Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking News

নানা অনুষ্ঠানে পূবালীর ৫২ তম বর্ষবরণ উৎসব

ওয়েটুবরাক, ১৭ জানুয়ারি : পূবালী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্রীড়া সংস্থার ৫২ তম বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে গত ৬ এবং ৭ জানুয়ারি শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ৬ তারিখ প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল আবৃত্তি, যেমন খুশি সাজো এবং সমবেত সঙ্গীত । প্রতিটি প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগ ছিল ক,খ,গ। তবে এবারে আবৃত্তি প্রতিযোগিতাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল কচিকাঁচাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ।তাদের জন্য এবছরই প্রথম অঙ্কুর বিভাগ শুরু করা হয়েছে। সকাল ৯-৩০ এ আবৃত্তি প্রতিযোগিতা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ১১-৩০ এ ছিল সমবেত সঙ্গীত প্রতিযোগিতা এবং সবশেষে ছিল যেমন খুশি প্রতিযোগিতা। এতে ছিল চারটি বিভাগ অঙ্কুর, ক, খ এবং গ।
৭ই জানুয়ারি সকাল ৯-৩০মি: বসে আঁকো প্রতিযোগিতা দিয়ে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং বিকেল ৩-৩০মি: ছিল লোকনৃত্য প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা ৫-৩০ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি শিবব্রত দত্ত, সাধারণ সম্পাদক অতনু ভট্টাচার্য, সহ-সভাপতি (সাংস্কৃতিক) তথা পূবালী সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি অজয় চক্রবর্তী, প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপকুমার পাল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সম্পাদক (ক্রীড়া) অরিজিৎ গুপ্ত, রেফারি সচিব সমর রায়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী জয় বরদিয়া, সংস্কৃতিকর্মী মনোজ দেব এবং পূবালীর বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যগণ। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রয়াত কমলেশ বিশ্বাস ও প্রয়াত শীলা বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চ তাঁদের নামেই উৎসর্গ করা হয়েছে এ বার৷

স্বাগত ভাষণ দেন সংস্থার সভাপতি সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় পূবালী সংস্থার শিল্পী সুস্মিতা চক্রবর্তীর নৃত্যের মাধ্যমে। সংস্থার সদস্য-সদস্যাগণ দুটি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন গায়ত্রী ঘোষ, ড: মৌমিতা নাথ ও কল্যাণী দাম।

পূবালীর এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে নিজেদের কৃতিত্ব তুলে ধরার জন্য ১০ জন গণমান্য ব্যক্তিকে ঝুমুর রায় স্মৃতি সম্মাননা প্রদান করা হয়। সেই ব্যক্তিবর্গ হলেন-
১। ডা: কুমার কান্তি দাশ (বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজকর্মী) ৷ তাঁকে সম্বর্ধনা দেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার রেফারি সচিব সমর রায় এবং বিশিষ্ট সমাজ সেবী তথা পরিবেশ প্রেমী অরিজিৎ গুপ্ত সঙ্গে ছিলেন পূবালীর সদস্য ও সদস্যাগণ ।
২। বিধান চৌধুরী ( বর্ষীয়ান নাট্যাভিনেতা)৷ তাঁকে সম্বর্ধনা দেন শ্রী যুক্ত সমর রায় এবং নাট্যশিল্পী ও নাট্যাভিনেত্রী মঞ্জুশ্রী চৌধুরী তৎসঙ্গে পূবালীর সদস্য সদস্যাগণ।
৩। অমরেন্দ্র চক্রবর্তী( বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী) তাঁকে সম্বর্ধনা দেন শ্রীযুক্ত সমর রায়,সঙ্গীত শিল্পী শ্রীমতি গায়ত্রী ঘোষ ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ।
৪।অমিত শিকিদার (বরাকের বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী) তাঁকে সম্বর্ধনা দেন শ্রীযুক্ত সমর রায় এবং শিক্ষিকা তথা বাচিক শিল্পী শ্রীমতি অনুরাধা সেনগুপ্ত ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ।
৫।দেবোতোষ নাথ(নৃত্যশিল্পী তথা নৃত্যগুরু) তাঁকে সম্বর্ধনা দেন শ্রীযুক্ত সমর রায় এবং নৃত্যশিল্পী সুস্মিতা চক্রবর্তী ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ।
৬।কৃষ্ণ বাহাদুর ছেত্রী (ফুটবল, হকি,ভলিবল প্রায় সব খেলায় সমান দক্ষ ব্যক্তি) তাঁকে সম্বর্ধনা দেন শ্রীযুক্ত সমর রায় এবং বিশিষ্ট খেলোয়াড় তথা প্রশিক্ষক নির্মাল্য নাথ ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ।
৭। উত্তম সাহা (বিশিষ্ট সাংবাদিক) তাঁকে সম্বর্ধনা দেন শ্রীযুক্ত সমর রায় এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত শ্রীমতি বাণী কর্মকার ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ
৮।পার্থ শীল(বরাকের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী) তাঁকে সম্বর্ধনা দেন শ্রীযুক্ত সমর রায় এবং চিত্রশিল্পী দেবরাজ চক্রবর্তী ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ।
৯।দিবিজা পাল( অনুর্ধ ১১,জাতীয় টেবিল টেনিস খেলোয়াড়) তাকে সম্বর্ধনা দেন শ্রীযুক্ত সমর রায় এবং তারই প্রশিক্ষক পার্থ দেব ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ।
১০।স্বর্গীয় সুদর্শন গুপ্ত (অধ্যাপক, শিল্পী তথা বরাকের প্রথম ডিজিটাল নিউজ চ্যানেল “ওয়ে টু বরাক”এর কর্ণধার ও বিশিষ্ট সাংবাদিক) উনার প্রতি সম্মাননা উনার স্ত্রী মৌমিতা গুপ্তের হাতে তুলে দেন শ্রীযুক্ত সমর রায় এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রশাসনিক সচিব তথা বি.টি.এন.নিউজ চ্যানেলের সংবাদ পাঠক ও গত কুড়ি বছর ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত দেবাশীষ সোম ও সংস্থার সদস্য সদস্যাগণ।
গুণীজন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের পর ছিল অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণ পূবালীর শিশু শিল্পীদের দ্বারা অভিনীত নাটক “শূল্য চিকিৎসা”।এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছে যারা তারা হল-
রাজা-হার্দিক বৈদ্য, মন্ত্রী- দেবাঞ্জলি নাথ, কোতোয়াল- অমৃতাশ্মি বর্মণ, গুরুদেব-ঐশী জ্যোতি, শিষ্য-শুভঙ্গ গুপ্ত, গেরস্থ-পার্থিব নাথ, রাজমিস্ত্রী- উৎকর্ষ ভট্টাচার্য, মাটি কাটার লোক-উদ্দীপন ভট্টাচার্য, কুমোর- দেবাংশি নাথ, কাঠুরে(নেপথ্যে)- প্রত্যাশা কল্যাণ দে, জল্লাদ(নেপথ্যে)নবারুণ চক্রবর্তী।
নাটকের রূপসজ্জায় ছিলেন দিলীপ ভট্টাচার্য, আবহ সঙ্গীতে- অজয় বর্মণ,আলোক সজ্জায়- বিনায়ক চৌধুরী ,সহায়ক-দীপঙ্কর দেব, মঞ্চসজ্জায়- নিশীথ চক্রবর্তী, নৃত্য পরিচালনায়-দেবশ্রী ভট্টাচার্য, সঙ্গীত পরিচালনায়-তনুশ্রী ভট্টাচার্য। নাটকটির সার্বিক পরিচালনা এবং নির্দেশনায় ছিলেন শান্তনু সেনগুপ্ত। নাটকে প্রতিটি শিশুই নজরকাড়া অভিনয় করে এবং দর্শক শ্রোতাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়।
