Barak UpdatesHappeningsBreaking News

সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ফর্ম জমা দেননি বিজেপির নেতা-কর্মীরাও !

ওয়েটুবরাক, ৯ সেপ্টেম্বর : শিলচরে সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ফর্ম সংগ্রহ ও জমার কাজ আগামীকাল ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। মাসের দ্বিতীয় শনিবার হিসেবে কাল ছুটির কথা থাকলেও ফর্ম জমার কাজ যথারীতি চলবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। এই শহরের পুর এলাকায় এই সময়ে ২৬৮৪২টি হোল্ডিং রয়েছে। আজ পর্যন্ত এর মধ্যে মাত্র আটশো ফর্ম জমা পড়েছে। শেষদিনে যদি আরও দুইশো ফর্মও জমা পড়ে, তাহলেও চার সংখ্যায় পৌছানো মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই ফর্ম জমা নিয়ে শিলচর শহর দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে প্রশাসন এবং অন্যদিকে জনতা বা করদাতা। বিজেপি বাদে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি জনতাকে নিয়ে সংগঠিত হয়েছে। শাসকদল বিজেপি শাসনমোহে প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছে। জনতার তৈরি নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ফর্ম না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে৷ ওদিকে জেলাশাসক রোহনকুমার ঝা সতর্ক করে দিয়েছেন, যারা সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী আরও একধাপ এগিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, যারা নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ফর্ম জমা করবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷

তাঁর এই হুমকিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নিয়েছেন তাঁর নিজের শহরের মানুষ৷ এ পর্যন্ত ২-৩ শতাংশ মানুষ ওই ফর্ম জমা করেছেন৷ শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশে পৌঁছালে ৯৫ শতাংশ মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন, বিপুল ভোটে নির্বাচিত করলেও হুমকি-ধমকির অধিকার দেওয়া হয়নি দীপায়নকে৷ এমনকী তাঁর হুমকিমাখা বক্তব্য এবং অযৌক্তিক সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ফর্মকে মেনে নিতে পারেননি বিজেপির নেতা-কর্মীরাও৷ কারণ শহরের ৯৫ শতাংশ পুরকর দাতা বিজেপিবিরোধী, কোনও ভোট পরিসংখ্যানেই একথা মেনে নেওয়া যায় না৷ এর মানেই হলো, সরকারের বিজ্ঞপ্তি জারি এবং বিধায়ক সহ বিজেপি পদাধিকারীদের ফর্ম পূরণের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁদেরই মতাদর্শে বিশ্বাসী অসংখ্য জনতা৷

এর কারণ অবশ্য নবগঠিত নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের কর্মকর্তাদের বক্তব্যে ধরা পড়া পড়ে৷ প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি তমালকান্তি বণিক বলেন, রাজ্য সরকার অন্যান্য কর-রাজস্ব চূড়ান্ত করার অধিকারী হলেও পুরকর চাপাতে পারেন না৷ হরিদাস দত্ত দীপায়ন চক্রবর্তীর নামোল্লেখ না করেও তাঁকে এই গণআন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান জানান৷  স্মরণ করিয়ে দেন, জনপ্রতিনিধি প্রশাসনিক আধিকারিকের দায়িত্ব নিলে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন৷

দুলাল মিত্র বলেন, ভাষা আন্দোলনের পর কোনও এক ইস্যুতে এইভাবে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ জনতা জোটবদ্ধ হলেন৷ এই জনতাকে জনপ্রতিনিধি দেখবেন, এমনটাই আশা ছিল৷ তিনি কোন দলের বড় কথা নয়৷ কিন্তু এখানে হুমকিই মিলল৷ বিজেপি সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, অন্তত নিজেদেরকে এই কর-কোপ থেকে বাঁচান৷

বনানী রায়চৌধুরীর পাল্টা হুমকি, বন্যায় জনতার পাশে না দাঁড়ানোর পর এ বার পুরকর নিয়েও একই অবস্থান৷ পরিণামটা কিন্তু খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ তাঁর ওপর কর চাপিয়ে দেওয়া হলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আমরণ অনশনে বসবেন বলে আগাম জানিয়ে রাখেন৷ প্রবীর রায়চৌধুরী বলেন, প্রয়োজনে শিলচর বনধ ডাকা হতে পারে৷ সাধন পুরকায়স্থের বক্তব্য, পুরবোর্ড গঠিত হোক৷ জনগণের ভোটে নির্বাচিত বোর্ড এই সব ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেবে৷ পুর এলাকা সম্প্রসারিত হলে বর্তমানে গ্রামে বসবাসকারী বহু বাড়িকে এই করজালে জড়াতে হবে, সতর্ক করে দেন সাধন৷  সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের আক্ষেপ, জেলাশাসক-বিধায়ক নিজেরা আইন ভাঙছেন, আর হুমকি দিচ্ছেন, আইন না মেনে চললে ব্যবস্থা নেবেন৷ তাঁর কথায়, এর পর আন্দোলনকে ওয়ার্ড ভিত্তিক করে সব জায়গায় কমিটি করা হবে, সভা হবে৷ প্রথম পর্যায়ে আগামী মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হবে৷

শুক্রবার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মঞ্চের সম্পাদক অতনু ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ দাস, সঞ্জিৎ দেবনাথ, অজয় রায়, সৌমেন চৌধুরী, কিশোর ভট্টাচার্য, দীপঙ্কর চন্দ প্রমুখ৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker