Barak UpdatesHappeningsBreaking News
সংস্কৃত ভুলে যাওয়ার জন্যই মণিপুরে এত বিভাজন, অভিমত সংস্কৃত ভারতীর শিলচর সম্মেলনে
ওয়েটুবরাক, ৯ জানুয়ারি : গত রবিবার সংস্কৃত-ভারতীর দক্ষিণ কাছাড় শাখা সংস্কৃত জনপদ সম্মেলনের আয়োজন করে৷ শিলচরের মহিলা কলেজে আয়োজিত ওই সম্মেলনের মুখ্য আকর্ষণ ছিল সংস্কৃত বিজ্ঞান প্রদর্শনী, সংস্কৃত পণ্য প্রদর্শনী ইত্যাদি। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ উন্নয়ন পরিষদের প্রাক্তন পরিচালক ড. বিভাস দেব।
উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন কুমার ভাস্কর বর্মা সংস্কৃত ও প্রাচীন অধ্যয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রহ্লাদ আর জোশি। তিনি তার বক্তব্যে সংস্কৃত অধ্যয়ন, ব্যবসা, ‘পণ্ডিত ঐতিহ্য’ এবং ‘সুভাষিত’ ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাজীব মোহন পন্থ তাঁর বক্তব্যে সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ভাণ্ডার এবং সৃষ্ট বিভিন্ন শাস্ত্রের কথা উল্লেখ করে সংস্কৃত ভারতীর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ এখানে নির্মিত দুটি সংস্কৃত গ্রামের কথাও উল্লেখ করেন৷ তিনি জানান, একে কেন্দ্র করে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘ধরোহর’ নামে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছে।
সারস্বত অতিথি স্বামী গুণসিন্ধু মহারাজ এই সম্মেলনের সুষ্ঠু আয়োজনের জন্য সংস্কৃত ভারতীকে ধন্যবাদ জানান। শুরুতে সম্মেলনের পরিচয় দিতে গিয়ে প্রান্ত প্রচার প্রমুখ ড. গোবিন্দ শর্মা সংস্কৃত ভারতী এবং তার কার্যসূচি সম্পর্কে অবগত করান এবং এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ব্যাখ্যা করেন।
দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা একটি নাটকও মঞ্চস্থ করে।
তৃতীয় পর্বের প্রধান বক্তা, সংস্কৃত ভারতী নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া ট্রাস্টের সভাপতি ড. শঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁর বক্তৃতায় সংস্কৃতকে জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথি নলবাড়ি থেকে আগত ঈশান অঞ্চলের সাংগঠনিক সচিব ড. রঞ্জিত কুমার তিওয়ারি সংস্কৃত ভাষার অন্তর্নিহিত বিজ্ঞানের কথা উল্লেখ করে বলেন, সংস্কৃত যেখানেই বিলুপ্ত হয়েছে, সেই অঞ্চলই জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এক সময় মণিপুর ছিল ভারতের মধ্যপ্রদেশ। আর সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়নের অভাবে অনেক বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। সারস্বত অতিথি ড. বিভাস দেব সম্মেলনের সফল আয়োজনের জন্য শুভেচ্ছা জানান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন দক্ষিণ কাছাড় জেলার সভাপতি ড. সন্ধানী নাথ। সর্বশেষে, প্রান্ত বিদ্বৎ পরিষদ এর সমন্বয়ক অধ্যাপক শান্তি পোখারেলের নেতৃত্বে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যারা সংস্কৃত পাশ করেছেন, তাঁদের সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। সেবাব্রতা ভট্টাচার্য, দীপাঞ্জনা পুরকায়স্থ, নয়না গোস্বামী, অরিজিৎ সিনহা, নিরূপা ধর, মানসী নাথ প্রমুখ বিভিন্ন পর্ব পরিচালনা করেন। সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক সত্যব্রত চৌধুরী এবং সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণ জ্যোতি দেব। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বরিষ্ঠ প্রচারক মাননীয় শশীকান্ত চৌথায়ওয়ালে, প্রান্ত যোগাযোগ প্রধান ড. কেশব লুইটেল, প্রান্ত সচিব গৌতম চক্রবর্তী, সুভাষ শাহ প্রমুখ।
সংস্কৃত ভারতী প্রতি তিন বছর অন্তর জেলা সম্মেলন আয়োজন করে৷ প্রধানত: জেলায় সংস্কৃত ভাষাকে আরও প্রচার করতে এবং সমাজের মানুষের মধ্যে সংস্কৃত অধ্যয়নের প্রতি আগ্রহ জাগাতে এই জনপদ সম্মেলন আয়োজিত হয় বলে সংগঠনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।