে৷ বারবার বোঝানোর পরে অবশ্য তারা আপত্তি তুলে নেন, বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে সায় জানান৷
অবশেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে যায় নিভা৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ধর্ষকের কেউ লিখিত অভিযোগ দিলেই তাকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে৷
উজ্জ্বলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধর্ষণের চেষ্টা বা ধর্ষণের কথা পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে কারও কাছ থেকে সাড়া পায়নি৷ শেষে প্রসববেদনা উঠলে তাকে ঠালিগ্রাম থেকে নিয়ে হাইলাকান্দির এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
ভর্তি আর কী ! বলা যায়, ফেলে এসেছে৷ পরে উওম্যান হেলপলাইন তাকে একটি অস্থায়ী হোমে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়৷ সেখান থেকে শিলচর পঞ্চায়েত রোডের উজ্জ্বলা শেলটার হোমে পাঠানো হয়৷ শিলচরে যখন আনা হয়, তখন সে অপুষ্টিতে ভুগছিল৷ সঙ্গে পুরো মানসিক বিধ্বস্ত৷ শিশুটিও বাঁচেনি৷ জন্মের পরই তাকে একটি দত্তকগৃহে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ সেখানেই শিশুটির মৃত্যু হয়৷ তাও নিভাকে বিশেষভাবে শোকগ্রস্ত করে তোলে৷
উজ্জ্বলার পক্ষ বলা হয়েছে, তারা প্রথমে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যর মত মিশতে শুরু করে৷ তাতে ধীরে ধীরে জড়তা কাটিয়ে উঠছিল তার৷ পরে কথায় কথায় তার কাছ থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা৷ সে সবের ভিত্তিতে পরে আরম্ভ হয় কাউন্সেলিং৷ মানুষকে যে সংগ্রাম করেই বাঁচতে হয়, ভাল করে বোঝানো হয় তাকে৷ কিছু হাতের কাজও দেওয়া হয় প্রশিক্ষণের জন্য৷ একবছর এইভাবে পেরিয়ে যাওয়ার পর উজ্জ্বলা কর্তৃপক্ষ তাকে বাড়ি ফেরানোর কথা ভাবে৷ কাছাড় জেলা প্রশাসনের সাহায্য চায়৷
অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষে শালগঙ্গা, ঠালিগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলের এনজিও, ক্লাবকর্তাদের ডেকে নিভা মুড়ার কথা জানানো হয়৷ পরে তারা ঠালিগ্রামে নিভার বাড়ি যান, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন, প্রতিবেশীদের পরামর্শ চান৷ তাঁরা জানতে পারেন, তার ভাই তাকে ফেরাতে চান, কিন্তু সমাজের চাপে সাহস পান না৷ প্রতিবেশীরাও জানিয়ে দেন, নিভাকে জায়গা দিলে তাকে একঘরে হতে হবে৷ এ বার ঠালিগ্রাম চা বাগানের ম্যানেজারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়৷ কথা হয় গুদারাঘাটের ভিডিপি সচিব, পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গেও৷ সেখানেই ডেকে পাঠানো হয় নিভার প্রতিবেশীদের৷ তারা অবশ্য শুরু থেকে এককথা৷
প্রজেক্ট ডিরেক্টর পূজা দাসের নেতৃত্বে পুরো টিম প্রতিবেশীদের পুরো ঘটনাটি বোঝানোর চেষ্টা করেন৷ বুঝিয়ে বলা হয়, শাস্তি পাওয়া উচিত তার বাবার৷ তার কী দোষ৷ শেষে গ্রামবাসী তাকে ফেরাতে রাজি হয়৷ জেলা পরিষদ সদস্য ধনঞ্জয় তেলি, বাগান পঞ্চায়েত মনতোষ ওঁরাও, ভিডিপি সচিব অলক রায়ের উপস্থিতিতে নিভাকে বুঝে নেন তাঁর ভাই৷ ওই মুহুর্তে উপস্থিত ছিলেন বিভিডব্লুডিএস-র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর গৌরাঙ্গ চন্দ, মৌসুমী চৌধুরী, সুদীপ্তা দাশগুপ্ত, দিলোয়ার খান প্রমুখ৷