India & World UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story

প্রথম সৌরযান আজ ১১টা ৫০ মিনিটে উৎক্ষেপণের জন্য তৈরি, লিখেছেন ড. হিমাদ্রি শেখর দাস

//হিমাদ্রি শেখর দাস//

Rananuj

সস্তা এবং নির্ভরযোগ্য ! বর্তমানে ইসরোর ট্যাগ লাইনই হচ্ছে এই দুই শব্দ। অন্যান্য দেশের মহাকাশ সংস্থার একটি স্পেস মিশনে যে খরচ হয়, ইসরোতে সেই মিশনের বাজেট কোনও এক জাদুর ছোঁয়ায় অনেকটাই কমে যায়। আর এটা সবাই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে ভারতীয়তাই হচ্ছে সেই জাদু, মানে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’।

ইসরোর পরবর্তী মিশন ‘আদিত্য-এল ১’ এর বাজেটও যে খুব একটা বেশি হবে না তা নিশ্চয় পাঠক আন্দাজ করতে পারছেন। বাজেট মাত্র ৪০০ কোটি টাকা ! যেখানে আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসা ২০১৮ সালে ‘পার্কার সোলার প্রোব’ নামে একটি সৌর মিশনে খরচ করেছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা সেখানে ইসরোর এই মিশনের খরচ তো কিছুই নয়। এই বাজেট ম্যাজিকের জন্য বর্তমানে বিশ্বের নানা মহাকাশ সংস্থার ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরো।

সূর্যকে অধ্যয়ন করার জন্যই এই মিশনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই ২০০৮ সাল থেকেই এই  মিশনের প্রস্তুতি চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিকল্পনা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আর এটাই ভারতের প্রথম সৌর অভিযান। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই সূর্যযান আজ সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে পিএসএলভি সি ৫৭ এর মাধ্যমে মহাকাশে উৎক্ষেপন করা হবে।

যেকোনও মিশনের নামকরণের ব্যাপারে ইসরোর এক আলাদা সুনাম আছে। আদিত্য হচ্ছে সূর্যের এক নাম। তাই ভারতের প্রথম সৌর অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে ‘আদিত্য’। নামের সঙ্গে আবার ‘এল ১’ জুড়ে দেওয়া হল কেন? এর পেছনেও রয়েছে এক মজার কারণ।

সূর্যকে সারাক্ষণ নজরদারি করার জন্যই এই মিশনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এই কাজ করতে হলে আদিত্যকে মহাকাশের এমন এক জায়গায় নিয়ে বসাতে হবে যেখানে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে তার অতিরিক্ত জ্বালানি (Fuel) খরচ করতে হবে না। এল ১ হচ্ছে তেমন একটি বিন্দু।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার। এই দূরত্বের মধ্যে পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে (চিত্রে দেখানো হয়েছে)। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ জোসেফ লুই ল্যাগ্রেঞ্জ-এর নামানুসারেই এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট (এল ১ থেকে এল ৫)। কারণ তিনি এনিয়ে প্রথম অধ্যয়ন করেছিলেন। এল ১ হচ্ছে এর প্রথম বিন্দু, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি সেই জায়গা যেখানে পৃথিবী এবং সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। তাই একটি মহাকাশযান কোনো জ্বালানি খরচ না করেই এল ১ প্রদক্ষিণ করতে পারে। এর আগেও নাসা তাঁদের মহাকাশযানকে সেই বিন্দুতে প্রেরণ করেছিল।

এখন পর্যন্ত সাতটি সৌর অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ মিশনের সঙ্গেই নাসা যুক্ত ছিল। আদিত্য -এল ১ মিশনে মোট সাতটি পে-লোড থাকবে। এর মধ্যে চারটি সূর্যের থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করবে। মূলত ক্রোমোস্ফিয়ার ও কোরোনা নিয়ে গবেষণা করবে আদিত্য-এল ১। বাকি তিনটি আরও অন্যান্য কাজে লাগানো হবে। আমাদের কাছের নক্ষত্র সূর্য পৃথিবীর আবহাওয়ার উপর ঠিক কী প্রভাব ফেলবে তাও জানা সম্ভব হবে। এই সৌরযান আগামী পাঁচ বছর কাজ করবে আর ইসরোর বিজ্ঞানীদের নানা তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করবে।

আপাতত সফল উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় প্রহর গুণা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ইসরো এই মিশনে অবশ্যই সফল হবে।

(ড. হিমাদ্রি শেখর দাস আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker