Barak UpdatesHappeningsAnalyticsBreaking NewsFeature Story

শিলচর শ্মশানেও মৃতদের অন্ত্যেষ্টিতে এত লাইন! লিখেছেন রাজা পালচৌধুরী

রাজা পালচৌধুরী

বড় কঠিন সময় এখন। কাউকে ভয় দেখানো মোটেও আমার উদ্দেশ্য নয়। তবু বলি, কাল বৃহস্পতিবার শিলচর শ্মশানঘাটে গিয়ে ভয় নিয়েই বাড়ি ফিরলাম। মানুষের যে অসহায় অবস্থা দেখলাম মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।

Rananuj

গত কয়েকদিন থেকে শ্মশানের চুল্লি বন্ধ হচ্ছে না। একটার পর একটা মৃতদেহ সৎকার হচ্ছে। কোভিড ও নন-কোভিড মৃতদেহ সৎকারের আলাদা সিরিয়াল। বিশেষ সমস্যা কোভিড চুল্লিতে। দুপুর ১২টায় মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গেলে বিকাল ৫টার আগে সিরিয়াল আসে না। ইলেকট্রিসিটির বিল, শপিং মলের বিল কিংবা ভেকসিন নিতে যেমন লাইন ধরতে হয় শ্মশানও এর ব্যতিক্রম নয়।

শিলচর শ্মশানঘাটে ৪টা চুল্লি রয়েছে। এর মধ্যে একটাই কোভিডের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৩টা নন-কোভিডে মৃতদের। গত কয়েকদিন থেকে এত মানুষ মারা যাচ্ছেন যে, শিলচর শ্মশান সে ভার নিতে পারছে না। তাই মানুষকে শহরের বাইরের শ্মশানে নিয়ে সৎকার করার কথাও ভাবতে হচ্ছে। কালই একজন লাইন ধরে বিরক্ত হয়ে খবরাখবর নিয়ে বলছিলেন, শিলকুড়িতে খালি আছে। আমরা আর একটু অপেক্ষা করে মৃতদেহ শিলকুড়ি নিয়ে চলে যাব।

ভাবছিলাম, এখনই এই অবস্থা! আগামী দিনগুলোতে কী যে হবে!

Silchar crematorium

আর একটা অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেই আমার এই লেখা শেষ করব। বিকেল ৪ টার সময় লিংক রোড থেকে একজনের মৃতদেহ যায়। বেশ কয়েকজন সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের সিরিয়াল আসে রাত দশটায়। ওই সময় আমাদের অম্বিকাপুর পূর্ব পাড়া পুজা কমিটির এক সদস্যের বাবার অন্ত্যেষ্টি শেষের দিকে। আমরা সবাই চুল্লির সামনে দাঁড়িয়ে। তখন দেখতে পাই, আমাদের পাশের চুল্লি ফাঁকা। লিংক রোডের মৃতার ছেলেকে বলি, এখন আপনাদের সিরিয়াল। তাড়াতাড়ি মৃতদেহ চিতায় তোলার ব্যবস্থা করুন। নইলে অন্য কেউ এসে পড়বে।

তিনি বললেন, আমাদের সিরিয়ালই কি এখন? তিনি নিশ্চিত হতে চাইছিলেন দেখে আমরাই শ্মশানের অফিসে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি। জানতে পারি, ওই চুল্লিতে লিংক রোডের মৃতারই সিরিয়াল এখন। মৃতার ছেলেকে বড় অসহায় লাগছিল। আমরা একটু তাড়ার সুরেই বলি, কোথায়, আপনার সাথের লোকজনকে ডাকুন। তিনি তখন বললেন, যারা এসেছিলেন, সবাই চলে গেছেন।তাঁর বিশ্বাস ছিল, সবাই অন্তত মুখাগ্নি পর্যন্ত থাকবেন। কিন্তু সিরিয়াল আসতেই তাকিয়ে দেখেন, কেউ নেই। শুধু তাঁর দুই ভগ্নীপতি আছেন।কিন্ত তাঁরা বয়সের দরুন বা সতর্কতা হিসেবে দূরত্ব মেনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমরাই পড়লাম নিজেদের প্রশ্নের মুখে। মৃতদেহ তিনি একা কী করে চুলোয় তুলবেন? আমরাই তখন বিবেকের তাড়নায় এগিয়ে যাই। ডরভয় দূরে সরিয়ে সবাই মিলে ধরে তাঁকে চুল্লিতে তুলি। আমরাই জ্বালানি কাঠ হাতে হাতে নিয়ে গিয়ে চিতা সাজাই। শ্মশানে সৎকারের কাজে যুক্ত চণ্ডালরাও সারাদিন বিরামহীন কাজ করে চলেছেন। তাঁরা ক্লান্ত হয়ে এদিকে ওদিকে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাই আমরাই যা যা দরকার, ঠিকঠাক করি।

একদিকে যেমন এক ভয়ের চিত্র দেখে এলাম, তেমনি একটা ভাল লাগার জায়গাও দেখলাম। আমাদের অম্বিকাপুর পূর্ব পাড়া পুজো কমিটির সদস্যরা কেমন এক অচেনা অজানা অসহায় সদ্য-মাতৃহারার পাশে দাঁড়াল! আমি তাঁদের সঙ্গে যুক্ত বটে, তবু বলি, পূজা কমিটির সদস্যদের জন্য সত্যি আমি গর্ববোধ করছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker