Barak UpdatesHappeningsFeature Story
বাবা-মেয়ে সম্পর্কের নথি নেই, ৫০ পেরিয়ে তাই ডি-ক্যাম্পে, করোনা আতঙ্কে মিলল জামিন
ওয়েটুবরাক, ২০ মে: ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ ছাড়া কোনও কথা ধোপে টেঁকে না৷ তাই গত দুই বছর জেলেই দিন কেটেছে ৫২ বছর বয়সী দীপালি দাসের৷ গত বছর আদালত ঘোষণা করে, ডিটেনশন ক্যাম্পে দুইবছর কাটালেই জামিনে মুক্তি৷ আশা জেগে ওঠে দীপালির৷ আর একটি বছর কেটে গেলেই বাড়ি ফিরবেন৷ অসুস্থ স্বামীর শুশ্রূষা করবেন, মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাবেন৷
কিন্তু আদালত যে বলে দিয়েছে দুইজন জামিনদার চাই! এ তো অসম্ভব! এ বার অসমের বিভিন্ন জেলে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে হাই কোর্ট একজন জামিনদারেই ডিটেনশন সেন্টার থেকে ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়৷ সেই একজন জামিনদারও জুটছিল না দীপালির৷ শেষে এগিয়ে আসে এনজিও বীক্ষণ৷ মূলত চলচ্চিত্র বিষয়ক সংস্থা৷ কিন্তু সভাপতি কমল চক্রবর্তী গত কয়েক বছর ধরে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিদের নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনিই সংস্থার সদস্য মলয় দাসকে জামিনদার হতে বলেন৷ সোমবার সন্ধ্যায় জেলের বিশাল দরজা ঠেলে বের হন দীপালি৷
প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে কী করে এল বিদেশি প্রসঙ্গ? দীপালি বললেন, তা পুলিশই জানে৷ আচমকা তারা তাকে বিদেশি বলে সন্দেহ করায় ট্রাইব্যুনালে ডাক পড়ে৷ বলা হয়, ১৯৭১ সালের আগে থেকে পূর্বপুরুষদের ভারতে থাকার নথি দেখাতে৷ নির্বাচন দফতরে গিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে দীপালি পেয়ে যান ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় কাটিগড়া কাতিরাইলের সুরেশচন্দ্র দাসের নাম৷
ট্রাইব্যুনালের বিচারক জানতে চান, তিনিই যে তাঁর বাবা, এর কী প্রমাণ? আটকে গেলেন দীপালি৷ ৭ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ায় পাঠশালার বারান্দায় পা রাখা হয়নি৷ ১৪ বছর হতেই মা মারা যান৷ পরে এলাকাবাসীর সাহায্যে বিয়ে৷ প্রথম তাঁর নিজের নামে নথি বললে ধলাই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকা৷ কিন্তু সেখানে বাবার নামের উল্লেখ নেই, রয়েছে স্বামীর নাম৷ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও এমন নথি বার করা যায়নি, যেখানে বাবা-মেয়ের নাম আছে৷ ট্রাইব্যুনাল শেষে তাঁকে বিদেশি বলে রায় দেয়৷ সেটা ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি৷ এর পরেই পুলিশ তাকে শিলচর ডিটেনশন সেন্টারে পুরে দেয়৷