Barak UpdatesHappeningsBreaking News
বৈশ্য উন্নয়ন পরিষদের কৃতী সংবর্ধনা
ওয়েটুবরাক, ৩০ জুনঃ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে কাছাড় জেলা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থানাধিকারী, আর্থিক ভাবে দুর্বল মেধাবী পড়ুয়া এবং নিট ২০২৩ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা জানাল অল আসাম বৈশ্য উন্নয়ন পরিষদ । রাঙিরখাড়ি স্থিত সাহা বিবাহ ভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সংস্থার সভাপতি শৈলেন রায়ের পৌরহিত্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা কাছাড় ক্যান্সার হসপিটাল সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. সুজিৎ কুমার নন্দী পুরকায়স্থ । তিনি কৃতী ছাত্রছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে বলেন, “দশম শ্রেণি উত্তীর্ণের পর থেকে দুই বছর হচ্ছে ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আসল সময় । তোমাদের প্রথম শিক্ষক হচ্ছেন মা ও বাবা৷ তাদের উপদেশ সবসময় মনে রাখবে।” মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তাঁদের পাশে সর্বাবস্থায় থাকার আহ্বান করেন৷ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রমে যাতে না হয়, সে কথা মাথায় রাখতে হবে। আজকাল অনেক ছেলেমেয়ে মা-বাবাকে বুড়ো বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন, তা তাকে বড় পীড়া দেয় বলে জানান। ডা. নন্দী পুরকায়স্থ অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, পড়াশোনা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের অযথা চাপ সৃষ্টি করবেন না। ছেলে বা মেয়েকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী তার পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে দিন এবং তাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে দিন। বরাক উপত্যকায় মেধার কোনও অভাব নেই উল্লেখ করে একসময় ধলাই সমষ্টির পালংঘাটের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পড়াশোনা করে অধীর রঞ্জন দেব হাইস্কুল শিক্ষান্ত পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান দখল করেছিলেন বলে জানান।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সম্মানিত অতিথি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর দাস বলেন, ‘অ্যাস্ট্রোজেন’ নামক একটি শিলচরের সিটিজেন সায়েন্স গ্রুপ তৈরি করেছেন তিনি৷ এই গ্রুপের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হচ্ছে, বরাক উপত্যকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলা। তিনি বলেন, তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে অবশেষে গ্রহাণু আবিস্কারের তালিকায় আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম উঠলো শিলচরের সিটিজেন সায়েন্স গ্রুপ “অ্যাস্ট্রোজেন”-এর। ড. দাস আরও জানান, অ্যাস্ট্রোজেনের আবিষ্কৃত গ্রহাণু মাইনর প্ল্যানেট সেন্টারের ডাটাবেসে স্থান পাওয়ায় তিনি অত্যন্ত আনন্দিত । গ্রহাণুটির যেহেতু শিলচর থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে তাই এটার নামাকরণ “শিলচর” রাখতে চান তিনি। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে তাঁরাই সিটিজেন সায়েন্সের বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ক্যাম্পেইন শেষ হলেই মিলবে “আইএএসসি” র তরফ থেকে সার্টিফিকেট, যাতে নাসার নামও থাকবে। আগামীতে এই শংসাপত্র ছাত্রছাত্রীদের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে কাজে লাগবে। “অ্যাস্ট্রোজেন”-এর টিমে তিনি ছাড়াও রয়েছেন সাতজন সিটিজেন সায়েন্টিস্ট। তাঁরা হলেন- ঐশী জ্যোতি, আকাশদীপ মোহন্ত, সৈকত মজুমদার, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, সপ্তদীপ সেন, সৌনক ভট্টাচার্য ও সঞ্চালি নাথ মজুমদার।
এদিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ নিরঞ্জন রায় কৃতী ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের গর্বিত পিতামাতাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “ভারতবর্ষ এক রূপান্তর অবস্থার মধ্যে চলছে। অর্থাৎ একটা নতুন ভারতবর্ষের দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর অর্থাৎ আজাদি কা অমৃত মহোৎসব থেকে আমরা যাত্রা আরম্ভ করেছি এবং ২০৪৭-এ অমৃতকাল শেষ হবে। অমৃতকালে, আজ যারা কৃতী ছাত্ররা বসে আছে, তারা এই ভারতবর্ষের সেই স্তম্ভ, যাদের কাঁধে ভারতবর্ষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকবে।” তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে নতুন শিক্ষানীতির প্রবর্তন করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশল নেতৃত্বে দেশে মেইক ইন ইণ্ডিয়া চালু হয়েছে, আত্মনির্ভর ভারত গড়ার অভিযান শুরু হয়েছে। মোদ্দা কথা, ভারতবর্ষকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ বিশ্বতোষ চৌধুরী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “সর্বাগ্রে তোমরা একটা ভাল মানুষ হয়ে উঠবে। মানবতা বর্জিত ও হৃদয়হীন মেধার আজকাল এই পৃথিবীতে কোনও প্রয়োজন নেই। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁর আহ্বান, তোমরা শেকড় ভুলে যেও না। আগামীদিনে হয়তো তোমরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূত্রে থাকবে কিন্তু তোমরা তোমাদের মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের ভুলে যেও না, যাদের হাত ধরেই তোমরা মানুষ হবে।”
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা গ্রামোন্নয়ন সংস্থার প্রাক্তন প্রকল্প সঞ্চালক রসরাজ দাস বরাক উপত্যকার বরেণ্য ব্যক্তি যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে একেকজন রত্ন ছিলেন তাদের সম্পর্কিত ইতিহাস তুলে ধরেন। জানান, অতীতে সুরমা-বরাক উপত্যকা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক সমৃদ্ধশালী ছিল৷ এখান থেকে কামিনী কুমার চন্দ, ড. ত্রিগুণা সেন, অসীম দত্ত, শিশির দত্তের মতো রত্নাগর্ভা ব্যক্তিত্বরা উঠে এসেছিলেন এবং কাছাড় তথা বরাক উপত্যকার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেছেন।
তা ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিলচর এনআইটির অধ্যাপক শান্তনু রায়, শিলচর চেম্বার্স অব কমার্স ও শিব সুন্দরী নারী শিক্ষাশ্রমের চেয়ারম্যান অংশু কুমার রায়, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা বৈশ্য উন্নয়ন পরিষদের উপদেষ্টা ডা. ভবতোষ রায়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথা সমাজকর্মী বিবেক পোদ্দার প্রমুখ। সংস্থার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে বক্তব্য রাখেন উপ-সভাপতি শান্তনু রায়। গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোসিয়েল ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের সহকারী অধ্যাপিকা ড. জয়শ্রী দে। রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন রাধামাধব কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা বৈশালী চক্রবর্তী । গনেশ বন্দনা পরিবেশন করেন ঋতিকা নাথ ও ঋতুপর্ণা নাথ। সুরজ নাথ ও সঞ্জীব দাসও গান গেয়ে শোনান।
সবশেষে পরিবেশিত হয় সমবেত ধামাইল নৃত্য। এদিন সংস্থার এক সদস্য এবং সম্প্রতি ত্রিপুরার কুমারঘাটে উল্টো রথের দিন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।