Barak UpdatesHappeningsBreaking News

বরাক এডুকেশন সোসাইটির স্মারক সম্মাননা তৈমুর রাজা চৌধুরীকে, সংবর্ধিত আরও ৪ গুণী

ওয়েটুবরাক, ৭ অক্টোবর : নারী জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন বেগম রোকেয়া। তাঁকে কেবল মুসলিম বিদুষী মহিলা হিসেবে কখনও খন্ডিত করা হয়নি। বরাক এডুকেশন সোসাইটির ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে রবিবার আয়োজিত বেগম রোকেয়া স্মারক সম্মাননা অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা দিতে গিয়ে এসব বলেন শিলচরের বর্ষীয়ান আইনজীবী, লেখক ও ইতিহাস গবেষক ইমাদ উদ্দিন বুলবুল । এদিন ইলোরা হেরিটেজের কনফারেন্স হলে বেগম রোকেয়া স্মারক সম্মাননা প্রদান সহ একই অনুষ্ঠানে চার গুণী ব্যক্তিকে সম্মান জানানো হয়।
তার আগে স্মারক বক্তৃতায় বুলবুল বলেন, ১৯৯৮ সালে প্রথম শিলচরে বেগম রোকেয়া পরিষদ গঠন করা হয়। যে সংগঠনের সভাপতি পদে ছিলেন তৈমুর রাজা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন তিনি নিজেই।তিনি তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে বেগম রোকেয়া মহিলাদের যেভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা এখনো সাকার হয়নি বলে মন্তব্য করেন। এক জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন চা বাগিচায় কর্মরত মহিলাদের কথা। বলেন, চা বাগানের মহিলারা অবশ্যই কাজ করেন, সে স্বীকৃতি পেয়েছেন তারা, কিন্তু অধিকারের চাবিকাঠি পুরুষদের হাতেই রয়ে গিয়েছে, যে অধিকারের পরিসর চেয়েছিলেন রোকেয়া, তা আর হয়ে আর উঠেনি বলে খেদ ব্যক্ত করেন ইমাদ উদ্দিন বুলবুল। তবে আশাহত হননি, এর উত্তরণ দেখছেন বেগম রোকেয়া নিয়ে গবেষণা করা এই অঞ্চলের মহিলা ড. তনুশ্রী ঘোষ, ড. সীমা ঘোষ, ড. মমতাজ বেগম, ড. আনোয়ারা বেগম মজুমদারের মতো মহিলাদের মধ্যে।
বিশেষ অতিথির ভাষণে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পুটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপিকা ড. সাহিন আরা বলেন, একজন শিক্ষিত মহিলা মানেই তার পরবর্তী প্রজন্মের অনন্য উন্নত রূপ। এবিষয়ে কোন দ্বিমত নেই। তিনি বর্তমান যুব সমাজকে কর্মমুখী করে তোলার উপর জোর দেন। বলেন, মেধার অভাব নেই আমাদের, কিন্তু যুবারা কর্মমুখী নন। সফট স্কিলের অনেক বিস্তৃত পরিসর রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও বৈদেশিক ভাষার অধ্যক্ষ ড৹ দিব্যেন্দু দাস অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বলেন, নারীদের পরিসর আগে সঙ্কুচিত ছিল, আজও আছে। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন ৩৩ শতাংশ হবে। অর্ধেক যখন নারী, তাহলে ৫০ শতাংশ হলে ক্ষতি কি। তিনি বেগম রোকেয়াকে দৈনিক যাপনের উত্তরসুরি হিসেবেও উল্লেখ করেন। বলেন বেগম রোকেয়া স্বনির্ভর ছিলেন এবং এরজন্য সাহস করে পরিসর তৈরির চেষ্টা করেছেন। এভাবে নারী জাতিকে এগোতে হবে। সোসাইটির সভাপতি তথা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সুনামধন্য অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন মণ্ডল তার স্বভাবজাত তাত্বিক ভাষনে বলেন, মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হলেও এই মানুষের দ্বারা বেষ্টিত সমাজ এগোতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
তাঁর সোজা কথা, ব্যক্তি এগোয়, সমাজ এগোয় না। বেগম রোকেয়া এগোতে পেরেছিলেন। কিন্তু তখনকার সময়ে বেগম রোকেয়ার কথা কেউ শোনেনি ভালো করে, এজন্য সমাজ এগোয়নি। তিনি বরাক এডুকেশন সোসাইটির কর্মকাণ্ডের এক সংক্ষিপ্ত পরিলেখ উপস্থাপন করেন এবং সোসাইটির ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনের শেষ অনুষ্ঠান আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে বলে জানান। এসব বক্তব্যের আগে  বরাক এডুকেশন সোসাইটির এবারের বেগম রোকেয়া স্মারক সম্মাননা মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিরা সম্মিলিতভাবে তুলে দেন সম্মাননা প্রাপক বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব তৈমুর রাজা চৌধুরীর হাতে। তার হাতে বেগম রোকেয়া নামাঙ্কিত সুদৃশ্য স্মারক, সম্মাননা পত্র, বিশেষ উত্তরীয় ও উপহার তুলে দেয়া হয়। সম্মান গ্রহণ করে অনুভব ব্যক্ত করতে গিয়ে তৈমুরবাবু অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বলেন, নারী শিক্ষার প্রসারে এখানকার মানুষ অনেক এগিয়ে।
এর এক উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি শিলচর পুরবোর্ড গঠনের আগে ১৮৮২ সালে গঠিত স্টেশন কমিটির গৃহীত বাজেটের এক নমুনা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, তখনকার সময়ে স্টেশন কমিটি মেয়েদের শিক্ষার জন্য ৬২ টাকা এবং স্কুল গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে ৪২ টাকা ধার্য করেছিল । এর নিরিখে বলা যায় মেয়েদের শিক্ষায় অবিভক্ত বরাক অনেক যত্নশীল ছিল। তিনি বেগম রোকেয়াকে শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র সমাজের নারী বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয় চার গুণীকে। এর মধ্যে রয়েছেন বরাকের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব তথা অবসরপ্রাপ্ত ক্রীড়া আধিকারিক বদর উদ্দিন মজুমদার, ওয়েস্ট শিলচর কলেজের লাইব্রেরিয়ান আলি হোসেন বড়ভুইয়া, তারিণীপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দিদারুল ইসলাম তালুকদার ও ইস্ট কাজিডহর হাইস্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক রাগিব হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে তাদের স্মারক , সম্মাননাপত্র ও উত্তরীয় আদান প্রদান করেন উপস্থিত অতিথিরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক লালমিয়া লস্কর, ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য পেশ করেন সহ সভাপতি জামিল আহমেদ বড়ভুইয়া। সব শেষে, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি শিহাব উদ্দিন আহমদ, এইচ এস ইউ এল ফাউন্ডেশনের সচিব মিলন উদ্দিন লস্কর, শিক্ষাবিদ মকব্বির আলি বড়ভুইয়াকে বিশেষভাবে সম্মানিত করে আয়োজক সোসাইটি। তাদেরকে শুভেচ্ছা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করেন সোসাইটির উপদেষ্টা তথা সোনাই মাধব চন্দ্র দাস কলেজের অধ্যক্ষ ড৹ বাহারুল ইসলাম লস্কর সহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, এদিন তৈমুর চৌধুরীর মানপত্র পাঠ করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন। চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন আইনজীবী মাহমুদ হাসান মজুমদার। চার গুণীদের পরিচিতি তুলে ধরেন সোসাইটির কেন্দ্রীয় সংযোজক ড৹ আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মি আর্ট বিভাগের অধ্যাপক পিন্টু সাহা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker