Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking NewsFeature Story
‘বরাক গাঁথা’ : কুর্নিশ জানাতেই হয় সবাইকে, লিখেছেন বিধায়ক ভট্টাচার্য
১৯ অগস্ট : একটি গানকে শুনতে শুনতে যে ভালো লাগা তৈরি হয়, তার কথার অনুভবে যে আবেগ তৈরি হয়, তার থেকে বেরিয়ে এসে গানটি নিয়ে নির্মোহ আলোচনা করাটা আমার বেশ কঠিন লাগছে৷ আরও বেশি এমন লাগছে এইজন্য যে, এর সাথে যুক্ত শ্রদ্ধেয়া মৈত্রেয়ী দাম। আমার গভীর বিশ্বাস, “বরাক গাঁথা” গানের ভিডিওটি, বরাক উপত্যকার সংগীত ইতিহাসে বিশেষ জায়গা করে নেবে৷ এমন বিশ্বাসের অনেক কারণের মধ্যে বিশেষ কারণটি হলো, এ অঞ্চলের আলো-হাওয়ায় গড়ে ওঠা একটি বেসিক গান কয়েক দশক ধরে বাংলাগানের শ্রোতাদের হৃদয়জয়ী মৈত্রেয়ী দামের চিরনবীণ কণ্ঠে গীত হলো। তাঁর কণ্ঠের লাবণ্য, সুরের গভীরতা এবং নিবেদনের নিষ্ঠা ঠিক তেমনটাই, যেভাবে তাঁর শ্রোতারা বহুকাল ধরে তাঁর থেকে পেয়ে আসছেন৷ একটি মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি যে তিনি ষাটোর্ধ্ব, তিনি শ্রান্ত! সংগীতের ছাত্র হিসেবে তাঁকে দেখে যেমন এতবছর ধরে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি, এই গানটিতেও আবারো তেমন অনেক কিছু পেলাম।
এবার এই ভিডিওটির অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আমার ভাবনাগুলো সকলের সাথে ভাগ করে নিই। এ উপত্যকার বাংলা গানের লিরিকে হৃষিকেশ, বিশ্বরাজ, দেবাশিস (সায়ন)-দের হাত ধরে যে নতুন আঙ্গিক ও ভাষার সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি, নিঃসন্দেহে নিরুপম শর্মা চৌধুরী এতে উজ্জ্বল সংযোজন৷ নিরূপমের সাম্প্রতিক কিছু লিরিকে আমরা সেই সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি এবং আলোচ্য গানের লিরিকেও আমরা সমন্বয়ের এক নতুন ব্যঞ্জনা পেলাম “ব্রহ্মপুত্র আসামপুত্র, বরাক আসামকন্যা” এই শব্দবন্ধে এবং এভাবেই রচিত হলো এ উপত্যকার ঐতিহ্যের আখ্যান, শুধু ধলেশ্বরী অনুচ্চারিত থেকে গেল!
বাঁশির প্ৰিল্যুডেই সুরকার গানটির মুড নির্মাণ করে দিয়েছেন, এমন একটি বাংলা গান যে লালিত্য, যে গাম্ভীর্য, যে ভালোবাসা দাবি করে ঠিক সেভাবেই সুরকার শ্রোতাদেরকে বরাকের গৌরবগাথায় আবিষ্ট করলেন শুরুতেই এবং প্রায় গোটা গানেই সেটা ধরে রাখলেন৷ শুধু অন্তরার আগের ইন্টারল্যুডে স্যাক্সাফোনের ব্যবহার ও সঞ্চারীর সুরবিন্যাস এই আবেশে খানিকটা ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে৷ কারণ সুরকার হৃষিকেশ চক্রবর্তী হলে তো প্রত্যাশা বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সৌমেন পালচৌধুরী যথারীতি এই গানেও তাঁর প্রাণভরানো বাঁশিতে মুগ্ধ করেছেন!
তরুণ ভিডিও নির্মাতা অরিন্দম গোয়ালার অসাধারণ কিছু কাজ আমরা আগে দেখেছি কিন্তু এই ভিডিওতে তিনি মনে হয়েছে ঠিক খেই ধরতে পারেননি। লিরিকে, সুরে, গায়নে যে গল্পবলার আবহ তৈরি হয়েছে দৃশ্যায়ন সেভাবে গল্প বলে উঠতে পারেনি।
সবশেষে যেটা বলতেই হবে তা হলো, খণ্ডিত বাঙালির এই ভুবনে বাংলা গান নিয়ে কাজ করবার পেছনে যে নিষ্ঠা, যে সততা, যে ভালোবাসা আছে তা সাধারণ মাপদণ্ডে বিচার করবার বিষয় নয়। যে লড়াই করে ঐতিহ্য ও অস্তিত্বকে সগর্বে বাঁচিয়ে রাখতে ঈশান বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন, এই কাজটি তারই অঙ্গ। এধরনের সমস্ত কাজ ও তার কুশীলবদের তাই কুর্নিশ জানাতেই হয়, এ আমাদের সবার নৈতিক, সামাজিক দায়িত্ব।