NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsCultureBreaking News

রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বাংলা সাহিত্য সভা অসমের উনিশ স্মরণ

ওয়ে টু বরাক, ২১ মে ঃ শুধু বরাক উপত্যকা নয়, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা জুড়ে উনিশে মে পালন করল বাংলা সাহিত্য সভা অসম। এ দিন সভার রাজ্য সমিতি ও গুয়াহাটি শাখার উদ্যোগে গুয়াহাটির শান্তিনগরের পূর্বাশা শিক্ষানিকেতনে এগারোটি প্রদীপ জ্বালিয়ে একাদশ ভাষা-সেনানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাজ্য সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী, ভাষা-দধীচি কমলা ভট্টাচার্যের ভাগ্নে তথা সভার রাজ্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক দেবাশিস ভট্টাচার্য সহ অন্যরা। এরপর মৌসুমী শিকদারের পরিচালনায় দেশবন্দনা “ও আমার দেশের মাটি” দিয়ে শুভ সূচনা হয়। উনিশে মে-র তাৎপর্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস। এরপর গানে-কথায়-কবিতায় অনুষ্ঠান মুখর হয়ে ওঠে। একক সংগীতে অংশগ্রহণ করেন চন্দন ভাদুড়ি, মৌসুমী শিকদার, সঞ্চিতা সান্যাল, মীনাক্ষী চক্রবর্তী, নন্দা পাল, বর্ণালী দাস, মোনালিসা ভট্টাচার্য প্রমুখ। কবিতায় ছিলেন ড. সঞ্জয়চন্দ্র দাস, প্রাণজিৎ সরকার। অংশগ্রহণ করেন তুষারকান্তি সাহা, রবীন্দ্র দে, কল্যাণ দত্ত প্রমুখ।

এ দিকে সভার উজান অসমের বিভিন্ন শাখাও দিনটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করে। তিনসুকিয়ার প্রমোদ আসাম হোটেল প্রাঙ্গণে এই প্রথম “বাংলা সাহিত্য সভা, অসম”-এর তিনসুকিয়া শাখার তরফ থেকে ভাষা সেনানী দিবস পালিত হল। নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বস্তিসাধন চক্রবর্তী, সহযোগিতায় ছিলেন সহ সম্পাদিকা শেলি দত্ত এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা শীলা দে দেব সরকার। সঙ্গে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পায়েল মজুমদার, জীবন কৃষ্ণ সরকার, ডালিয়া দাস প্রমুখ। বিশেষ করে সুস্মিতা গুপ্তা এই অনুষ্ঠানটি পালনের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শীলা দে দেব সরকারের পরিচালনায় উদ্বোধনী তথা সমবেত সংগীত, সহ সাধারণ সম্পাদিকার স্বাগত ভাষণ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতির স্বরচিত কবিতা পাঠ এবং শোক প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সভার ডিব্রুগড় শাখায় অসমে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গ করা ১১ জন ভাষা-সেনানীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়। সমবেত সংগীতের পর ড. শেখর পুরকায়স্থ উনিশকে নিবিড় ভাবাবেগে স্মরণ করেন স্বরচিত কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে। মোহনা বণিক ও সভাপতি ডাঃ অলক সরকার ভাষা বিষয়ক কবিতা পাঠ এবং তনুশ্রী রায়ের “মোদের গরব মোদের আশা” গানে সবাই একস্বর সমন্বিতে পরিবেশ মুখর করে তুলে। নন্দিতা চক্রবর্তীর রবীন্দ্র সংগীত স্মরণ করিয়ে দেয় উনিশে মে-র মাসেই বরাক উপত্যকায় কবিগুরুর শতবর্ষ উদযাপন আর মাতৃভাষা রক্ষার জন্য জনজাগরণ। সুব্রত রায়ও একটি সুন্দর রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে ভাষা সেনানীকে স্মরণ করেন। ডিব্রুগড় শহরের পুরসভার সভাপতি ডাঃ সৈকত পাত্র ভাষা সেনানীদের শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ডি-ভোটারদের সমস্যা নিয়ে আমাদের ভাবতেই হবে। কারণ উনিশে মে কেবল অনুষ্ঠান নয় ,চেতনায় জাগ্রত এক জাতির প্রতি দায়িত্বের নাম। শাখা সম্পাদক ড. স্বপ্না নাথ উপাধ্যায় উনিশের প্রেক্ষাপটে আজ বাংলা ভাষার ওপর ধর্মীয় মৌলবাদের আধিপত্য সম্বন্ধে বলেন, জলখাবার “নাস্তাতে” যাতে পরিণত না হয় তার দিকে আমাদেরই সচেতন হতে হবে। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে মাতৃভাষার বইগুলো সহজলভ্য করতে হবে। সকলের মাতৃভাষা বেঁচে থাকুক এই আশা তিনি ব্যক্ত করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিব্রুগড়ের অভিজাত বাগচি-পরিবারের মৌসুমী বাগচি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডাঃ অলক সরকার।

কোকরাঝাড় শাখার তরফ থেকে ভাষারক্ষা বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়। সম্পাদক ড. রাজীব কুমার সাহা দিনটির বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা, বীর ভাষা সেনানীদের আত্মবলিদান ও অসমে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব, স্থিতি ও গৌরবময় পরিক্রমার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করেন।
সভা পরিচালনা করেন শাখার সভাপতি ড. সুজাতা ভদ্র। অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন সহ- সভাপতি সংগীতা শর্মা, সহ-সভাপতি, সংগীতা ভট্টাচার্য, সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা ড. শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য , সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা সংগীতা নন্দী, যুগ্ম-কোষাধ্যক্ষ কুণাল ঘোষ, প্রচার সম্পাদক বিশ্ব ধর, আজীবন সদস্যা রত্না চক্রবর্তী ও অন্যান্য অনেকে ।

বরাকের বাংলা সাহিত্য সভার লালা আঞ্চলিক সমিতি এবং ধনীপুর এনভি স্কুলের যৌথ উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হল উনিশে মে। এ দিন সকালে স্কুলের স্থায়ী শহিদ বেদীতে, মালাদান ও পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করেন বাংলা সাহিত্য সভার লালা শাখার সভাপতি রথীন্দ্র চৌধুরী এবং স্কুলের এসএমসি সভাপতি অমল কুসুম চক্রবর্তী। তারপর স্কুল প্রাঙ্গণে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন শিক্ষক শঙ্কর দত্ত বলেন, ১৯৬০ সালে অসম সরকার কর্তৃক অসমিয়া ভাষা বাধ্যতামূলক করার যে হটকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তার প্রতিবাদে ১৯৬১ সালের ১৯শে মে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য প্রাণদান করেন একাদশ বীর বীরাঙ্গনারা। বাংলা সাহিত‌্য সভা লালা শাখার সহ সভাপতি বুদ্ধদেব নাথ বক্তব্যে জানান, বাংলা ভাষা মাতৃদুগ্ধ, তাই আগে নিজের ভাষাকে মর্যাদা দিতে হবে, পরে অন্য ভাষা আয়ত্ত করতে হবে। মৃণালকান্তি সেনগুপ্ত বলেন, আমার কোনও ভাষার প্রতি বিদ্বেষ নেই, সকল ভাষাই মা-মাসির সম্পর্কে আবদ্ধ। তবে নিজের মাতৃভাষার মান রক্ষা করা তার সন্তানের দায়িত্ব। সভার সভাপতির বক্তব্যে রথীন্দ্র চৌধুরী বলেন, মাতৃভাষা অন্য ভাষা ছাড়া আয়ত্ত করা সম্ভব নয়, তাই আগে নিজের ভাষায় পটু হতে হবে তখনই জগৎ জুড়ে খ্যাতি অর্জন সম্ভব। এ দিনের সভায় প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন জয়দীপ নাথ, আরাধিকা বৈষ্ণবী, অমল চক্রবর্তী, পূজা নাথ ও নন্দিনী পাল প্রমুখ।

বাংলা সাহিত্য সভা উধারবন্দ শাখার তরফে ১৯ শে মে ১৯৬১-র বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়। উনিশে মে বাংলা সাহিত্য সভা অসম-এর বদরপুর শাখার পক্ষ থেকে সকাল আটটায় প্রবালিনী এমই স্কুলে ভাষা সেনানীদের স্থায়ী স্মারক বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সভাপতি মৈনাক মুখার্জি, সহ সম্পাদক প্রবীর বণিক, উপদেষ্টা মৃণাল ভট্টাচার্য, কার্যকরী সভাপতি পল্লব মজুমদার, সদস্য অনুপ বড়ভুইয়া, সদস্যা অনিতা পাল। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রবীর বণিক।

বাংলা সাহিত্য সভার করিমগঞ্জ শাখার পক্ষ থেকে স্থানীয় শম্ভুসাগর উদ্যানের ভাষা সেনানী স্মারক শিলাস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয় সকাল ৮-১০টায়। এতে উপস্থিত ছিলেন সভানেত্রী  ড. শর্মিষ্ঠা খাজাঞ্চি, সহ-সভাপতি দীপ্তি দে, সাধারণ সম্পাদক শুভ্রাংশু প্রকাশ দে, সহ সম্পাদক মানস ভট্টাচার্য,  ড. শংকর দাস, আল্পনা দাস, শংকর চৌধুরী, অলক পাল, ভূদেব আচার্যি, অপর্ণা নাথ, গোপা সেন। সন্ধ্যায় একাদশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ভাষা সেনানীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বাংলা সাহিত‌্য সভা শিলচর শাখার সদস্যদের অনেকে সকাল ৭-৩০টায় শ্মশানঘাটে জমায়েত হয়ে ভাষা শহিদের গান ‘ডাকে ঐ একাদশ শহিদেরা ভাই’ গেয়ে ১১ জন ভাষা সেনানীর প্রতি পুস্পার্ঘ প্রদান করেন। বিকেল ২টা ৩৫ মিনিটে গান্ধীবাগে থাকা কেন্দ্রীয় শহিদ স্মৃতি সৌধের দ্বার খোলা হয়। সভাপতি সমরবিজয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বসাস-শিলচর শাখার সদস্যরা শহিদ বেদীর ভেতরে প্রবেশ করে ফুলের স্তবক প্রদান করেন। গোটা অনুষ্ঠানে সংস্থার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সমরবিজয় চক্রবর্তী, সন্দীপন দত্ত পুরকায়াস্থ, উত্তম ঘোষ, নিবেদিতা চক্রবর্তী, সংহিতা দত্ত চৌধুরী আরও অনেকে।

বাংলা সাহিত‌্য সভার অসমের সব শাখা একযোগে একটি গৃহীত প্রস্তাব কার্যে রূপান্তর করার জন্য জোর দেন। তা হল, ভারতীয় সংবিধানে বাংলা ভাষার আঞ্চলিক অবস্থানের অতিরিক্ত অর্থাৎ অষ্টম তপশীল ছাড়াও ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা আদায় করার পক্ষে। যদি বাংলা ভারতীয় সংবিধানে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তাহলে এ হবে রক্ষাকবচ। বাংলাভাষা যে সংকটে আছে সেই সংকট থেকে সিংহভাগই মুক্ত হবে। এটা করতে পারলে ভাষা সেনানীদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা হবে বলে মনে করে বাংলা সাহিত‌্য সভার কেন্দ্রীয় সমিতি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker