Barak UpdatesHappeningsBreaking News

বরাকে ভাষা আইন লঙ্ঘনের প্রতিবাদে নাগরিক সভায় বেশ সাড়া

সমিতি গঠিত, রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত

ওয়েটুবরাক, ১৩ ডিসেম্বর : ১৯৬১ সালের সংশোধিত ভাষা আইনের ৫ নং ধারা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে রবিবার শিলচরের নাগরিক সভায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ সরব হয়ে ওঠেন৷ তপোধীর ভট্টাচার্য, সুস্মিতা দেব, নিরঞ্জন দত্ত, আবিদ রাজা মজুমদারদের সমস্বরে সোচ্চার হন এম শান্তিকুমার সিংহ, সঞ্জীব রায়, দিলীপ সিংহ প্রমুখ৷

১৯৬১ সালের সংশোধিত ভাষা আইনের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলা৷ এখানকার সরকারি কাজে ইংরাজির সঙ্গে বাংলার ব্যবহার হবে৷ নাগরিক সভায় বক্তারা বলেন, কিন্তু কিছুদিন পরপর এখানে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়৷ সরকারি কর্তারা একদিকে (ভাষা) আইন লঙ্ঘন করছেন, অন্যদিকে উত্তেজনার সৃষ্টি করছেন৷ নিজেরা আইন ভেঙে প্রতিবাদী নাগরিকদের রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত করে জেলে পুরছে৷ এ সবের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ গঠিত হয় ভাষা আইন সুরক্ষা সমিতি৷ এর সভাপতি মনোনীত করা হয় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য৷ সহসভাপতিরা হলেন আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া, সাধন পুরকায়স্থ ও কিশোর ভট্টাচার্য৷ সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল ভট্টাচার্য৷ ঋষিকেশ দে, রাহুল চক্রবর্তী, জয়দীপ ভট্টাচার্য, সঞ্জীব রায় ও রিপন দাস সহসম্পাদক৷ উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন সাংসদ সুস্মিতা দেব, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, মৌলানা সারিমুল হক, মৌলানা ফরিদউদ্দিন চৌধুরী৷ রবিবারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভাষা আইন লঙ্ঘনের নানা ঘটনা জানিয়ে এবং প্রতিকার চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হবে৷
আবিদ রাজা মজুমদারের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত নাগরিক সভায় প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া বলেন, ১৯ মে শহিদদের উদ্দেশে ফুল দিলেই উত্তরাধিকারীর দায়িত্ব শেষ হয় না৷ তিনি ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে আহ্বান জানান৷ সেইসঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টির উদাহরণ টেনে বলেন, একটি জাতিকে নিষ্পেষিত করার চেষ্টা হলে ধর্মের বাঁধনেও বেঁধে রাখা যায় না৷ মণিপুরি সংগঠক এম শান্তিকুমার সিংহের আক্ষেপ, সরকার ভাষা আইন লঙ্ঘন করলে কে আইন রক্ষা করবেন!
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বলেন, সরকার পরিবর্তন হয়, সরকারে কিছু মুখ বদল হয়৷ কিন্তু বরাকের প্রতি, বাঙালির প্রতি মানসিকতার পরিবর্তন হয় না৷ বিধানসভার অধ্যক্ষ এসে বেছে বেছে কিছু জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা করলেন বলে অভিযোগ জানান তিনি৷ তাঁর কথায়, “পরে বিধান পরিষদীয় প্রতিনিধি দল এসে তাদেরই নিজেদের অধিকারের জন্য সরব হতে বললেন৷ এ ভাবে লাগিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া যায় না৷” তিনি উল্লেখ করেন, “৬১ থেকে ৮৬ সালে ভাষা আন্দোলন দমানোর জন্য সরকারি তরফে ষড়যন্ত্র হয়েছে৷ এখন সঙ্গে যোগ হয়েছে, কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহী৷ মূল লক্ষ্য জনশুমারি৷ ভয় দেখিয়ে সবাইকে এক জনগোষ্ঠীভুক্ত করতে চাইছে৷” তাই তাঁর আহ্বান, মতাদর্শগত, দর্শনগত বিভেদ ভুলে ভাষার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷ মৌলানা সারিমুল হক স্পষ্ট করেই বলেন, বরাক উপত্যকার বাঙালিরা হিন্দু-মুসলমানে ভাগ হয়ে যান৷ ভাষার অধিকারের দাবি তখনই দুর্বল হয়ে পড়ে৷
নাগরিক সভার আহ্বায়ক সাধন পুরকায়স্থ দেশদ্রোহী অভিযোগে বিডিএফ নেতা প্রদীপ দত্তরায়কে গ্রেফতার ও সাংবাদিক অনির্বাণ রায়চৌধুরীকে মামলায় অভিযুক্ত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান৷
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংসদ সুস্মিতা দেব, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, রাজীব কর, সঞ্জীব রায়, অরিন্দম দেব, ঋষিকেশ দে প্রমুখ৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker