Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসকরাই রক্ত দিয়ে পরীক্ষা করলেন অ্যাফেরেসিস মেশিন, উদ্বোধনেও তৈরি তাঁরা
ওয়েটুবরাক, ২৫ জুলাইঃ কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে রোগীর জরুরি প্রয়োজনে রক্তের সঙ্কটে কতবার যে চিকিৎসক নিজে এগিয়ে গিয়ে রক্তদান করেছেন, এর হিসেব নেই। এমনকী ডিরেক্টর, ডেপুটি ডিরেক্টরও বাদ নন।
এ বার রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সৌজন্যে প্রাপ্ত নতুন অ্যাফরেসিস মেশিন চালুর আগে কাকে দিয়ে এর পরীক্ষা করা হবে, এ এক জটিল প্রশ্ন হওয়ার কথা ছিল। কারণ নতুন এই অত্যাধুনিক মেশিন রক্ত শুধু সংগ্রহই করে না, সেই সঙ্গে পরিমাণ মতো প্রয়োজনীয় উপাদান পৃথক করে বাকি সব উপাদান আবার দাতার শরীরে ঢুকিয়ে দেয়। এ ছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এমন ব্যবস্থা এই প্রথম। ফলে সব ঠিকঠাক হবে কিনা, এই জটিলতার আবহ তৈরির আগেই ডেপুটি ডিরেক্টর তথা ক্যানসারের শল্য চিকিৎসক রিতেশ তাপখিরে জানিয়ে দেন, তিনিই প্লেটলেট দিয়ে মেশিনের ট্রায়াল রান করাবেন। সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে গেলেন আর এক ক্যানসার চিকিতসক সূর্য প্রকাশ। জল্পনার অবসান। দুইজনই সোমবার প্লেটলেট দিলেন৷ বাকি সব উপাদান মেশিনই তাঁদের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয়। রক্ত বের করে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার নেই। আবার সুঁই ঢুকিয়ে সংগৃহীত পুরনো রক্ত শরীরে ফেরত পাঠানোর কথা নেই। অ্যাফেরিসিস মেশিনই একশো এমএল করে রক্ত বের করে প্লেটলেটকে পৃথক করে ব্যাগে পাঠিয়ে দেয় এবং বাকিটা একই সুঁইয়ের সাহায্যে দাতার দেহের ভেতরে ঢোকায়। যে রক্ত বেরোচ্ছে, তা দেখার সুযোগ নেই, মেশিন সেটি সোজা পেটে পুরে নিচ্ছে, আর আচ্ছাদিত অবস্থাতেই একে পৃথক করছে এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া সেরে নিচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কাছাড় ক্যানসার হাসপাতাল সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. সুজিতকুমার নন্দী পুরকায়স্থ ও সম্পাদক নীলমাধব দাস সহ অন্যান্য পদাধিকারী এবং সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অ্যাফেরেসিস মেশিনের সূচনা হয়। এই বারও প্লেটলেট দিতে তৈরি হলেন চিকিৎসক। তবে সূচনা লগ্নে প্লেটলেট দিলেন হৃদয় এনজিও-র সহ-সভাপতি সন্তোষ দেবনাথ। এর পরেই দেন ডা. এইচএম ইকবাল বাহার, তৈরি রয়েছেন বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত। গোটা পর্ব তদারকি করেন কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ ়ডা. শবনম বাহার বড়ভুইয়া। উপস্থিত ছিলেন রোটারি ক্লাবের ২০২০-২১ বর্ষের অ্যাসিস্ট্যান্ট গভর্নর চিরঞ্জিত ঘোষ এবং সেই সময়কার রোটারি ক্লাব অব শিলচর গ্রিনল্যান্ডের সভাপতি ধীরাজ জৈন। চিরঞ্জিত জানান, এটিই এই অঞ্চলের প্রথম গ্লোবাল গ্রান্ট। এই অ্যাফেরেসিস মেশিন এবং একটি ডিজিটাল পিসিআর মেশিনের জন্য ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর অর্ধেক মিলেছে গ্লোবাল গ্রান্টে, বাকিটা এখানকার রোটারিয়ানরা জুগিয়েছেন। শিলচর রোটারি ক্লাব, রোটারি ক্লাব অব গ্রিনল্যান্ড, রোটারি পিঙ্ক এবং রোটারি ক্লাব অফ গ্রেটার শিলচর সবাই এগিয়ে এসেছিলেন।
এ দিন এই বিশেষ মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম, হৃদয়, মারোয়ারি যুব মঞ্চ, সমতা সেবা ট্রাস্ট, শ্রীশ্রী সাধুমার্গী জৈন সংঘ, লায়ন্স ক্লাব, স্মাইলের প্রতিনিধিরা। বিশেষ লক্ষণীয় ছিল ক্যানসার হাসপাতাল এবং এর ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীদের তৎপরতা। তাঁরা বলেন, প্লেটলেট দিলে ৪৮ ঘণ্টাতেই তা পূরণ হয়ে যায়৷ ফলে দাতারা তিনদিন পরই ফের প্লেটলেট দিতে পারবেন৷ অন্য উপাদানের বেলায় অবশ্য সেই তিনমাসের নিয়ম৷ তবে ক্যানসার হাসপাতালে প্লেটলেটেরই চাহিদা প্রচুর৷