নাটকের পর ছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। আবৃত্তি প্রতিযোগিতার “অঙ্কুর” বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হয়েছে যথাক্রমে প্রদত্তা শীল,কিমিশা সোম এবং বিদিশা কর ।এছাড়া বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে নৈতিক দে এবং মান্যতা নাথ।”ক”বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হয়েছে বিশালাক্ষী নাথ, আদ্ভিকা দাশ,প্রিয়াংক নাথ।
“খ”বিভাগে ১ম সাগ্নিক দেব পুরকায়স্থ,২য় শতাক্ষী দেবপুরকায়স্থ, ৩য় অন্বেষা সেনগুপ্ত। “গ” বিভাগে ১ম দেবাঞ্জলী নাথ এবং ২য় নিহারীকা দে ।
যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতায় “অঙ্কুর” বিভাগে প্রথম পুরস্কার দেবাংশ চক্রবর্তী,দ্বিতীয় প্রদত্তা শীল এবং তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে অভিজ্ঞান চক্রবর্তী ও জাগ্রতী ভট্টাচার্য, বিশেষ পুরস্কার লাভ করে অহনাশ্রী চক্রবর্তী এবং বিহান জৈন। ” ক” বিভাগে প্রথম ঈশানী দাশগুপ্ত এবং দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করে দিব্য চক্রবর্তী।
বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় অঙ্কুর বিভাগে প্রথম আদিত্য পাশোয়ান, দ্বিতীয় দেবাংশ চক্রবর্তী এবং অর্ঘ্য সিনহা তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে ।”ক” বিভাগে প্রথম পিনাক কংসবণিক,দ্বিতীয় শুভঙ্গি মজুমদার,তৃতীয় পার্থিব নাথ ।”খ” বিভাগে তনুশ্রী দাস,দ্বিতীয় উদ্দীপন ভট্টাচার্য, তৃতীয় আয়ুষ দাস ,”গ”বিভাগে প্রথম স্নেহা কংসবণিক ,দ্বিতীয় অনুপ কংসবণিক এবং তৃতীয়া পুরস্কার লাভ করে গৌরব সিনহা।
সমবেত সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় “খ”বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি লাভ করে সুরসংগ ,সোনাই রোড,এবং রানার্স আপ ট্রফি লাভ করে সরস্বতী বিদ্যানিকেতন।
“গ” বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি লাভ করে মনমোহন মজুমদার বালিকা বিদ্যালয়।
সমবেত লোকনৃত্য প্রতিযোগিতার জুনিয়র গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় সুরশ্রী সঙ্গীত একাডেমী এবং রানার্স আপ নৃত্যালয়ম।
সিনিয়র গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় গৌড়িয় নৃত্যকলা ভারতী এবং রানার্স আপ হয় দিশান ডান্স একাডেমী।এছাড়াও শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগির পুরস্কার লাভ করে প্রদত্তা শীল এবং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগির পুরস্কার লাভ করে দেবাংশ চক্রবর্তী।কবিতা শুধু কবিতা ,দুধপাতিল প্রথম শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগি দল এবং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগি দলের পুরস্কার লাভ করে শিলচর কলেজিয়েট স্কুল।
পূবালীর ঐ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পূবালীর পক্ষ থেকে নিশীথ চক্রবর্তী,প্রণব কল্যাণ দে,অজয় বর্মন, সুপ্রিয় ভট্টাচার্য, শান্তুনু সেনগুপ্ত ,শ্যামল সেন,তপন রায়,অসিত চক্রবর্তী,প্রণব চৌধুরী,মঞ্জুশ্রী চৌধুরী,কিশোর বিশ্বাস, দীপক ধর,হিমাদ্রি শেখর দাস,অজয় চক্রবর্তী অভিরূপ চক্রবর্তী, নবারুণ চক্রবর্তী,সোমা চক্রবর্তী বর্মণ,ড: বনশ্রী নাথ,রূপালী বৈদ্য, মঞ্জুরী দেব পাল,সুশীল বণিক,সমর রায়,জন্মজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় ছিলেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক প্রণব কল্যাণ দে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker