Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking NewsFeature Story
বরাক উপত্যকার শারদ পত্রিকা : নতুন অনুষ্ঠান বরাকবঙ্গের
October 9, 2024
ওয়েটুবরাক, ৮ অক্টোবর : প্রতিবছর শারদ উৎসবের সময়ে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকাশিত হয় লিটল ম্যাগাজিনগুলোর শারদ সংখ্যা। অনেক শ্রম ও মেধার সমন্বয়ে এই নান্দনিক প্রয়াস বর্ণময় উৎসবের আরও এক প্রাণবন্ত দিক । উপত্যকার লিটিল ম্যাগ আন্দোলনের এই ধারাকে তুলে ধরার জন্য এগিয়ে এলো বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। সংগঠনের সাহিত্যচর্চার ধারায় নবতম সংযোজন ঘটিয়ে শিলচর বঙ্গভবনে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি। উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তের সাহিত্য পত্রিকাগুলোর সম্পাদক , সহযোগীরা সম্মেলনের আহবানে হাজির হয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। বরাকবঙ্গের নেতৃবৃন্দ তাদের সম্মানিত করার পর সম্পাদকরা তাদের উদ্যম , পরিকল্পনা ও অনুভব একে একে তুলে ধরেন।
সদ্যপ্রয়াত কবি বিজয় কুমার ভট্টাচার্যের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রথম পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুদীপ্ত দেব রায়। এরপর মৌটুসী বিশ্বাস কবি বিজয় কুমার ভট্টাচার্যের “উত্তরাধিকার” কবিতাটি পাঠ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দীপক সেনগুপ্ত তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অতন্দ্র যুগের কবিদের কথা উল্লেখ বলেন, কবির কাছে কবিতা নিজেই একটি অস্ত্র । সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বিজয় কুমার ভট্টাচার্য। তাঁর কবিতার একদিন সঠিক মূল্যায়ন হবে বলে তিনি আশা পোষণ করেন।
দ্বিতীয় পর্বে শারদীয় পত্রিকার আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্যের শিল্পী বাপী রায়, হাসনা আরা শেলী, , নিবেদিতা সেনগুপ্ত, সঞ্জয় দেব লস্কর ও তাপসী দত্ত। অনুষ্ঠানে মৃদুলা ভট্টাচার্য সম্পাদিত “সৃজনী” পত্রিকার পূজা সংখ্যা উন্মোচিত হয়। উন্মোচন করেন কবি আশুতোষ দাস এবং হাসনা আরা শেলী।
এরপর ‘সাহিত্য অঙ্গনে বরাক উপত্যকার শারদীয় পত্রিকা ‘ শীর্ষক অনুষ্ঠানে কাছাড় করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির জেলা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সাহিত্য ও লিটল ম্যাগাজিন পত্রিকার সম্পাদকদের উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে উপস্থিত সাহিত্য অনুরাগীদের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এতে অংশগ্রহণকারী লিটল ম্যাগাজিন এবং শারদীয় পত্রিকা সম্পাদকরা হলেন –
স্নিগ্ধা চট্টোপাধ্যায় বিশ্বাস – “উত্তীয়” , আশুতোষ দাস- “বেলাভূমি”, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়-“সাঁকো” , আশিস রঞ্জন নাথ – “প্রবাহ “, মৃদুলা ভট্টাচার্য – “সৃজনী” ,হরিসভা” দুর্গা পূজা কমিটি সম্পাদক – চঞ্চল ভট্টাচার্য, “শিবালিক লিপি”- সুদীপ্ত দেব রায়,
জিতেন্দ্র নাথ – “আলো হাওয়া পত্রিকা” , অমিত রঞ্জন দেব এবং নূরুল হোসেন মজুমদার – “হাইলাকান্দি”,
স্নিগ্ধা নাথ – “আমাদের সমকাল” , শৈলেন দাস- “প্রতাপ” , সুজিত দাস – “প্রতিস্রোত”, প্রণব দাস- “সাহিত্য সম্ভার”, জয়শ্রী ভূষণ – “অস্তিত্ব”, নিলাদ্রী ভট্টাচার্য – “শব্দ পাতার নৌকো”। কৃষ্ণ জ্যোতি দেব – “অমলতাস”। চন্দ্রিমা দত্ত-” মানবী”, সত্যজিৎ নাথ – রীতুপর্ণ । মৌপিয়া চৌধুরী- “পিয়াসু”, চান্দ্রেয়ী দেব- “ত্রয়ী”। নারায়ন মোদক -” তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য”,
নীলাক্ষ চৌধুরী – “অনিবার্য”, কস্তুরী হোম চৌধুরী – “আম্রপালি”, রাজেশ শর্মা, আশু চৌধুরী – “আউল”,
তানিয়া লস্কর – “বৈচিত্র্য” , মঞ্জুরি হীরা মণি রায়- “বরাক নন্দিনী”।
অনুষ্ঠানে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বরাকের লিটল ম্যাগাজিন ও শারদ পত্রিকাগুলোর কুশীলবদের কুর্নিশ জানিয়ে বলেন, সম্মেলন এই অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা এবং তার অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করে চলেছে । এই সময়কালে বরাকবঙ্গ অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে সাহিত্যের নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে আসছে । সংগঠনের অধিবেশনগুলোর সাহিত্য আসর সাহিত্য চর্চার জমজমাট কার্যক্রম, যেখানে উপত্যকার সব প্রান্তের লেখকরা উপস্থিত থেকে নিজেদের সৃষ্টিকর্মকে তুলে ধরেন। পাশাপাশি বিশ্ব কবিতা দিবস , সৈয়দ মুস্তফা আলি সাহিত্য উৎসব ইত্যাদি কর্মসূচিও মূলত সাহিত্যেরই অনুষ্ঠান। আগামী দিনে লিটিল ম্যাগ নিয়ে আরও অনুষ্ঠান হবে উপত্যকার অন্যান্য প্রান্তে।
সন্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেব লস্কর শারদ উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, উৎসব সবার , উৎসব হোক এক মিলনের । উৎসবে শারদীয় পত্রিকা উন্মোচন হলো বাঙালির রেনেসাঁ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সন্মেলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইমাদ উদ্দীন বুলবুল, গৌরী দত্ত বিশ্বাস ,স্বপ্না ভট্টাচার্য , ব্রজেশ্বর সিংহ , আশুতোষ দাস , চন্দ্রিমা দত্ত,,আশিস রঞ্জন নাথ প্রমুখ ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শরতের সঙ্গীত পরিবেশন নীলাক্ষ চৌধুরী। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা সাহিত্য সম্পাদক শান্তশ্রী সোম এবং লেখিকা মঞ্জুরি হীরা মণি রায়।