Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story

দেখছিলাম, বাড়িতে সাপ ঢুকছে, সাপের বাচ্চারা জলে খেলছে, লিখেছেন মানস ভট্টাচার্য

বন্যার্তের ডায়েরি (তিন)

মানস ভট্টাচার্য
ভোরে ঘুম ভাঙলো। ঠাকুর প্রণাম এবং আনুষাঙ্গিক কাজ সেরে ব্যালকনিতে এলাম। ধীর গতিতে তখনও জল বাড়ছে। দাপট কিছুটা কমেছে। জীবনটা পুরো পাল্টে গেল। এই বিধ্বংসী মহা-বন্যা সবাইকে যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছে। প্রতি পদক্ষেপেই সংযমের সাথে সংগ্রাম। ধৈর্যের অগ্নিপরীক্ষা। সকালের চা খেয়েই সব সামনের ব্যালকনিতে কিংবা ছাদে, যদি নৌকা আসে। নৌকা ছাড়া এখন জীবন অচল।
সকালের টিফিন খাওয়া হলো। জল বাঁচাতে ওয়ান-টাইম প্লেটে। ফ্রিজ না থাকায় সবজির সাশ্রয় নিরর্থক। জলের চর্চায় আমরা ব্যস্ত, তখন গলিতে একটি নৌকা ঢুকল, এই প্রথম। ছোট ভাই আশিসের এমার্জেন্সি থাকায় সে এবং উল্টো দিকের বাসার এক ভদ্রলোক, ওরা দুজন নৌকায় ওঠে। গলিতে খুব কারেন্ট, তাই বেরনো কঠিন। উজানে যাওয়া তো। আমাদের জন্য এক প্যাকেট মোমবাতি আনতে বললাম। মোমবাতি নেই । বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা ফিরে এলো। জানলাম, মেইন রোডের উপরেও অনেক জল। শুধু কলেজ টিলা ভাসানো, আর সব জলের তলায়। মোমবাতির খুব ক্রাইসিস, ২০ টাকার প্যাকেট ৭০ টাকা দিয়ে এনেছে। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। আর নৌকার ভাড়া অস্বাভাবিক। যার কাছ থেকে যেমন খুশি চার্জ করছে। উপায় তো নেই যেতেই হবে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ফোনে কাউকেই আর পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো টাওয়ারই নেই। চার্জের ব্যাপারও রয়েছে, তাই, স্যুইচ্ অফ করে রেখে দিয়েছি।
সন্ধ্যা হয়ে গেল, মেডিটেশন সেরেই চা খেয়ে নিলাম। ত্রয়ী এই অবস্থাকে খুব সুন্দর ভাবে মেনে নিয়েছে। চা খাওয়া শেষ হলেই ঘর অন্ধকার করে আমরা বাইরে বসি। আশিস ওরাও। কতো কিছু ভেসে আসছে, এর শেষ নেই।  আমাদের গলি যেন জলের সবচেয়ে প্রিয় এবং সহজ পথ। ছোটোখাটো নদী হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে সাপ এবং সাপের বাচ্চারাও ভেসে আসছে। বাসায়ও ঢুকছে। আমাদের বাসায় সিঁড়ির নিচে থাকা অনেক পুরনো একটি ঘর-ব্যাঙ বাঁচার জন্য প্রাণপণ লড়ছে। কতো চেষ্টা করলাম ওটাকে দোতলার সিঁড়িতে নিয়ে আসতে, পারলাম না। ও বেচারাও যে চেষ্টা করেনি তা কিন্তু নয়, স্রোত ঠেলে আসতে পারছে না। আমার চেতনা-তরঙ্গ নিশ্চিত ভাবে ওটার চেতনা স্পর্শ করেছে। ও অনেক চেষ্টা করেছে আমার দিকে ফিরে আসার, পারেনি, জলস্রোতের কাছে হার মেনে অস্পষ্ট অন্ধকারে কোথায় হারিয়ে গেল।
ব্যাঙটার জন্য খুব ফিল করেছি, কিন্তু অসহায়। রাক্ষুসে জল সব গিলে নিতে চাইছে। পেছনের মটর-ঘরেও একটি কুনোব্যাঙের বাসা। বেচারা দীর্ঘদিন থেকেই সেখানে থাকে, জানি না ওটা কোথায় এখন। মটর তো জলের তলায়। যেমন মানুষ, তেমনি অন্য প্রাণীদেরও জীবন-মরণ যুদ্ধ, বাঁচার লড়াই। আমাদের বাসার এবং আশপাশের বিড়ালগুলো যে কোথায় আছে কে জানে। এ নিয়ে তো ত্রয়ীর খুব চিন্তা। বছর দুয়েক আগে খুব বৃষ্টিতে জল হয়েছিল, আমাদের আদরের বিড়াল, ‘মেনু’ ভেসে যায়, আর আসেনি। তাই, ত্রয়ীর প্রার্থনা, ওরা যেন বেঁচে থাকে।
 (চলবে)  . .   . . . .   . .    . .

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker