NE UpdatesHappeningsBreaking News

চৈতন্য-শংকরদেবের মতো রবীন্দ্রনাথের শেষ লক্ষ্য ছিল ঈশ্বর, বললেন উপাচার্য অমলেন্দু

ওয়েটুবরাক, ৯ সেপ্টেম্বর :  বুধবার ছিল মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের তিরোভাব তিথি এবং ‘ভারতরত্ন’ ড. ভূপেন হাজরিকার ৯৫-তম জন্মজয়ন্তী। এই দিনটি ভিন্নভাবে পালন করল “বাংলা সাহিত্য সভা, অসম”। কোভিড প্রটোকলের জন্য আয়োজন ছিল ভার্চুয়ালি।  সন্ধ্যায় “বাংলা সাহিত্য সভা, অসম”-এর উদ্যোগে এবং গুয়াহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগিতায় মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের তিরোভাব তিথি উপলক্ষে আয়োজিত হয় বিশেষ বক্তৃতানুষ্ঠান। এতে “শ্রীমন্ত শংকরদেব, শ্রীচৈতন্য ও রবীন্দ্রনাথ : অসম-বঙ্গের সাংস্কৃতিক-দার্শনিক সংযোগ” শীর্ষক অনন্য একটি বিষয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেন হোজাইর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অমলেন্দু চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব, শ্রীচৈতন্য এবং রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কোথাও-না-কোথাও একটা যোগসূত্র রয়েছে। শ্রীচৈতন্য এবং শ্রীমন্তশংকরদেব ভারতীয় ভক্তি-আন্দোলনের অন্যতম দুই প্রবক্তা। দুজনেই মধ্যযুগের। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আধুনিক যুগের। শ্রীচৈতন্য এবং মহাপুরুষ শংকরদেব বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেছেন। উভয়ের লক্ষ ছিল ঈশ্বর। রবীন্দ্রনাথের বিচিত্র রচনা। কিন্তু তাঁর বিশাল সৃষ্টির শেষ সময়ে ধ্বনিত হয়েছিল ঈশ্বর। প্রেম, প্রকৃতি, পূজা বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে লেখার পরও রবীন্দ্রনাথ বলছেন : “নানা জনে লহে তার নানা অর্থ টানি, তোমা পানে ধায় তার শেষ অর্থ খানি।” এর থেকে বলা যায় শ্রীচৈতন্যদেব এবং শ্রীমন্ত শংকরদেবের মতো রবীন্দ্রনাথের শেষ লক্ষ্য ছিল ঈশ্বর। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বিস্তারিতভাবে বিষয়টি তুলে ধরেন ড. অমলেন্দু চক্রবর্তী।

অন্যদিকে, ভূপেন হাজরিকার জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে “বাংলা সাহিত্য সভা, অসম”। “মানুষ মানুষের জন্যে” শীর্ষক অনুষ্ঠানের মূল পরিচালক ছিলেন সভার অন্যতম সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিশিষ্ট শিল্পী দেবাশিস ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। বাঙালি ও অসমিয়া উভয় সমাজের নামীদামি শিল্পীরা এদিন আসর মাতিয়ে দিয়েছেন এবং অনন্য সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্যের বার্তা তুলে ধরেছেন।  ভূপেন হাজরিকা অসমিয়া ও বাঙালির পাশাপাশি যে পুরো ভারতের সাংস্কৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তা শিল্পীদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফুটে ওঠে। “হে সুধাকণ্ঠ মহান পূর্ব দেশের সন্তান” উদ্বোধনী সংগীত এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু করেন গুয়াহাটির রূপালি কেওঁট ও সঙ্গীবৃন্দ। সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা আয়োজিত পরিবেশনাটি অনবদ্য ছিল।

এরপর ভূপেন হাজরিকার বহুশ্রুত “ও মালিক সারা জীবন কাঁদালে যখন” গেয়ে শোনান গুয়াহাটির বিশিষ্ট তবলিয়া ও কণ্ঠশিল্পী চন্দন শিকদার। রাঙাপাড়ার শিশু শিল্পী ময়ূর সেন সুধাকণ্ঠের “আকাশীগঙ্গা বিছরা নাই” পরিবেশন করে সকলের প্রশংসা কুড়িয়ে নেয়। জি বাংলা সারেগামাপা-খ্যাত চন্দ্রা শিকদারের কণ্ঠে শোনা গেল হিন্দিতে “বিস্তার হে অপার, ও গঙ্গা তুম, বহতি হ্যায় কিউঁ”।

এদিন অসমিয়াসমাজের স্বনামধন্য শিল্পীরা বাঙালিদের এই আয়োজনে বিপুল সাড়া দিয়ে অংশগ্রহণ করেন। উত্তরপূর্বের নামকরা সরোদিয়া তরুণ কলিতার সরোদের ঝংকার যেমন ছিল অসাধারণ এক সংযোজন, তেমনি  বেহালাবাদক মনোজ বরুয়ার “গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা” বেহালার সুরমূর্ছনায় সকলের অন্তর জয় করে নিয়েছে। ছিল অসমিয়া বাচিকশিল্পী বিপুল বরার ভরাট কণ্ঠ। বিশিষ্ট অসমিয়া কণ্ঠশিল্পী ডিম্পি সোনোয়ালের কণ্ঠ (“জোনাকরে রাতি”) ও তাঁর স্বামী চন্দন দাসের গিটারের অনন্য যুগলবন্দি। পমি ভট্টাচার্যের অনুষ্ঠান ছিল “আশ্বিনে নীল রোদে”৷  উজান অসমের তিনসুকিয়ার শিল্পী শীলা দেব দে সরকার (“মানুহে মানুহর বাবে”) থেকে শিলচরের মেঘরাজ চক্রবর্তী উপহার দেন ভারতরত্নের সুধাসংগীত। তিনসুকিয়ার সঞ্জয় চক্রবর্তী যেমন আবৃত্তি করে শোনান, তেমনি সেতারে সুধাকণ্ঠের গান তুলে ধরেন অরুণ কলিতা। “বিস্তীর্ণ দুপারের” তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন করিমগঞ্জের ড. ঋতুপর্ণা রায়। দেবাশিস ভট্টাচার্য (ব্রহ্মপুত্র) তবলার বোলে সুধাকণ্ঠের গানকে এক মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের শেষে বিক্রমজিৎ বাউলিয়ার সংগীত পরিবেশন ছিল এক আনন্দঘন অনুভব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker