Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শিক্ষা সেতু : শিক্ষাব্যবস্থাকে লাটে তোলা হচ্ছে, অভিযোগ বিডিএফের
ওয়েটুবরাক, ১২ অক্টোবর : সরকার থেকে দেওয়া নিম্নমানের ট্যাবের মাধ্যমে সরকারি স্কুলে ছাত্র, শিক্ষকদের উপস্থিতির প্রমাণ পাঠাতে গিয়ে একদিকে যেমন কালঘাম ছুটছে শিক্ষকদের, তেমনি অন্যদিকে এতে প্রচুর সময় নষ্ট হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ছাত্রদের পঠনপাঠন। এরসাথে ইদানীং যোগ হয়েছে অত্যধিক বিভিন্ন দিবস পালনের সরকারি নির্দেশ। এসব করে সরকারি শিক্ষা ব্যাবস্থাকে সম্পুর্ণ ধ্বংস করে সেই ছুতোয় এটিকে বেসরকারি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত করছে সরকার। বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নেতারা এভাবেই নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন।
এদিন এই ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে, আসামের মতো অনগ্রসর একটি রাজ্যে এই ধরনের প্রযুক্তি চাপিয়ে দেবার আগে প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দরকার ছিল। সেসব না করে এই ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রক সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে যেভাবে অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে তাতে বিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য যে শিক্ষাদান তাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেসব ট্যাব পাঠানো হয়েছে তা অতি নিম্নমানের, অধিকাংশ ইতিমধ্যে অকেজো হয়ে গেছে, বাকিগুলোও সঠিক কাজ করছে না। তিনি বলেন শিক্ষকরা উপস্থিতির প্রমাণ দিতে কখনোই আপত্তি করেননি, কিন্তু এইসব ঝামেলায় একদিকে তাঁরা জেরবার হচ্ছেন অন্যদিকে যে শিক্ষাদান তাঁদের প্রাথমিক দায়িত্ব তাই ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে এই উদ্দেশ্যে ব্যাক্তিগত মুঠোফোন ব্যবহার করছেন যা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং এটি সরকার দ্বারা তাঁদের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল। তিনি বলেন এসব কোন অবস্থায় মেনে নেওয়া যায়না।
প্রদীপ দত্তরায় এদিন আরো বলেন যে এর সাথে সরকারি স্কুলগুলিতে আবার ইদানীং অত্যধিক বিভিন্ন দিবস পালনের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি এরজন্য ছুটির দিনেও শিক্ষক ছাত্রদের স্কুলে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন বছরে যদি ৮০ দিন এসব দিবস পালনে ছাত্র শিক্ষকদের ব্যাস্ত থাকতে হয় তবে ছাত্রদের পঠনপাঠনের জন্য সময়াভাব হওয়া স্বাভাবিক। এরপর গুনোৎসবের সময় যদি কোন স্কুল আশানুরূপ ফল না দেখাতে পারে তবে তাঁর দোষ স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত ? প্রদীপ বাবু বলেন এই রাজ্যের শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ও শিক্ষাদানের মহৎ কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে বিভিন্ন শিক্ষা বহির্ভূত বিভিন্ন কাজে শিক্ষকদের নিয়োজিত করা হচ্ছে তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন ছাত্রদের টীকাকরণ,জন্মের প্রমানপত্র,আধার কার্ড থেকে শুরু করে মিড ডে মিল, নির্বাচনের দায়িত্ব অব্দি অসংখ্য কাজে এভাবে শিক্ষকদের দায়বদ্ধ হতে হলে আবশ্যিক পঠনপাঠন যে ব্যাহত হবে তা বলা বাহুল্য। তিনি বলেন শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন দিবস পালনের মাধ্যমে সরকার দলীয় প্রচার কার্যে ছাত্র শিক্ষকদের ব্যাবহার করছে ।এভাবে জোর করে কারুর মনে আবেগ সঞ্চারিত হয়না। তিনি বলেন এসব করে সরকারি শিক্ষাব্যাবস্থাকে ধ্বংস করে দেবার প্রয়াস চলছে। এবং তারপর এই অজুহাতে সরকারি শিক্ষাব্যাবস্থাকে আদানি, আম্বানির মতো বৃহৎ শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়াই সরকারের আসল উদ্দেশ্য। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্তরে আলাপ আলোচনা চলছে বলে তাঁদের কাছে খবর আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে যদি এইসব প্রযুক্তি ব্যাবহারের পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ সমগ্র শিক্ষা অভিযান’ প্রকল্পের অন্তর্গত হয়ে থাকে তবে তা কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, নবোদয় বিদ্যালয় ইত্যাদিতে প্রথমে প্রয়োগ না করে রাজ্য সরকারের স্কুলে প্রয়োগ করার পেছনে যুক্তি কি সেটা তাদের বোধগম্য হয়নি।জয়দীপ বলেন শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু এই সরকারের আমলে তাঁরা বিভিন্ন ভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন ২০০৫ সালের পর থেকে যেসব শিক্ষকরা এ রাজ্যে নিযুক্তি পেয়েছেন নতুন পেনশন নীতি অনুযায়ী তারা পেনশন পাবেন না বা পেলেও তা ন্যুনতম। অথচ ২০০৫ সালের পর কোন সাংসদ বা বিধায়ক শুধু পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন তবে তাঁর আজীবন পেনশন পেতে কিন্তু কোন বাধা নেই । জয়দীপ বলেন যারা ত্রিশ,পয়ত্রিশ বছর ধরে শ্রমদান করে দেশের জন্য সুনাগরিক তৈরির দায়িত্ব বহন করলেন তাদের শেষ জীবনের দায়িত্ব নিতে অপারগ যে সরকার,তারাই পাঁচ বছর জনগনের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলেই একজন জনপ্রতিনিধির জন্য দরাজহস্ত ,এটা কি জনগন প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যাবহার নয় ?
বিডিএফ সদস্যরা এদিন বলেন যে সরকার অবিলম্বে শিক্ষক সংগঠনদের সাথে আলোচনা ক্রমে শিক্ষা সেতু এ্যপ উদ্ভুত সমস্যার খতিয়ান নিক ও তা সংশোধনের ব্যাবস্থা নিক। অবিলম্বে শিক্ষা বহির্ভূত কাজ ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন দিবস পালনের দায়িত্ব থেকে ছাত্র শিক্ষকদের অব্যাহতি দিক। এছাড়া সরকারি বিদ্যালয় গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নসহ শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হোক।
অন্যথা এই ব্যাপারে প্রতিবাদী কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে বিডিএফ ।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে।