Barak UpdatesHappeningsBreaking News

গণশুনানির প্রস্তাব রূপায়ণের আগে টাকা গ্রহণ করবেন না ডলুর চা শ্রমিকরা

ওয়েটুবরাক, ১ জুন : গত সোমবার শিলচর পেনসনার্স ভবনে ডলু’র তিনটি ডিভিশনের ইউনিয়ন পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য, স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক প্রতিনিধি ও অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা নেতৃত্ব এক সভায় মিলিত হয়৷ ডলু চা বাগানের জমিতে বিমানবন্দর নির্মাণের ক্ষতিপূরণ হিসাবে সরকার ১২৬৩ জন শ্রমিককে যে এক লক্ষ টাকা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর ওপরই মূলত আলোচনা হয় সভায়৷ পৌরোহিত্য করেন কুঞ্জলতা ঘাটোয়ার৷

বিস্তৃত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, ২৩২৮ জন শ্রমিকের স্বাক্ষরিত গণশুনানির লিখিত প্রস্তাব রূপায়ণের আগে শ্রমিকরা সরকারের এক লক্ষ টাকা গ্রহণ করবেন না। কমিটির এই সিদ্ধান্তের উপর ইউনিয়নের বাগান কমিটি এবার নিজস্ব উদ্যোগে গণশুনানি অনুষ্ঠিত করবেও অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ক্যাবিনেট সিদ্ধান্তের উপর অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের মতামত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি স্মারকপত্র মঙ্গলবার ই-মেলে পাঠিয়েছে। তারা  ইণ্ডাস্ট্রিয়্যাল ডিসপিউট অ্যাক্টের ৯এ ও ৯বি ধারার প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ ওই ধারায় কোনও শিল্পের যদি শ্রমিক-কর্মচারীর উপর প্রভাব পড়ার মতো কোনও পরিবর্তন করতে হয়, সে ক্ষেত্রে এই বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত করার শর্ত সহ পরিবর্তনের বিষয়ের উপর নিয়োগকর্তা বা মালিককে আগেই একটা নোটিশ জারি করতে হবে এবং তা গেজেট নোটিফিকেশনে আনতে হবে। কিন্তু ডলুর আড়াই হাজার বিঘা জমির চা-গাছ উপড়ে ফেলার আগে এধরনের কোনও নোটিফিকেশন দেওয়া হয়নি।

তাদের কথায়, জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার জন্য যে প্রথম নোটিশ, তারপর ফাইনাল নোটিশ ও সর্বোপরি অ্যাওয়ার্ড নোটিশে কার, কত, কোন খাতে ক্ষতিপূরণ তার বিশদ বিবরণ থাকে, সেগুলির কোন প্রতিলিপিই জেলাশাসকের অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায়নি৷ সেজন্য অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন একটি আরটিআই পিটিশন দাখিল করেছে। এ ধরনের কোনও প্রক্রিয়া না করেই কীভাবে জোরজবরদস্তি চা-গাছগুলি উপড়ে ফেলা হলো, তা বিস্ময়জনক বলেই মন্তব্য অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের ৷

তাঁরা আরও বলেন, প্রশাসনিক উদ্যোগে দু দু’টি গণশুনানির মাধ্যমে শ্রমিকের মতামত গ্রহণ করা হয় এবং ২৩২৮ জন শ্রমিকের স্বাক্ষরিত গণশুনানির প্রস্তাব লিখিত আকারে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু গণশুনানির সেই প্রস্তাবগুলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আড়াই হাজার বিঘা ফসলি জমি হস্তান্তর হলে মালিক কীভাবে সব স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের কাজ দেবে তার কোনও সুষ্পষ্ট রূপরেখাও শ্রমিকদের জানানো হয়নি। চা-গাছগুলি উপড়ে ফেলার পর ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের আজ পর্যন্ত কোনও কাজ দেয়নি বাগান কর্তৃপক্ষ।

আড়াই হাজার বিঘা ফসলি জমি থেকে চা-গাছ উপড়ে ফেলায় যে সামাজিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য বিঘ্নিত হলো, তার কোনও হিসাব আইনানুগ সামাজিক ও পরিবেশ অডিট করে জনসমক্ষে আনেনি। ফলে শ্রমিক ও চা-বাগানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গণশুনানির রায় রূপায়ণ করে শ্রমিক ও চা-বাগানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সুরাহা না করে এক লক্ষ টাকা করে অনুদান শ্রমিকদের জীবন জীবিকার সুরক্ষা প্রদান করতে পারে না। এই অনুদানেও ১২৬৩ পরিবারের যে সংখ্যার উল্লেখ রয়েছে, তা স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট শ্রমিকের সংখ্যার তুলনায় অনেক কম বলেই জানান তাঁরা।

তাই তাদের সিদ্ধান্ত, গণশুনানির মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রস্তাব প্রাথমিকতার সঙ্গে রূপায়ণ করার পরই এক লক্ষ টাকার সরকারি মঞ্জুরি ও ক্ষতিপূরণ গ্রহণের প্রশ্ন আসবে। সরকার দ্রুততার সাথে গণশুনানির প্রস্তাব আগে রূপায়ণ করুক।

এছাড়া ক্যাবিনেট সিদ্ধান্তে মজুরি বৃদ্ধি করে ৩৫১ টাকা করার শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি ও চা-বাগানে বসবাসরত শ্রমিক পরিবারদের জমির পাট্টা সংক্রান্ত দাবির কোনও উল্লেখ করা হয়নি বলে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন আক্ষেপ প্রকাশ করে৷ তাদের আশা, এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যকরী করে সরকার তাদের সদিচ্ছার প্রমাণ দেবে। অন্যথায় শ্রমিকরা বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন  অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে মৃণালকান্তি সোম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker