NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
এনআরসি চূড়ান্ত না হলেও ভোগান্তি এনআরসি-ছুটদের, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ সিআরপিসিসি-র
ওয়েটুবরাক, ১ সেপ্টেম্বর : এনআরসি’র চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের দু’বছর পূর্তির বিশেষ দিনে মঙ্গলবার এনআরসি-ছুট ১৯ লক্ষ মানুষের সমস্যা তুলে ধরে তা দ্রুত সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাছাড়ের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকপত্র পাঠাল নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতি, আসাম। জেলাশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলাশাসক দীপক জিডুঙের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্থ, কাছাড় জেলা সভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত, উপ-সভাপতি শিহাব উদ্দিন আহমেদ, সম্পাদক ডাঃ এম শান্তি কুমার সিংহ, আইনজীবী নীলাদ্রি রায়, আব্দুল হাই লস্কর, আলী রাজা ওসমানী, হিল্লোল ভট্টাচার্য, আজমল হুসেন চৌধুরী প্রমুখ৷
তাঁরা বলেন, এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দু’বছর পূর্ণ হয়েছে, অথচ এনআরসি-ছুট নাগরিকরা আজ পর্যন্ত জানতেই পারলেননা কেন, তাঁদের নাম কেন বাদ পড়ল ? সাধন পুরকায়স্থ বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩১ আগস্ট, ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, রাজ্যের উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করায় ১৯ লক্ষ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে৷ নতুবা একজনের নামও বাদ পড়ত না। শিহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এনআরসি কর্তৃপক্ষ তখন ছেঁটে ফেলা ১৯ লক্ষ নাগরিককে তাদের নাম বাদ পড়ার কারণ বর্ণনা করে রিজেকশন স্লিপ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু আজ দু বছর পেরিয়ে গেলেও তা প্রদান করা হয়নি।
নীলাদ্রি রায় বলেন, তালিকা প্রকাশের পর মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, এই তালিকায় নাম নথিভুক্ত না হওয়া জনগণকে কোনও ধরনের বৈষম্য করা হবে না এবং তাদের প্রাপ্ত সমস্ত নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আশ্বাস সত্ত্বেও এনআরসি-ছুটদের নানা ধরনের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে জন্মের প্রমাণপত্র, তপশিলি জাতির পরিচয় পত্র সহ নানা ধরনের সরকারি নথি তৈরি করতে গেলে এনআরসি তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে। ডা.এম শান্তি কুমার সিংহ বলেন, আধার কার্ড তৈরি করতে গেলে এনআরসি-ছুট নাগরিকদের বায়োমেট্রিক্স তথ্য বার বার বাতিল হয়ে যাচ্ছে৷ কারণ তাদের বায়োমেট্রিক্স তথ্য আগেই এনআরসি কর্তৃপক্ষ নিয়ে রেখেছে, যা আধার কার্ড তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানাচ্ছে না। বর্তমানে আসাম সরকার রেশন কার্ডধারকদের আধার নম্বর চেয়েছে৷ অন্যথায় তাদের কার্ড বাতিল হয়ে যাবে৷ শুধু তাই নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের লাভ পেতে হলে হিতাধিকারীদের আধার নম্বর প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র, এ অবস্থায় ১৯ লক্ষ নাগরিকের মধ্যে যারা দরিদ্র, তাদের প্রাপ্ত সুবিধাগুলো বাতিল হওয়ার পথে। আব্দুল হাই লস্কর বলেন, এনআরসি-ছুট নাগরিকদের আধার কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে কেউ এগিয়ে আসছে না। এর ফলে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ নাগরিককে চরম বঞ্চনা ও সীমাহীন লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে।
সিআরপিসিসি, আসামের পক্ষ তাই স্মারকপত্র প্রদান করে দাবি জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যের এনআরসি-ছুট ১৯ লক্ষ মানুষের সব ধরণের নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি আধার কার্ডের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্ৰহণ করে রাজ্যের সমস্ত নাগরিককে দ্রুত আধার কার্ড প্রদান করতে হবে। তাছাড়া কোন ধরনের সরকারি নথি তৈরিতে এনআরসি’র তথ্য চাওয়া চলবে না।
সংগঠনের চেয়ারম্যান ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, সরকারি কোষাগার থেকে ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের চরম হেনস্থা করে সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে তৈরি এনআরসি তালিকা দু’বছর আগে প্রকাশিত হলেও আজও তাকে রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া স্বীকৃতি প্রদান করল না কেন? কার নির্দেশে তা আটকে রাখা হয়েছে? তিনি বলেন, অথচ তালিকাভুক্ত না হওয়া ১৯ লক্ষ নাগরিককে চরম হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসকরা এসব করার পরও তাদের আদৌ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী বলা চলে কি? উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী ও উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর অঙ্গুলি হেলনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পর্যন্ত অমান্য করা হচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর দেশে ঘটবে, তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি। তিনি ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জনগণের সমস্ত অংশের মানুষকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীকে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্ৰহণ করে জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে আবেদন জানান। স্মারকপত্রের প্রতিলিপি আরজিআই ও রাজ্যের এনআরসি কো-অর্ডিনেটরকেও প্রদান করা হয়।