Barak UpdatesHappeningsAnalytics

করোনা বেকার করে দিয়েছে পরিচারিকা, ধোপা, নাপিতদের

১৬ অক্টোবর: মালতি রায় পরিচারিকার কাজ করতেন৷ ভোরে উঠে একে একে ৩ বাড়িতে বাসন ধোয়া, ঘর মোছা, সবজি কাটার কাজ সারতেন৷ একবাড়িতে রান্নাও করতে হতো৷ ওখানেই বাঁধা ছিল দুপুরের খাওয়া৷ রিংকু শীলের সেলুন রয়েছে শিলচর শহরে৷ সকাল থেকেই লাইন পড়ত৷ ভিড়ের দরুন কেউ কেউ বিমুখ হয়ে ফিরেও যেতেন৷ তাঁর ছিল সেই এক কথা, যিনি আগে এসেছেন, তাকেই আগে ছাড়া হবে৷

অবধেশ সিংহের লন্ড্রিরও ওই একই অবস্থা৷ ভোর থেকে শুরু হতো কাপড় ইস্ত্রি৷ রাত পর্যন্ত কাজ করেও সবার মন রাখা সম্ভব হতো না৷ বাধ্য হয়েই বলতেন, পরদিন আসুন৷ করোনা তিনজনকেই প্রায় বেকার করে দিয়েছে৷ তাঁদের কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও অন্যদের সংক্রমণের আতঙ্ক তিনজনেরই কাজ কেড়ে নিয়েছে৷ এখন প্রায় সবকিছুই আনলক, তবু তাদের পেশার জায়গা স্বাভাবিক হয়নি৷ মালতিদেবীকে সব গিন্নিমা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা নিজেরাই সেরে নিচ্ছেন৷ আর যেতে হবে না তাঁকে৷ স্বামী পরিত্যক্তা মালতিদেবী দিশাহারা অবস্থায় গত সপ্তাহ থেকে পাড়ার মুখে সবজি নিয়ে বসছেন৷
খদ্দের কমে যাওয়ায় ৫০ ছুঁইছুঁই রিংকু শীলও সেলুন বন্ধ করে অন্য কাজ খুঁজছিলেন৷ জোটাতে পারেননি৷ কিছুদিন ধরে ফের সেলুনেই বসে থাকেন৷

অবধেশ সিংহ লন্ড্রির সামনে পান-সুপারি রেখেছেন৷ বললেন, “ইস্ত্রি একেবারে কমে গিয়েছে৷ আর একটা কিছু না করলেই হচ্ছিল না৷” তাঁর কথায়, “শুধু আমারই খারাপ অবস্থা, তা নয়৷ সব ধোপারই রুজি কমে গিয়েছে৷” “কমবে না! করোনা যে মানুষকে আত্মনির্ভর হতে শিখিয়েছে৷” শ্লেষমাখা গলায় বললেন রিংকু শীল৷ কারও মুখে ‘আত্মনির্ভর’ শব্দটা শুনলে জ্বলে ওঠেন মালতি রায়ও৷ বললেন, “মধ্যবিত্তরা আত্মনির্ভর হতেই তো কপাল পুড়েছে আমাদের৷ শুধু কি আর আমার সব কাজ গিয়েছে! ও-পাড়ার সন্ধ্যাদি, দাস কলোনির রামুর মা, মালিনীবিলের অর্চনা সবাই কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছে৷”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker