Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News
সংসদে আলোচনা না করেই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার, ক্ষুব্ধ তমাল বণিক
ওয়েটুবরাক, ৯ জানুয়ারি : সংসদে কোনওরকম আলোচনা না করে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকরী করার ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শিলচরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিক। তিনি বলেন, শিক্ষানীতি নিয়ে অতীতে বহুবার সংসদে বিতর্ক হয়েছে এবং সবসময়ই পক্ষ-বিপক্ষের মতামত গ্রহণ করেই শিক্ষানীতির কাঠামো রচনা করা হয়েছে৷
কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের স্বার্থ৷ তাই দলীয় ক্ষুদ্র স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে সব জনপ্রতিনিধিদের সুচিন্তিত ভাবনার প্রতিফলনেই জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি ও প্রয়োজনে সংশোধন করার রীতি বহমান ছিল। বর্তমান নরেন্দ্র মোদির সরকারকে একনায়কতন্ত্রী বলে অভিযুক্ত করে তমালবাবু মন্তব্য করেন, এই বিষয়গুলি বোঝার মত বোধ বর্তমান সরকারের নেই।
তাঁর কথায়, ভারতবর্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর বহু ভাষিক, বহু ধর্মীয় মানুষের সমন্বয়ে গঠিত। এখানে কোনও রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে ‘ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সংগঠন তৈরী করে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া ন্যাক্কার জনক৷ তা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ক্ষতিকারক পদক্ষেপ।
নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে ৫+৩+৩+৪ আকারের কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ প্রথম পাঁচ বছর প্রি-প্রাইমারি ও প্রাইমারি শিক্ষাক্রম, তার পরের তিন বৎসর মধ্য শিক্ষাক্রম, তারপরের তিন বৎসর উচ্চ শিক্ষা ও তার পরের চার বছর উচ্চতর শিক্ষা মিলিয়ে মোঠ ১৫ বৎসরের শিক্ষাক্রমের উল্লেখ রয়েছে৷ কিন্তু প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষার অধিকারের কথার কোনও উল্লেখ নেই। এর দরুন পিছিয়ে থাকা রাজ্য এবং পিছিয়ে থাকা জাতি ও জনগোষ্ঠীর মানুষ শিক্ষা লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন৷ তমালবাবু বলেন, এইভাবেই মোদি সরকার কর্পোরেট বন্ধুদের স্বার্থে তৈরি করতে চায় অশিক্ষিত সস্তা শ্রমিক। কারণ এই সরকার চায় না, দেশের গরিব, পিছিয়ে পড়া মানুষেরা শিক্ষায় অন্যের সমপর্যায়ে উঠে আসুক। এর জন্যই প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়ে আসছে পাস -ফেল প্রথা৷ তাতে অনুন্নত শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলছুট হতে বাধ্য করা হবে।
কেন্দ্র সরকারের পুরনো সার্ভে রিপোর্টের উল্লেখ করে কংগ্রেস নেতা বণিক বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী ৭০ শতাংশ ছাত্র স্কুলছুট হয় নীচু ক্লাসের পাস-ফেল সিস্টেমের জন্য। অনুন্নত শ্রেণীর জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের যে নিয়ম ছিলো নতুন শিক্ষানীতিতে সেটাও উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরাপুরি ব্যক্তি মালিকানাধীন করে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেবার ষড়যন্ত্র করছে। ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙেদিয়ে বিজেপি দলের হিন্দি-হিন্দু- হিন্দুস্তান নীতিকে প্রতিষ্ঠার জন্য মাতৃভাষার পাঠদান কেবল মাত্র প্রাথমিক স্তরে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ।
এই নতুন নীতিতে উচ্চ শিখায় কলা, বাণিজ্য বা বিজ্ঞান বলে কোনও আলাদা বিভাগ থাকবে না। যে কোনও কম্বিনেশনে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করবে৷ তাতে একজন ছাত্র কলা ও বাণিজ্য বা বিজ্ঞানের যে কোনও দুই-তিনটি বিষয় নিয়ে পড়াশশোনা করে সবগুলি বিষয়েই অল্প অল্প জানবে৷ কিন্তু বিভাগগত শিক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ তৈরির প্রক্রিয়াকে বিনাশ করা হলো। তমালবাবুর মন্তব্য, বর্তমান সরকার বিশেষজ্ঞদের ভয় পায়৷ নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা শিক্ষা প্রদান করবেন, তাঁদের পার্ট টাইম, অ্যাডহক, কন্ট্রাকচুয়াল, গেস্ট লেকচারার হিসাবে নিযুক্ত করা হবে৷ তাঁদের চাকরি নিয়মিত হবে একমাত্র ম্যানেজমেন্টের সুপারিশ ক্রমে৷ সেখানে মেধার থেকে দলীয় আনুগত্যই প্রাধান্য পাবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন৷
বর্তমান সরকার এই শিক্ষা প্রকল্পের বাস্তবানের জন্য ৬ হাজার ৭শ কোটি টাকা ঋণ নেবে। বর্তমানে দেশে জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, ব্যবসাপত্র লাটে ওঠার জোগাড়। আর সরকার ঋণ নিচ্ছে এবং জনগণের উপর করের বোঝা বাড়িয়ে দিয়ে তা উশুলের পথ করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, কোভিড কালে যখন সংসদের সব কাজ বন্ধ ছিল তখন পেছনের দরজা দিয়ে এই জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়নের ঘোষণা জাতি তথা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। কৃষক ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিরোধী কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার৷ সংসদে আলোচনা করলে নতুন শিক্ষানীতিও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হতো সরকার৷ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বিজেপির দলীয় স্বার্থ৷ তাই ভয় পেয়ে শিক্ষাবিল নিয়ে সংসদে আলোচনা করেনি সরকার, বলেন তমালকান্তি বণিক৷