NE UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
বরাক বঙ্গের কলকাতার অনুষ্ঠানে উঠে এল আসামের বাঙালির বঞ্চনার কথা, লিখেছেন সুদীপ্ত দেবরায়
//সুদীপ্ত দেবরায়//
বরাক উপত্যকার ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষার যে আন্দোলন চলমান রেখেছে ‘বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’ তারই সম্প্রসারিত অংশ হচ্ছে সংগঠনটির ‘কলকাতা অধ্যায়’ । ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অধ্যায়টি গত বছর ৮ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো মূল সংগঠনের ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’ পালন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির সভাগৃহে । এ বছর এই অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় কলকাতা সল্ট লেকে বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের সভাগৃহে ।
শুরুতে কলকাতা অধ্যায়ের সভাপতি রণবীর পুরকায়স্থ সবাইকে স্বাগত জানান। তাঁর নাতিদীর্ঘ ভাষণে ঈষাণ বাংলা এবং বাংলার তৃতীয় ভুবনের নামাকরণ ও যৌক্তিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে আসে । বরাক উপত্যকার বাঙালি ও তার ভাষা, সংস্কৃতির অবস্থান ও সংকট সম্বন্ধে অত্যন্ত প্রাঞ্জল বক্তব্য পেশ করেন এই বিশিষ্ট কথাকার । সিলেট গণভোট থেকে শুরু করে বিখ্যাত (?) এন আর সি পর্যায় পর্যন্ত আসামবাসী বাঙালিদের রাজনৈতিক বঞ্চনা তথা নানাবিধ হেনস্থার বিষয়গুলির প্রতি আলোকপাত করেন তিনি । শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এসেছে মূল সংগঠনটি । এ বিষয়ে কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী ও বিজিৎ কুমার ভট্টাচার্যের অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন তিনি । উল্লেখ করেন এক শতাব্দীরও পূর্বে গঠিত সুরমা সাহিত্য সম্মিলনীর প্রসঙ্গ । সভাপতির বক্তব্যের সূত্র ধরে সম্পাদক শান্তনু গঙ্গারিডি সিলেট কাছাড় অঞ্চলে বাঙালি ও বাংলাভাষার এক আনূপূর্বিক আখ্যান তুলে ধরেন । উত্তর পূর্বাঞ্চলে বাঙালি এখন দ্বিতীয় শ্ৰেণীর নাগরিক, এ মত ছিল সহ সভাপতি অনুপ সেনের। বরাকবঙ্গের কলকাতা অধ্যায় এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা জারি রাখবে বলে আশ্বাস দেন তিনি ।
কবি মনতোষ চক্রবর্তী প্রয়াত কবি বিজিৎ কুমার ভট্টাচার্য ও তাঁর কবিতা সম্বন্ধে এক মূল্যবান বক্তব্য রাখেন । ‘সাহিত্য’ সম্পাদক বিজিৎ কুমারের আড়ালে থাকা কবি বিজিৎ কুমার ভট্টাচার্যের উপযুক্ত মূল্যায়ন তাঁর মৃত্যুর পরেই হওয়া সম্ভব, এ আশা ব্যক্ত করেন আলোচক । তিনি বিজিৎ কুমার ভট্টাচার্যের কয়েকটি কবিতাও পাঠ করে শোনান ।
অনুষ্ঠান শুধুমাত্র আলোচনার মধ্যেই সীমিত থাকেনি। গায়ক নীলিম গঙ্গোপাধ্যায় নিজের লেখা দু’টি গান করলেন , যার একটি শহিদ কমলা ভট্টাচার্যকে উৎসর্গিত । কবিতা পাঠ করলেন শ্রীময়ী চক্রবর্তী, দুর্গাদাস মিদ্দা, খগেশ্বর দাস, শক্তি শঙ্কর সামন্ত ও দিবাকর ভট্টাচার্য । বাড়তি পাওনা ছিল খগেশ্বর দাসের উদাত্ত কন্ঠের গান ।
আয়োজকদের অনুরোধে উদ্বোধনী সঙ্গীত আমাকেই গাইতে হয়। আমি গাই অনুষ্ঠানের শেষ গানটিও— ‘গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে’ । কীভাবে বিগত পাঁচ-ছ’টি দশকে বৃহত্তর ভারতে পূর্বাঞ্চলের বাঙালি সম্বন্ধে বিরূপ ন্যারেটিভগুলো পরিকল্পনা মাফিক তুলে ধরা হচ্ছে, গানের আগে সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
বরাক উপত্যকা সহ আসামের বাঙালির অবস্থা বিষয়ে আমরা কমবেশি অবহিত হলেও, ভারতবর্ষের লোক ততটা জানেন না । পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিও যে খুব জানেন, তা নয় । তবে, আগের তুলনায় অনেকটাই জানেন । প্রয়োজন, আরও বেশি করে সচেতনতা তৈরি করা । বরাকবঙ্গের কলকাতা অধ্যায় এক্ষেত্রে অনেকটাই অবদান রাখতে পারে । তাই, বরাকের কলকাতাবাসী লোকজনদের এই সংগঠনের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন । কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিন্দুতে আঘাত করতে পারলে সংগঠনের কথাগুলি আরও প্রচার পাবে । সঙ্গে অবাঙালি অঞ্চলে তাদের ভাষায়, নিদেনপক্ষে ইংরেজিতে আসামের বাংলা সাহিত্য ও বিভিন্ন ভাষ্য পৌঁছে দিতে পারলে সংগঠন তথা জাতির কথাগুলো আরও মান্যতা পাবে, এটা নিশ্চিত ।
তবে এ কথাও উল্লেখ করতে হয়, গত বছরের তুলনায় এ বছরের অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতার আগ্রহ কিছুটা কম পরিলক্ষিত হয়েছে।