NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
প্রত্যন্ত লাংলাছড়ায় কলা-শিবিরে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা বলল, ওই সব তো শিখতেই পারি!
ওয়েটুবরাক, ১৩ জুলাই : পাঁচ দিনের কলা-শিবিরে মেতে উঠল কাছাড় জেলার লাংলাছড়ার আদিবাসী ছেলেমেয়েরা৷ কখনও মাটির কাজ, কখনও সঙ্গীত-নৃত্য, যোগাসন, পরিবেশ আলোচনা৷ ফাঁকে হাতে তুলে নেয় রং-তুলিও৷ ‘উত্তর পূর্বাঞ্চল সেন্টার ফর আর্ট এন্ড রিসার্চ’-এর সচিব নীলকান্ত দাস বললেন, কোথায় যে কোন প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে, কেউ বলতে পারেন না! উত্তর-পূর্বের শিশু-কিশোর প্রতিভাগুলি খুঁজে বের করার কাজেই নিয়োজিত নীলকান্ত, সুজন পাল-রা৷ তাঁদের কথায়, শুধু কেতাবী শিক্ষা নয়, স্কুল পড়ুয়াদের জন্য দরকার ইন্টিগ্রেটেড আর্ট এডুকেশনও৷
কিন্তু এই কাজ তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, অকপটে স্বীকার করেন তাঁরা৷ বলেন, একে নতুন সংগঠন৷ এর উপর, সংগঠনের কর্মকর্তারা সবাই ত্রিপুরার বাসিন্দা৷ তাদের পক্ষে এখনই উত্তর-পূর্ব জুড়ে কাজ করা সম্ভব নয়৷ একে সম্ভব করার জন্য হাত বাড়িয়েছে কাছাড়ের ‘মাটি’৷ এরা মূলত আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল আর্টস পড়ুয়াদের নিয়ে কাজ করে৷ লাংলাছড়া শিবিরে পাঁচ দিন ধরে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন তাঁদের সদস্য গৌতম দাস, প্রসেনজিৎ সাহা, নিকিতা নাথ, গৌতমী কর ও বিকাশ দেব৷ সবাই আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের৷ কেউ ডিগ্রি করছেন, কেউ মাস্টারস৷ প্রসেনজিৎ করছে পিএইচডি৷ কিন্তু নেতৃত্বে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে পিএইচডি রূপম চক্রবর্তী ও বরোদা থেকে পারফরমিং আর্টে ডিপ্লোমা হোল্ডার অমিতাভ দেব৷ ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চল সেন্টার ফর আর্ট এন্ড রিসার্চ’ এবং ‘মাটি’ যুক্ত হয়েই গত ৫ জুন থেকে ভরাখাইয়ে করেছিল তাদের প্রথম যৌথ শিবির ‘কুড়ি’৷ সেখানে তাদের যোগাযোগ ঘটে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সোসাইটির সঙ্গে৷ গুণাকর দাস, সুপ্রদীপ দত্তরায়, অসীম চৌধুরীরা প্রস্তাব দেন, এই ধরনের একটি শিবির লাংলাছড়ায় করার জন্য৷
কাছাড় জেলার কুম্ভা বাগানের ভেতর দিয়ে কিলোমিটার দশেক গেলে লাংলাছড়া৷ চা বাগান জনগোষ্ঠীরই বসবাস৷ এক সময় তাদের সন্তানদের স্কুলের সঙ্গে পরিচয় ছিল না৷ পরবর্তী সময়ে অবশ্য প্রাথমিক পাঠের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন অভিভাবকরা৷ শুরু হয় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো৷ কিন্তু স্কুলের পড়ায় যে শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না৷ কারণ বাড়িঘরে তাদের নিয়ে বসার কেউ নেই৷ বিষয়টি টের পায় রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সোসাইটি৷ সেখানে তারা গড়ে তোলে শ্রীমা সারদা কোচিং সেন্টার৷ তাদের অবশ্য এই ধরনের কোচিং সেন্টার আরও রয়েছে৷
লাংলাছড়ায় কলা-শিবির উদ্বোধন হয়েছিল গত ১৫ জুন৷ প্রচণ্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে প্রায় ৮০টি শিশু-কিশোর নিয়মিত উপস্থিত হয় ‘ইন্টিগ্রেটেড আর্ট’ শিখতে৷ নয়জনের প্রশিক্ষক দলও চরম প্রতিকূল পরিবেশে কলা-র টানে বাড়িঘর ছেড়ে পাঁচ দিনের জন্য প্রত্যন্ত লাংলাছড়ায় চলে যান৷ থাকেনও সেখানে৷ শুধু কী আর শিশুদের শেখালেন ! সময় কাটান অভিভাবকদের সঙ্গেও৷ প্রতি সন্ধ্যায় বসেছে সঙ্গীতের আসর৷ ঝুমুর, বাউল, কীর্তন এলাকার মানুষ যেমনটা পছন্দ করেন৷ চলত ঘন্টা দুয়েক৷ যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় ছিল রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সোসাইটি৷
সুপ্রদীপ দত্তরায় জানান, উদীচি সহ বিভিন্ন সংস্থা নানাভাবে তাদের শিবির পরিচালনায় সহায়তা করেছে৷ ‘মাটি’র কর্মকর্তা অমিতাভ দেব বললেন, দুটি শিবিরেই আদিবাসী বা চা জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোরদের আগ্রহ তাদের কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ আশা করছেন, আগামী দিনে ‘উত্তর-পূর্ব সেন্টার ফর আর্টস এন্ড রিসার্চ’ ত্রিপুরা বা অন্যত্র শিবির করলে তাঁরাও সেখানে যাবেন৷ প্রশিক্ষার্থীরা অবশ্য ৫ দিনের শিবিরে যারপরনাই আনন্দিত৷ মাটির ঢেলা ধরিয়ে এক-দুইবার দেখিয়ে দিতেই তৈরি করে নেয় আম, কাপ-প্লেট, গাড়ি, কলা, পেনস্ট্যান্ড ইত্যাদি৷ এক কিশোরী কাপ-প্লেটে আবার বিস্কুটও যোগ করেছে৷ এক ছাত্র তৈরি করেছে সুন্দর ডিজাইনের মোবাইল৷ ঝুমুর গানের সুর একটু ধরিয়ে দিতেই সবাই মিলে সমস্বরে গেয়ে ওঠে, “ও তুই লাল পাহাড়ির দেশে যা/ রাঙামাটির দেশে যা হেথাকে তুকে মানাইছে নাই রে/ ইক্কেবারেই মানাইছে নাই রে…’