Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
ফিরে এলো ইতিহাস, শিলচর উমেন্স কলেজে নির্মিত হলো ব্রাহ্মমন্দিরের স্মারক
ওয়েটুবরাক, ২১ নভেম্বর : শিলচরে ব্রাহ্মমন্দির গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছিল উমেন্স কলেজ। সেটা ১৯৬৮ সালের কথা। এর ৫৪ বছর পরে একই জায়গায় উদ্বোধন হলো সেই ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিরূপ বা স্মারক। ২০১৫ সালে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলা বিভাগের শিক্ষক নির্মল রায় ও গৌতম দত্তের নেতৃত্বে তাঁদের ছাত্রছাত্রীরা অনেক আগেই তার নির্মাণকাজও সেরে নেন। উমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ মনোজকুমার পাল আজ (সোমবার) জানান, নানা কারণে এতদিন এর উদ্বোধন হতে পারেনি। কিন্তু তাঁর চাকরির মেয়াদ আর মাত্র নয়দিন। তাই আর দেরি করেননি। পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি ড. শঙ্কর ভট্টাচার্য শারীরিক অসুস্থতার দরুন উপস্থিত হতে পারেননি৷ তবে মঞ্চে ছিলেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়কার সভাপতি সমরকান্তি রায়চৌধুরী৷ উদ্বোধন করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাজীবমোহন পন্থ৷ ছিলেন প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের প্রাক্তন সম্পাদক সমিতা দাস এবং রাজা রামমোহন রায়ের বংশধর দেবদীপ রায়৷
শিলচরে ব্রাহ্মসমাজ গড়ে উঠেছিল ১৮৭৯ সালে৷ ১৮৮৩ সালে তারা মন্দির তৈরির জন্য সরকারের কাছ থেকে জমি পায়৷ ১৮৯৭ সালে ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা হয়৷ শহরের বিদগ্ধ ব্যক্তিরা নিয়মিত সেখানে গিয়ে উপাসনা করতেন৷ কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি৷ কয়েক বছরের মধ্যে তা পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিণত হয়৷ বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত সস্ত্রীক শিলচরে চলে এলে কিছুদিন মন্দির খোলা হয়েছিল৷ উল্লাসকরকে সেই মন্দিরেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল৷
এরই মধ্যে ১৯৬৩ সালে শিলচরে উমেনস কলেজের জন্ম হয়৷ শুরুতে নর্মাল স্কুলে এর ক্লাশ হতো৷ পরে ব্রাহ্মসমাজ পুরো জমি উমেন্স কলেজকে দান করে৷ ১৯৬৮ সালে মন্দির ভেঙে শুরু হয়েছিল কলেজের নির্মাণকাজ৷
কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. দেবশ্রী দত্ত আজ এই সব তথ্য তুলে ধরে বলেন, শিলচরে ব্রাহ্মমন্দির নির্মাণের ১২৫ বছর পরে এর প্রতিরূপ নির্মাণ হলো৷ তাতে শিলচরের সামাজিক ইতিহাসে দায়বদ্ধতারই প্রকাশ ঘটল৷
সমিতা দাস বলেন, ব্রাহ্মসমাজকে আজ যখন আমরা ভুলতে বসেছি, তখন শিলচর ব্রাহ্মসমাজকে নতুন করে মনে করিয়ে দিল৷ যে পথ দেখিয়েছে উমেন্স কলেজ, এ এক অনুপ্রেরণা৷ তিনি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের কয়েকটি বই উমেন্স কলেজে রাখার জন্য অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেন৷ দেবদীপ রায় প্রদান করলেন রাজা রামমোহন রায়ের মুদ্রিত বংশলতিকা৷
শিলচরের ব্রাহ্মমন্দির দেখা শহরের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব প্রশান্ত বসু আক্ষেপ ব্যক্ত করেন, অসাম্প্রদায়িক মত ভুলে এখন সাম্প্রদায়িকতাকেই ধার দেওয়া হচ্ছে৷ লোকগবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্যের কথায়, শিলচরে একের পর এক ঐতিহ্য বিলুপ্ত হচ্ছে৷ সে সময়ে ইতিহাস সংরক্ষণের এক প্রক্রিয়া আজ হলো৷
এ দিনের অনুষ্ঠানে তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্মমন্দিরে গাওয়া হতো, এমন একটি সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী৷ ধন্যবাদ সূচক বক্তৃতা করেন শর্বানী বিশ্বাস৷ সঞ্চালনায় ছিলেন মঞ্জুরি ভট্টাচার্য৷