AnalyticsBreaking News

নাগরিকত্ব/১১ঃ অনেকের দাবি ছিল, অসম চুক্তি যেন লঙ্ঘিত না হয়
Citizenship/11: Many demanded that the Assam Accord should not be violated

(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছেআজ এর একাদশ কিস্তি।)

২২ ফেব্রুয়ারিঃ ৮. যদি অসম চুক্তির সঙ্গে ১৯৭১ সালের পরে আসা বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব প্রদানে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তবে তাদের এই শর্তে নাগরিকত্ব দেওয়া হোক যে, অসমে তারা রাজ্যের অন্যান্য নাগরিকদের মতো সুযোগসুবিধে পাবেন না। কিন্তু অন্য রাজ্যে গিয়ে বসবাস করতে চাইলে সাধারণ নাগরিকের সমস্ত তারা সুবিধে পাবেন।

৯. অসমের স্বার্থের পরিপন্থী কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বাঙালিদের সঙ্গে আদি বাসিন্দাদের জাতিগত সংঘাত বাঁধবে।

১০. আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব প্রদানে অসমের মানুষের তীব্র আপত্তি রয়েছে। অনুরোধ করা হচ্ছে, বিলটি ফিরিয়ে নেওয়া হোক। নইলে অন্তত অসমকে এর বাইরে রাখা হোক। অসমে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে আসা কাউকেই নাগরিকত্ব প্রদান চলবে না।

১১. মহামান্য সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি পুনঃনবীকরণের কাজ যে ভাবে চলছে, একমাত্র ওই পথেই অসমের অনুপ্রবেশের সমস্যা মিটতে পারে। মাঝপথে এই প্রক্রিয়াকে কোনওভাবে বিঘ্নিত করা হলে অসমের অনুপ্রবেশ সমস্যা নতুন করে মাথাচাড়া দেবে। নাগরিকত্ব আইনে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন হলে তা হোক অসম চুক্তির ভিত্তিতে। নইলে সংশোধনী প্রস্তাব থেকে ব্যতিক্রম হিসেবে অসমকে বাদ দেওয়া হোক।

১২. এই বিল এনআরসি পুনঃনবীকরণের বৈধ প্রক্রিয়ার সামনে বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তাই এই বিল প্রত্যাহার করা হোক। নইলে তাতে অসমের জনসংখ্যাগত চিত্রে মারাত্মক পরিবর্তন আসবে। তা রাজ্যের আদি বাসিন্দাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করবে।

১৩. এনআরসি পুনঃনবীকরণে বাধাদানকারী কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে অসমে মারাত্মক অস্থিরতা দেখা দেবে। তিন দশক ধরে চলা সাম্প্রদায়িক অশান্তি এবং সংঘাত মাত্রাছাড়া হয়ে উঠবে। তাই এই আইনের পরিপ্রেক্ষিত এবং জটিলতাগুলি যেহেতু এখনও অসমের বাইরের মানুষের অজানা, তাই এই বিল যে সব রাজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যৌথ সংসদীয় কমিটিকে সেইসব রাজ্যে যেতে আর্জি জানাই। সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলুন, স্মারকপত্র নিন, পরিস্থিতি বুঝুন।

১৪. বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশের দরুন ত্রিপুরাতেও এনআরসি করা হোক।

১৫. বিল আসাম চুক্তিকে লঙ্ঘন করবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে আসা কোনও বাঙালি হিন্দুকে নাগরিকত্ব প্রদান চলবে না। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব সংবিধানবিরোধীও। তাতে অসমের আদি বাসিন্দারা স্বভূমে বঞ্চিত হবেন এবং ভাষার সুবিধেও হারাবেন।

১৬. ভারত সরকার কখনও কোনও শরণার্থী প্রণয়ন করেনি। কারা শরণার্থী, তা নিরূপণের জন্য সরকার কোনও পদ্ধতিও গ্রহণ করেনি। ফলে এই বিলে অসমের আদি বাসিন্দারা নিজ রাজ্যে বঞ্চিত হবেন। যেভাবে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন হয়েছে, এই সংশোধনী গৃহীত হলে তা বজায় থাকবে না। এ ছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের ভাবনা তো সংবিধান বিরোধী এবং রাষ্ট্রের ঘোষিত নীতির পরিপন্থীই। ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ভারত সরকার রাজ্যগুলিকে বৈদেশিক আক্রমণ এবং অভ্যন্তরিণ অশান্তি থেকে সুরক্ষা দেবে। এই সংশোধনী আইনে পরিণত হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে যে, সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দরুন এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিরতা বিঘ্নিত হবে।

১৭. শরণার্থীরা ভারতের কোথাও নাগাড়ে ছয়মাস থাকলে নাগরিকত্ব প্রদান করা হোক। কোনও ভিত্তিবর্ষ রাখা ঠিক নয়। এই প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক।

১৮. বাঙালি হিন্দুদের কথা স্বার্থের কথা ভেবে নাগরিকত্ব আইনের ৬(এ) ধারা সংশোধন করা হোক। অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে থাকা সমস্ত মামলা থেকে তাদের নিষ্কৃতি দেওয়া হোক এবং ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হোক।

English text here

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker