NE UpdatesBarak UpdatesHappenings
শিলাদিত্যর সুর উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির সুরের সঙ্গে মিলে যায়, অভিযোগ ভাষা আইন সুরক্ষা সমিতির
ওয়েটুবরাক, ১৯ ডিসেম্বর : হোজাইর প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক শিলচরে সংবাদ মাধ্যমে যে বক্তব্য রেখেছেন তা একদিকে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের অপমানিত করেছে অন্যদিকে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠীর আবেগকে আহত করেছে বলে মনে করে নবগঠিত ভাষা আইন সুরক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি। সমিতির অভিযোগ, তাঁর বক্তব্যের সুর রাজ্যের উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির সুরের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি একদিকে বলেছেন, ভাষাশহিদদের তিনি সম্মান করেন আবার অন্যদিকে তিনি ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্বীকৃতি প্রদানের আন্দোলনকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে বলে মনে করেন। সমিতির বক্তব্য, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত অধিকার রক্ষার আন্দোলন ও ভাষাশহিদদের স্বীকৃতির দাবি কোনো ভাবেই ভাষিক সম্প্রীতি নষ্ট করে না৷ কারণ সমস্ত ভাষিকগোষ্ঠীর বিবেকবান মানুষ জানেন, মাতৃভাষা আন্দোলনে শহিদত্ব বরণ করা ব্যক্তিরা শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের স্বীকৃতির দাবি মানুষের আবেগের সাথে সম্পৃক্ত।
নবগঠিত ভাষা আইন সুরক্ষা সমিতির কর্মকর্তারা এদিন আরও বলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা এই বিধায়ক তাঁর কার্যকালে ভাষিক সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার দাবিতে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। সম্প্রতি বরাক উপত্যকার জনগণের ১৯৬১ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ও ভাষা আইন লঙ্ঘনের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী প্রদীপ দত্ত রায়কে মিথ্যা মামলায় আটক করা ও সাংবাদিক অনির্বাণ রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা নিয়ে তাঁর নীরব ভূমিকা সম্পর্কে সবাই অবহিত।
ভাষা আইন সুরক্ষা সমিতির সদস্যরা জানান, সাম্প্রদায়িক মন্তব্য নিয়ে এই বিধায়কের বিরুদ্ধে বহু মামলা আদালতে বিচারাধীন। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে বিকৃত করে তিনি ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছেন, যা দেশের আইন ও সংবিধানের মূল ভাবনার পরিপন্থী।
তাঁরা বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বেশেষে সবার মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন। তাই ভাষাশহিদদের প্রতি সম্মান জানানোর অর্থই হচ্ছে প্রতিটি ভাষিকগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে সম্মানিত করা। এখানে তিনি নিজেই ভাষিক গোষ্ঠীর জনগণের মধ্যে বিতর্ক টেনে ব্যাপারটির রাজনীতিকরণ করছেন।
সমিতির তরফে এও বলা হয়, ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে বরাকের জনগন ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন, অথচ তিনি বারবার একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বিভাজনের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্যের দাবি, তাঁরা কোনও ভাষিক গোষ্ঠীর বিপক্ষে নন, বা বাঙালি আধিপত্যবাদ বিস্তারের লক্ষ্যে এই সমিতি তৈরি করেননি। তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য, ভাষা আইন দ্বারা প্রদত্ত সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করা এবং একই সঙ্গে বহুভাষিক সম্প্রীতির লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া।