Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story

শিশুর হৃদযন্ত্রে ফুঁটো ধরা পড়লে অস্ত্রোপচারে সেরে যায়, সব খরচ সরকারের

সরকারের জনহিতৈষী বহুবিধ এক স্বাস্থ্য প্রকল্প আরবিএসকে (এক)

//ইকবাল বাহার লস্কর//

এনএইচএম-র রাষ্ট্রীয় শিশু স্বাস্থ্য বা আরবিএসকে কার্যসুচিকে একবাক্যে স্কুল হেল্থ প্রোগ্রাম বলা হয়। এটা কার্যত সরকারের বহুবিধ এক জনহিতৈষী প্রকল্প। এর হিতাধিকারীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, দেশ গড়ার কারিগর। সরকারের এই মহৎ কার্যসুচির টার্গেট ৬ সপ্তাহ থেকে ১৮ বছর বয়সের শিশু/পড়ুয়া। কেন্দ্রীয় সরকারের এই কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর কয়েক হাজার শিশুর সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা মানেই এদের জীবন ফেরানো। যে কাজটা করে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু এর ফায়দা নিতে এখনও অনেক পিছিয়ে এর হিতাধিকারী ও অভিভাবকগণ। তাই জনগণের জ্ঞাতার্থে  এসব জনহিতৈষী কা্র্যসুচির বিবরণ প্রাসঙ্গিক বলেই আমার এই আলোচনার অবতারণা।

প্রথমতঃ মানুষের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের মধ্যে হৃদযন্ত্র হচ্ছে অন্যতম। এর অস্বাভাবিকতা মানেই জীবনের অস্বাভাবিক ছন্দপতন। আর হৃদযন্ত্র নিস্তেজ হওয়া মানেই জীবনদীপ নিভে যাওয়া। নিভে যাওয়ার বিষয়টি তো ইশ্বরপ্রদত্ত বলে আমরা বিশ্বাস করি, বাদবাকি অস্বাভাবিকতার ব্যাপারটি অনেকটা চিকিৎসায় সেরে ওঠে।

হৃদযন্ত্রে জন্মগত ক্রটি থাকাটা অস্বাভাবিক কোনও ব্যাপার নয়। জন্মগত ক্রটি নিয়ে অনেক শিশু জন্মায়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় কনজিনিটাল হার্ট ডিজিজ (সিএইচডি)। কিন্তু এই রোগকে জন্মের পর থেকে চিহ্নিত না করাটা একধরনের অস্বাভাবিক বিষয়। অনেক বাবা-মা শিশুর এত বড় রোগকে অনেক সময় পাত্তা দেন না। শিশুর শারীরিক সুবিধা-অসুবিধাকে অনেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। খেয়ালের এই অভাবেই একটি শিশু তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। পড়াশোনা, খেলাধূলা ও জীবন যাপনের উপযোগী হয়ে বেড়ে ওঠা ইত্যাদি থেকে দূরে চলে যায়। তখন আর কোনও প্রচেষ্টা কাজে আসে না এবং একসময়ে অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।

বরাক তথা কাছাড় জেলায় এই রোগ নিয়ে জন্মানো শিশুর সংখ্যা অসংখ্য। কথায় আছে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু জন্মগত এই রোগের চিকিৎসা সঠিক সময়ে এবং সঠিক স্থানে  করা না হলে এর ফলাফল হিসেবে একটি পরিবারের ছন্দপতন ঘটে। এই রোগ সঠিক সময়ে করা হলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয়। এই রোগের চিকিৎসা সাধারণতঃ অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে করতে হয়। অনেকটা ব্যয়বহুল এবং অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এই রোগের চিকিৎসার খরচ এখন সরকার বহন করে।  গত তিন বছরে কাছাড় জেলার প্রায় দুশো সিএইচডি শিশুর চিকিৎসা করা হয়েছে। হয়েছে দেশের প্রথম সারির তথা আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নারায়না হৃদয়ালয় ব্যাঙ্গালুরু, মুম্বই, কলকাতা কিংবা আমিনগাঁওয়ে। গত অর্থবছরে  (২০২২-২৩) কাছাড়ের ৩৩টি শিশুর সফল চিকিৎসা করা হয়েছে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে। দেশের এই নামকরা হাসপাতালে প্রথিতযশা চিকিৎসকদের হাতেই সে সব সম্পন্ন হয়েছে। নারায়না হৃদয়ালয়ের যে কোনও ইউনিটে অস্ত্রোপাচার হোক না কেন, অস্ত্রোপাচারের আগে সব মেডিক্যাল রেকর্ড নিজেই খুঁটিয়ে দেখেন আন্তর্জাতিক মানের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তথা চেয়ারম্যান ডাঃ দেবীপ্রসাদ শেট্টি। বিশেষ করে, সরকারি কর্মসূচির আওতায় রেফার করা রোগীর ক্ষেত্রে তিনি এই কাজটি করেই চলেছেন। বিষয়টি কেবল আমার ব্যক্তিগত অভিমত নয়। যারা এযাবৎ চিকিৎসা করিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের, সকলে জানিয়েছেন,  চিকিৎসার ফলাফল একশো’র মধ্যে একশো। দফায় দফায় চিকিৎসার নির্ণয় পুরো নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই রোগীকে অস্ত্রোপাচারের টেবিলে নেওয়া হয় না। এ জন্য নারায়না হৃদয়ালেয় আলাদা সুনাম রয়েছে। আমার এই কর্মকালে মাত্র এক কিশোর (দেরিতে শনাক্ত হওয়া মতিনগর এলাকার, ১৪ বছরের) মারা গিয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। পরে সেখান থেকে বিমানে তার মরদেহ গুয়াহাটি এবং পরে আ্যম্বুলেন্সে করে তার বাড়ি পাঠানো হয়। যার জন্য ওই পরিবারকে কানাকড়িও খরচ করতে হয়নি। এজন্য  আরবিএসকের রাজ্য পরামর্শক, এনএইচএমের তদানীন্তন উর্ধ্বতন কর্তা এবং গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের বর্তমান সুপার তথা অসম সরকারের সিএইচডি চিকিৎসা কর্মসুচির রাজ্য সংযোজক ডাঃ অভিজিৎ শর্মা  এ ব্যাপারে অভূতপূর্ব সহায়তা করেন।

লেখক: রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য অভিযানের কাছাড় জেলার বিভাগীয় (স্কুল হেল্থ) জেলা সংযোজক। ফোন ৯৪৩৫২৭৬২২৯।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker