Barak UpdatesCultureBreaking News

লড়াই করেই তবলাকে ধরে রেখেছেন লুতফুর

৫ নভেম্বরঃ তবলার অ-আ জানা ছিল না তার। বাড়িঘরে কারও গান-বাজনার প্রশ্নই ওঠে না। বরং সুর-তালের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরাও বলেন, মুসলমান ছেলে আবার তবলা বাজাবে কী! ইসলাম ধর্মে ওইসবে আপত্তি আছে। জবাবে লুতফুর রহমান বড়ভুইয়া শুনিয়েছেন জাকির হোসেন, আমজাদ আলি খাঁ, এআর রহমানের কথা। কখনও বলেছেন সলমন খান, আমির খানের গল্প। লাভ হয়নি। কিন্তু তারঁও যে তালের সঙ্গে ভাব জমে গিয়েছে! সব ছাড়তে রাজি তিনি, কিন্তু তবলা নয়।

লুতফুর আসলে গাড়িচালক। মাধ্যমিক পাশের পর স্কুলের পথে না গিয়ে স্টিয়ারিংয়ে বসে পড়েন। সঙ্গীতশিক্ষক অসীম দেবলস্কর ডেকে তাঁকে নিযুক্তি দেন। কাজ খুব বেশি সময়ের নয়। কিন্তু অসীমবাবু একবার গান শেখাতে ঢুকলে আর ফিরতেই চান না। এ বড় বিরক্তিকর! লুতফুর তাই ‘কাকু’র সঙ্গে গিয়ে এককোণায় বসে থাকতেন। লুতফুরের আকর্ষণ গানে নয়। বিস্ময়ভরে তাকিয়ে থাকতেন তবলার দিকে। আঙুলগুলি এদিক-ওদিক ফেললেই কেমন তাল হয়ে বেরিয়ে আসে! ফাঁকে এর-ওর তবলায় তিনিও দু-চারবার আঙুল ঠোকান।

বিষয়টি অন্য কারও নজরে না পড়লেও অসীমবাবু খুব খেয়াল করছিলেন। বছর দশেক আগে তিনিই একদিন রাতভর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে লুতফুরকে নিয়ে গেলেন। রিম্পি শিব সে রাতে তবলায় ঝড় তোলেন। অনুষ্ঠান শেষে একে অপরের মুখের দিকে তাকান। লুতফুরই প্রথম মুখ খোলেন, ‘কাকু, আমি কি তবলা বাজানোটা শিখতে পারি না!’ তখন তার ২২ বছর বয়স। অসীমবাবু লুতফুরকে তবলার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ থেকে বিশারদ সেরে এখন তিনি কাছাড় জেলার বড়খলা, ডলু, জারইলতলা প্রভৃতি অঞ্চলে তবলা শেখান। ভাল অনুষ্ঠান হলেই ডাক পড়ে লুতফুরের। অসীমবাবুর গাড়িটা চালান বটে, কিন্তু মূল উপার্জন তবলাই।

কিন্তু বিয়ের পর তবলা নিয়েই স্বামী-স্ত্রীতে বিবাদ বাঁধে। ‘ঢোল বাজানো স্বামী চাই না’, জানিয়ে দেন স্ত্রী। লুতফুরেরও সোজা কথা, ‘তবলা আমি ছাড়তে পারব না।’ শেষপর্যন্ত তালাকই হয় তাদের। গত বছর দ্বিতীয় বিয়ের আগে তাই নিজেই শর্ত চাপান। তবলায় আপত্তি চলবে না। লুতফুরের কথায়, এখন শান্তিতেই আছেন তাঁরা। শুধু আজও তবলাকে মেনে নিতে পারেননি বাবা আজিজুর রহমান বড়ভুইয়া। তবে আগের মত আপত্তি নেই। তাই কালীপূজার মণ্ডপে শ্যামাসঙ্গীতের সঙ্গে বাজিয়ে এসেও বিনা কৈফিয়তে কেটে গিয়েছে তিনদিন।

‘জানেন কাকু, গাইয়ে-বাজিয়েদের কাছে ধর্মভেদ হয় না,‘ গাড়ি চালাতে চালাতেই বলছিলেন লুতফুর। পিঠ চাপড়ে দেন অসীমবাবু। সঙ্গে স্বগতোক্তি, ‘সাধক না হলে কেউ এমনটা বলতে পারে না। নইলে কি আর ছেলেটা এত লড়াই জিতত!‘

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker