Barak UpdatesHappeningsAnalyticsBreaking NewsFeature Story

উনিশে মে : আমার কিছু কথা, লিখেছেন শতদল আচার্য

শতদল আচার্য

১৯ মে :  আমার উনিশ মে বলতে মার মুখ থেকে কিছু টুকরো গল্প আর বাড়ির সামনে শহিদ বেদী তৈরী করে সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানোর কথাই মনে পড়ে। মা বলতেন, শহিদ কমলা ভট্টাচার্যের বাড়ির গল্প। দুঃখ জড়ানো তাদের ছোটবেলার কথা ছোট থেকে শুনে আসছি। বর্তমান আলিয়া মাদ্রাসার জায়গায় আমার মায়েদের বাড়ি ছিল৷ তখন আলিয়া মাদ্রাসা হয়নি । সে এক অন্য কাহিনি । তার ঠিক পিছনে ছিল পেদাপট্টি৷ সেখানেই শহিদ কমলা ভট্টাচার্যের বাড়ি । পরবর্তী সময়ে এই পাড়ার নাম বদলে কমলা রোড হয়েছে ।

আলো পালচৌধুরীর নেতৃত্বে ছোটবেলায় মা কয়েকবার উনিশের আন্দোলনে ছিলেন। উনিশে মে র পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন কমলা ভট্টাচার্যের কথায় মা অঝোরে কাঁদতেন, প্রতিবেশী কমলা ভট্টাচার্যকে নিয়ে টুকরো টুকরো গল্প বলতেন ।এভাবে মায়ের মুখ থেকেই আমার প্রথম উনিশ মে জানা।

File Pic

অনেক ছোটবেলা থেকেই উনিশ মের দিনে গান্ধীবাগে দুইটার আগে চলে যেতাম। ২টা ৩৫ মিনিটে শহিদ স্মৃতি সৌধের গেট খুলতেই সাংবাদিক সনৎ কৈরীর উদাত্ত কন্ঠে শ্লোগান আমাকে অন্য এক চেতনায় নিয়ে যেত। গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য উনিশের স্মৃতিসৌধে শ্লোগান হয় না।

এভাবে ধীরে ধীরে উনিশের সাথে পরিচয় । পরিতোষ পালচৌধুরীর কাছ থেকে উনিশের রক্ত জড়ানো কত গল্প শুনেছি। সময়ের সাথে উনিশকে ভালবাসতে শিখলাম । বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হয়ে প্রথম আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদ বেদী তৈরি করে উনিশে মে উদযাপন করলাম। এ নিয়ে অনেক কথা আছে । তবে বলতেই হচ্ছে প্রাক্তন অধ্যাপক তন্ময় ভট্টাচার্য, সুবীর কর, দীপঙ্কর পুরকায়স্থ, রমা ভট্টাচার্য, মৃণাল ঘোষদের মত মানুষের অনেক সুপরামর্শ পেয়েছিলাম৷ আর তাঁরা সব ধরনের সাহায্যও করেছেন । উনিশকে জানতে অধ্যাপক সুবীর করের বই পড়া সহ বিভিন্ন ভাবে উনিশ মে র চেতনার আলোকে আলোকিত হয়েছি, জেনেছি অনেক কিছু ।

উনিশে মে চেতনার গভীরের এক প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে । উনিশ মে আমাদের কাছে সঞ্জীবনী সুধা। উনিশ মে বছরে বছরে ক্ষয়ে যাওয়া সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো শক্তি দেয়। ষাট বছর পরেও বরাক উপত্যকার উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষা উনিশ মে র দিনে রাখা হয়।তার জন্য চলে দীর্ঘ প্রতিবাদ। এরকম খবর নিয়েই সারা বছর চলে আমাদের, উনিশ মে বছরে একবার এসে প্রাণ সঞ্চার করে দিয়ে যায়।

আমরা আনন্দিত হই বরাকের বিধায়করা যখন বাংলায় শপথবাক্য পাঠ করেন । আসলে এই উপত্যকার ভৌগলিক কারণে স্বাধীনতার সময়েই এক রাজনীতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তারপর একে একে প্রকাশ পায় । ১৯৬১ সালে ১৯ মে বিষজাল পাতা হয়েছিল এই কারণে সেই সময়ে বিমলা প্রসাদ চাহিলা বদরপুর নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন।

কিন্তু আগ্রাসন শেষ হয়নি । বরং বিভিন্ন সূত্র ধরে ধাপে ধাপে রাজনৈতিক রঙের ভিন্ন আলোকে ভাষার উপর নেমে আসছিল আক্রমণ । ৭২, ৮৬ সাল দুইটি নয়, ধারাবাহিক আক্রমণ আগের মত সজোরে আসে না ,কখনো কখনো নীরবে নীরবে ভাষা আগ্রাসন চলে ।

Pic Credit: Taan Gupta

সময়ে সময়ে রাজনৈতিক রঙের সঙ্গে কিছুটা দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়েছে। ভাষার উপর আগ্রাসন থেকে মুক্তি রাজনীতিক চেতনা এনে দিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক কৌশলগত পরিবর্তনে প্রতিরোধের জায়গাটা ক্রমে রুদ্ধ হয়ে আসছে । উনিশের চেতনা নতুন প্রজন্মকে না ছড়িয়ে দিলে সামনে আরও বড় বিপদের সামনে দাঁড়াতে হবে । রাজ্য বাংলাভাষা পড়ুয়াদের চাকরি সংকুচিত হয়ে আসছে । অন্যদিকে ভাল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় প্রত্যকে যখন ইংরাজি মাধ্যমে পড়তে ব্যস্ত । এটাও সুকৌশলে প্রতিটি আন্চলিক ভাষাকে সংকট মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ।

উনিশ বরাকের জীবনদীপ । উনিশ মের চেতনাই ধীরে ধীরে সমস্ত বরাক বিরোধী কৌশল রুখে দিতে পারবে । শুধু ডিটেনশন ক্যাম্প নয়, আরো কঠিন সময়ে কৃত্রিম জটিলতার আবর্তে আমরা নিমজ্জিত। এখন ও উনিশ লাখ বাঙালির জীবনে নাগরিক হওয়ার প্রশ্নের সম্মুখীন । এসব খন্ড খন্ড চিত্র দিয়ে আমাদের ঘিরে ধরার লক্ষণ যখন স্পষ্ট হচ্ছে তখন এ অন্চলে এক ধরনের নীরবতা কাজ করছে ।

উনিশের চেতনা মরে যাওয়া ইচ্ছাটাকে আবার সঞ্জিবনী সুধার মত জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই উনিশে মে এলে সকল আশার শক্তি সঞ্চার হয় । আর সাথে আসে এক আশা , এক আনন্দ ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker