Barak UpdatesHappeningsBreaking News
বঙ্গভাষী অসমিয়া : মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর, বলল বিডিএফ
ওয়েটুবরাক, ১ জুনঃ রাজ্যের বাঙালিদের প্রকৃত উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে মুখ্যমন্ত্রীকে আহ্বান জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। সম্প্রতি শিলাপাথারে বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী অসমিয়া সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশে রাজ্যের বাঙালিদের অবদানের কথা বিশদে স্মরণ করেছেন । এর জন্য ফ্রন্ট মুখ্যমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানায়। কিন্তু সেই সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাঙালিদের বঙ্গভাষী অসমিয়া পরিচয়ে গর্ববোধ করার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়। তিনি বলেন, ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে এমন উদাহরণ নেই। পশ্চিমবঙ্গে যে সব অসমিয়ারা থাকেন তাদের কি অসমিয়াভাষী বাঙালি কিংবা তামিলনাড়ুতে বসবাসকারীদের অসমিয়াভাষী তামিল বলা হবে? মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার আহ্বানকে এক হাস্যকর বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। দত্তরায়ের কথায়, অন্যান্য রাজ্যের মতোই এই রাজ্যের বাঙালিরা আসামবাসী বাঙালি পরিচয় নিয়ে থাকতেই স্বচ্ছন্দ । যদি এই ব্যাপারে অন্য কোনও রাজ্যে সমস্যা না হয় তবে শুধু আসামেই কেন বাঙালিদের অসমিয়া পরিচয় দিতে হবে ? জোর করে তাই পরিচিতিকে বদলানোর চেষ্টা না করাই উচিত বলে এদিন মন্তব্য করেন বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক।
তিনি বলেন, রাজ্যের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালিদের বারবার বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক যে ৫০,০০০ নিয়োগ হয়েছে জনসংখ্যার অনুপাতে তাতে অন্তত ১৫,০০০ বাঙালি প্রার্থীর নিযুক্তি পাবার কথা। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা এর ধারে কাছেও নেই।
সেদিনের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বাঙালি হিন্দুরা নিপীড়িত হলে আসামে আসতে পারেন এবং তিনি রাজ্যের অসমিয়াভাষীদের তাঁদের স্বাগত জানাতে ও আপন করে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রদীপবাবুর প্রশ্ন, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় গোয়ালপাড়ায় যে বিশাল ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হল সেটা কার জন্য ? এনআরসি তালিকায় যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে তাদের অর্ধেকের বেশি তো বাঙালি হিন্দু। এদের ব্যাপারে সরকার নীরব কেন ? উভয় সংসদে পাশ হয়ে রাস্ট্রপতির সাক্ষর হবার পরও গত পাঁচ বছর ধরে কেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চালু করা হচ্ছে না, যে বিলকে দেশভাগের শিকার বাঙালি হিন্দুদের রক্ষাকবচ বলে ব্যাপক প্রচার করেছিল বর্তমান সরকার ! আজো ডি নোটিশ জারি হয় বাঙালি, বিশেষতঃ বাঙালি হিন্দুদের নামে অথচ কিছুদিন আগে রাজ্যের গোর্খা জনগোষ্ঠীকে এর আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রদীপবাবুর প্রশ্ন, এই সবই কি বাঙালি হিন্দু প্রীতির নমুনা ?
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরও বলেন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় একের পর এক বাঙালি স্কুল হয় বন্ধ হচ্ছে, নয় অসমিয়া মাধ্যমে পরিবর্তিত করা হয়েছে। এখন রাজ্যের উচ্চপদে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব পাঁচ শতাংশও হবে না। অথচ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার আমলে একটা সময়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাস্ট্র সচিব, অর্থসচিব, গৌহাটি নগর এসপি, পল্টন বাজার থানার ওসি একসাথে সবাই বাঙালি ছিলেন।
সুন্দর বক্তব্যের পাশাপাশি বাঙালিদের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে ব্রতী হতে মুখ্যমন্ত্রী শর্মাকে তিনি আহ্বান জানান। বলেন, এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে রাজ্যের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।