Barak UpdatesAnalyticsBreaking NewsFeature Story
বারইগ্রাম আশ্রমে ২০ বছর ধরে এক মূর্তিতে দুর্গা ও বাসন্তীপূজা
৪ অক্টোবরঃ বারইগ্রাম রাধারমণ আশ্রম সর্বজনীন পুজো কমিটির ২০ বছরের হিসেব ঘেঁটে কোথাও প্রতিমা শব্দের দেখা মেলেনি। তবে কি করিমগঞ্জ জেলার ওই পুজোয় প্রতিমা দান করেন কেউ! কারও মানত বুঝি! না, এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তা নয়। প্রতি বছর আশ্রমে বাসন্তী পূজাও হয়। সেখানেও মূর্তি কেনার ব্যাপার নেই।
১৯৫৮ সালে আশ্রমে দুর্গাপূজার শুরু। বাসন্তী পূজা এর আগের বছর। প্রথম ৪০ বছর মূর্তি এসেছে করিমগঞ্জ থেকে। দুর্গা কি বাসন্তীপূজা—- গাড়ি ভরে সবাই যেতেন শহরে। প্রতিমা নিয়ে আসতেন। পরে কমিটি বাসন্তীদেবীর নিত্যপূজার সিদ্ধান্ত নেয়। মাটির স্থায়ী মূর্তি গড়া হয়। ফলে শুধু দুর্গাপূজার সময় মূর্তি কেনা হতো। বাসন্তীপূজা হতো স্থায়ী মূর্তিতে রঙের প্রলেপ দিয়ে। সেখান থেকেই ভাবনা আসে, দুর্গা আর বাসন্তী তো একই। এক স্থায়ী মূর্তিতে উভয় পূজা সেরে নিলে কেমন হয়! কিন্তু মাটির মূর্তিতে কয় বছর আর যাবে! বারবার রং করতে গিয়ে কোনও অংশ যদি ভেঙে পড়ে! ১৯৯৮ সালে বাসন্তীমণ্ডপে সিমেন্টের প্রতিমা নির্মিত হয়। ওই মূর্তিতেই এখন নিত্য পূজা। সঙ্গে শরতে দুর্গাপূজার বিশেষ আয়োজন, আর বসন্তে হয় বিশেষ বাসন্তী বন্দনা।
পূজা কমিটির পক্ষে রঞ্জিতকুমার দাস, অরূপ রায়-রা জানিয়েছেন, দুই পুজোতেই মাকে রূপোর অলঙ্কারে সাজিয়ে তোলা হয়। বদলানো হয় পুরনো অস্ত্রশস্ত্রও।
প্রতিমা গড়া নেই বলে নিরঞ্জনেরও ব্যাপার নেই আশ্রমে। তাই বলে কি বিজয়া দশমীতে কিছুই হয় না? আসলে প্রতিমা যেমনই হোক, শাস্ত্রীয় রীতি অনুসারেই বোধনে কলাবউয়ের মধ্যে দেবীপ্রতিষ্ঠা করা হয়। দশমী পুজো শেষে দল বেঁধে সবাই মিলে কলাবউ নিরঞ্জন করেন। আশ্রমের নিজস্ব পুকুরেই নিরঞ্জন হয়।
গ্রামের হলেও শুরু থেকেই করিমগঞ্জ জুড়ে এই পুজোর বেশ নামডাক। এর বড় কারণ জেলার মানুষ প্রথম বিদ্যুত দেখেন বারইগ্রামের পুজোতে। তখনও লাইন টেনে বিদ্যুতব্যবস্থা চালু হয়নি। শিলচরে বরদাকান্ত দাস জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ করতেন। পুজোর সময় একমাত্র রাধারমণ আশ্রমেই জেনারেটর ভাড়া করে আনা হতো। মানুষ দেখতেন, লণ্ঠন-হ্যাজাক বা ঝাড়বাতি ছাড়াও আলো জ্বলে। এখন অবশ্য আশ্রমের নিজস্ব জেনারেটর। তবে তা বিদ্যুত ব্যবস্থার অতিরিক্ত হিসেবে।
৬১ বছরে আশ্রমের পুজোয় পরিবর্তন কম হয়নি। যাত্রাপালার জায়গা নিয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাঁকজমকেও বিরাট ফারাক। কিন্তু বদলায়নি অর্থভাবনা। আশ্রমের প্রবীণ সেবায়েত সচ্চিদানন্দ দাস বৈষ্ণব জানান, এখানে কখনও পুজোর বাজেট তৈরি হয় না। খরচেও আমরা কার্পণ্য করি না। কিন্তু অর্থসঙ্কটে ভুগতে হয়নি কোনও বছর।