Barak UpdatesBreaking NewsFeature Story

নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে গার্ল আইকন শিলচরের অর্চনা

১৫ অক্টোবরঃ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পুলিশ লাগিয়ে নিজের বিয়ে ঠেকিয়েছিল সে। সাত বছর পর স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজ্য পর্যায়ের সরকারি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি শিলচরের অর্চনা বৈষ্ণবকে ‘গার্ল আইকন’ হিসেবে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তার হাতে তুলে দেন শংসাপত্র ও সংবর্ধনা স্মারক।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিয়ের কথা শুরু হয় অর্চনার। বার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরোতেই কনে-দেখার দিনক্ষণ চূড়ান্ত। আপত্তি জানিয়ে লাভ হয়নি। বরং বকাঝকাই শুনতে হয়েছে বাবা-মার কাছে। কিন্তু তার যে পড়ার ইচ্ছে। দিদিমণি হতে চায়। উপায় না পেয়ে পাত্রপক্ষ আসার ঠিক আগে পাড়ার জ্যোতিকেন্দ্রে দৌড়য়। দিদিমণি ছন্দা নাথ তখন ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছিলেন। অর্চনা তাঁকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। জানায়, কিছুক্ষণ পরই ছেলের বাড়ির মানুষ আসছে।

কী করা, বুঝে উঠতে না পারছিলেন না ছন্দাদেবীও। কথা বলেন সর্বশিক্ষা অভিযানের আরবান কো-অর্ডিনেটর গৌতম দাসের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ে ঠেকানো কী চাট্টিখানি কথা! গৌতমবাবু বিষয়টি (তখনকার) অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবাশিস চক্রবর্তীর কানে দেন। শুনেই চটে লাল দেবাশিসবাবু। পুলিশ পাঠান অর্চনার বাড়িতে। হতভম্ব হয়ে পড়েন মহিম বৈষ্ণব, অঞ্জনা বৈষ্ণব।

মহিমবাবু ঠেলা চালান। অঞ্জনাদেবী মানুষের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। পুলিশ জানিয়ে দেয়, এখনই অর্চনার  বিয়ে হলে সবাইকে জেলে পোরা হবে। খবর চলে যায় ছেলের বাড়িতেও। এরা আর ওমুখো হননি। সে থেকে অর্চনার পড়াশোনার যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করেন গৌতম দাস ও ছন্দা নাথ। মাধ্যমিক পাশ করলে তারাই তাকে ভর্তি করিয়ে দেন শিলচর সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আগামী বছর সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শিলচরের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে স্মারক গ্রহণের পরে অর্চনা জানায়, কনে দেখার সেই দিনটির কথাই আজ বেশি মনে পড়ছে। তখন মা-বাবা তার ওপর খুব রাগ করেছিলেন। এখন আর তাঁরা বিয়ের কথা বলেন না। বরং ভালো করে পড়তেই পরামর্শ দেন।

চার ভাইবোনের মধ্যে অর্চনাই বড়। তাকে দেখে ছোটরাও পড়াশোনা করতে চায়। বড় মানুষ হতে চায়। মহিমবাবু তিনবছর ধরে মুখগহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্ত। এর মধ্যেই ঠেলা চালান। তবু তিনি চান, অর্চনার স্বপ্ন পূরণ হোক। ভাল করে পড়াশোনা করে সে যেন দিদিমণি হতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী সেদিন মোট চারজনকে গার্ল আইকন ঘোষণা করেন। অর্চনা ছাড়া অন্য তিনজন হল শর্মিলা দাস, আপিমণি লস্কর ও আনোয়ারা বেগম।

শর্মিলার মায়ের মানসিক সমস্যা। বাবা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। মামার বাড়িতে থেকে পড়ছিল সে। একসময় তারা তাকে তাড়িয়ে দেয়। পরে পরিচারিকা হিসেবে কাজ করে লেটার নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করে। এখন বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছে। আপিমণি, আনোয়ারার আইকন হওয়ার পেছনেও এ ধরনের সার্থকতার গল্প রয়েছে। তবু অর্চনা যেন তাদেরও আইকন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker