Barak UpdatesHappeningsBreaking News

বাংলা সহযোগী ভাষা? রাজদীপের ভুল ব্যাখ্যায় বিস্মিত বরাক বঙ্গ

ওয়েটুবরাক, ২১ অক্টোবর : আসাম সরকারি ভাষা আইনে বরাক উপত্যকায় সমস্ত সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের যে সংস্থান রয়েছে তার ভুল ব্যাখ্যা করে এই অঞ্চলের ভাষিক পরিচিতি বদলে দেওয়ার সুগভীর চেষ্টা চলছে বলে গভীর উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করলো বরাক উপত্যকা বঙ্গ  সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। বরাকবঙ্গ বলেছে, দীর্ঘ সংগ্রামে ভাষার যে  অধিকার অর্জন করেছে এই উপত্যকা, তা বাঁকা পথে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে এই অঞ্চলের মানুষ কোনওভাবেই সেটা মেনে নেবে  না। এ সম্পর্কে উপত্যকার জনপ্রতিনিধিদের সদর্থক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন।
চলতি ভাষা বিতর্কে সম্মেলনের মনোভাব তুলে ধরে বরাকবঙ্গের  কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বুধবার বলেছেন, ১৯৬১ সালের সংশোধিত আসাম সরকারি ভাষা আইনের   ৫নং ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, কাছাড় জেলায় (বর্তমানে বরাক উপত্যকা)  সমস্ত প্রশাসনিক ও অন্যান্য সরকারি কাজকর্মে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হবে। আইনে এটা ‘কাছাড় জেলায় বাংলা ভাষার সুরক্ষা ব্যবস্থা ‘ বলে উল্লেখ রয়েছে। ১৯৬৪ সনের ২৪ জুলাই এ সম্পর্কিত যে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় সেখানেও বলা হয়েছে , ১ আগস্ট ১৯৬৪ থেকে কাছাড় জেলায় সমস্ত সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হবে। এই আইনি সংস্থানকে বর্তমান রাজ্য সরকারও মান্যতা দিয়েছে এবং এ সম্পর্কে সরকারি ঘোষণাও  রয়েছে ।  আইনের  এই বিধান অনুসারে বরাক উপত্যকায় সরকারি কাজকর্মে বাংলা ভাষার ব্যবহার হচ্ছে । কোনও কোনও সময় সরকারি তরফে আইনি ব্যবস্থা লঙ্ঘনের চেষ্টার হলে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়। তখন সেটা অনেক ক্ষেত্রে সংশোধনও করে নেওয়া হচ্ছে ।  করিমগঞ্জে জেলা শিল্প কেন্দ্র দপ্তরের সাইনবোর্ড বরাকবঙ্গের আপত্তিতে সরিয়ে নিয়ে বাংলায় লিখে নতুনভাবে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 আইনি  এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সংশয়ের সুযোগ না থাকলেও এখন তার ভুল ব্যাখ্যা করছে কোনও কোনও মহল। সাংসদ ডা: রাজদীপ রায়ও এ সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা  কোনভাবেই আইনি সংস্থানের সঙ্গে  সাযুজ্য নয়।   ভাষা শহিদের রক্তস্নাত শিলচরের সাংসদের এই ভূমিকা  বাস্তবিকই বিস্ময়কর ।  কোনও অবস্থাতেই এটা কাঙ্ক্ষিত ছিল না ।
প্রসঙ্গত, সাংসদ রায় দুদিন আগে এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বলেছেন, বরাক উপত্যকায় বাংলা হচ্ছে সহযোগী ভাষা৷ অসমিয়া সারা রাজ্যেরই সরকারি ভাষা৷ এ যে ভুল ব্যাখ্যা, বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে বরাক বঙ্গ৷ সাধারণ সম্পাদক  দত্ত বলেছেন, বরাক উপত্যকার ভাষিক পরিচিতি ও অর্জিত অধিকার রক্ষার জন্য বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে নাগাড়ে কাজ করে চলেছে । ভাষা আইন লঙ্ঘনের যখনই চেষ্টা হয়েছে তখনই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এখনও জানাচ্ছে ।  কেউ এ সম্পর্কে আইন নিজের হাতে নিক কিংবা কোনও ভাষার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করুক এটা কোনভাবেই সমর্থন করে না সম্মেলন । গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের কাছে দাবি উত্থাপনের যে ব্যবস্থা রয়েছে  সে অনুসারে প্রত্যেকেরই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ।
বিবৃতিতে সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন , বরাকের বাঙালি জনগোষ্ঠী অসমিয়া ভাষা – সংস্কৃতির মোটেই বিরোধী নন, বরং শ্রদ্ধাশীল। অসমিয়া ভাষা ও সাহিত্যের নিবিষ্ট পাঠক যেমন এই উপত্যকায় রয়েছেন , তেমনি রয়েছেন অসমিয়া সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার গুণগ্রাহী অগুনতি ব্যক্তি । কিন্তু তাই বলে ভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে কেউ নীরব থাকবেন না । বরাকবঙ্গ মনে করে, অসমিয়া এবং বাঙালি জনগোষ্ঠী সময়ের দাবি মেনে নিয়ে একে অন্যের পাশে থেকে  অর্জিত অধিকার বলে আপন ভাষা সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের কাজ  করে যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker