Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার মান তলানিতে, লিখেছেন জলদবরণ দেবনাথ

//জলদবরণ দেবনাথ//

বেশ কয়েক বছর ধরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিম্নগামী হয়ে গেছে । শুধু শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো মার্কস ( নম্বর) দেওয়া হচ্ছে তাদের মন রক্ষার্থে। যদিও বাস্তব চিত্র ভিন্ন ৷ গত কয়েক বছর ধরেই ( বিশেষ করে করোনার সময় থেকে ) ছাত্রছাত্রীরা  নিজেদের পরীক্ষার নামে শুধু অ্যাসাইনমেন্ট, ইন্টারন্যাল টেস্ট, বাড়িতে বসে দেখে দেখে অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়া এ গুলোর উপর ভিত্তি করে দেদার মার্কস দেওয়া হচ্ছে ।বর্তমানে শিখে পরীক্ষা দেওয়ার কোনও মানসিকতাই নেই৷ যদি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে বসে তখনও তাদের বৃহদাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে৷ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ধরে নেন, ক্লাস যেহেতু ঠিকভাবে হয়নি বা করা হয় না তাই পরীক্ষা কেন্দ্রের রুম (শ্রেণীকক্ষ )গুলোতে শিক্ষকরা কর্তব্যরত সময়ে না দেখার ভান করে থাকেন ।

সরকারি কলেজগুলোর অধিকাংশ শিক্ষক নিজেদের নিরাপদে রাখার জন্য এবং ছাত্রছাত্রীদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য মার্কস বেশি করে দিয়ে থাকেন। ক্লাসের উপস্থিতির হারের উপর দশ শতাংশ মার্কস নির্ধারণ করা থাকে। কাগজেপত্রে ৭৫ থেকে ১০০ ভাগ উপস্থিত হলেও ক্লাসরুমে ১০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীও থাকে না। যদিও মার্কস প্রায় সবাইকে দিয়ে দেওয়া হয়। তাই যে সব শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিতে যান, তাদের মধ্যেও ক্লাস না নেওয়ার এক মনোভাব সৃষ্টি হয়। যার ফলে ক্লাস ভালো ভাবে হচ্ছে না। তাই সিলেবাসও শেষ হচ্ছে না। তবুও ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই, কারণ সবাই যার যার সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে।।

তাছাড়া সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বেতন অত্যধিক থাকার ফলে নিজেরা শুধু নিজেদের পরিবার, জমি, বাড়ি, গাড়ি, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত, ভ্রমণবিলাস নিয়ে ব্যস্ত। পেশার প্রতি তাঁদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। এমনকি, অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা ফাইনাল পরীক্ষার ডিউটি দিতেও অবহেলা করেন, ফলে পার্ট টাইম শিক্ষকরা পরীক্ষা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন ।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কিছু কিছু কলেজ রয়েছে যারা নিজ বিভাগের বা কলেজের রেজাল্ট ভালো করার জন্য শিক্ষকদের তরফ থেকে উদ্যোগ নিয়ে সহযোগিতা করা হয় । কলেজ কর্তৃপক্ষও কিছু বলেন না। কারণ অন্যান্য কলেজগুলো প্রত্যেকে নিজেদের সুনাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভালো রেজাল্ট দেখানোর জন্য। পরীক্ষাসমূহের কন্ট্রোলারও ভালো ফলাফল দেখে খুশি ব্যক্ত করেন । যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে পাশ করছে এবং যারা লেখাপড়া না করে তাদের থেকে ভালো মার্কস নিয়ে পাশ করছে, তখন খাটি ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে ভালো ও দুর্বল ছাত্রছাত্রী যাচাই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

বেসরকারি কলেজগুলোতে যদিও লেখাপড়া করার প্রবণতা আছে, কিন্তু সেগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্র দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষের ভেবে দেখা দরকার । ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ট সেমিস্টারের যে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তাতে প্রত্যেক কলেজগুলো নিজেদের ছাত্র ছাত্রীদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিজেরাই করেছেন। যার ফলে মার্কস বেশি করে দেওয়ার এক প্রবণতা দেখা যায়। যাতে অধিকাংশ কলেজ তাদের গুণগত মান বজায় রাখতে পারে , তাই এমন দেখা গেছে নব্বই থেকে একশত মার্কস দিতে পর্যন্ত দ্বিধাবোধ করেনি । যদি এই ছাত্র ছাত্রী গুলোর ২০২১ সালে অনুষ্টিত প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারের মার্কসের তুলনা করা হয় তা হলে বাস্তব চিত্র চোখে ধরা পড়বে । যদি এবারের উত্তরপত্রগুলো অন্য কোথাও দেখার জন্য পাঠানো হতো, তবে খুব বেশি হলে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে পাশের হার থাকতো ।

বিগত কয়েক বছর আগে স্নাতক পর্যায়ের ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল, এর দরুন শহর তথা গ্রামাঞ্চলের কলেজ গুলোর কিছু কিছু ছাত্রছাত্রী তার সুফল পেত , যদিও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিগোচর হওয়াতে তা বন্ধ হয়েছে । পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিদিষ্ট কিছু কলেজগুলোকে সে সময়ে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দেন। তাছাড়াও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হত , তাছাড়া বাছাই করা উপযুক্ত বিশিষ্ট জনদের প্রত্যেকটি কলেজে external হিসেবে পাঠানো হতো যাতে পরীক্ষা সঠিক ভাবে পরিচালিত হয় । পরবর্তীতে তার সুফল দেখা গেছে , যদি ও বর্তমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করোনার সময় থেকে আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি, পরীক্ষা নামেমাত্র চলছে ।

ইজরায়েলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে লেখা রয়েছে, যদি একটি রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া যায়, তবে তা পারমাণবিক বোমার আঘাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর । তাই উপাচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ামকের  উচিত, এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা৷ তাই সমাজের সর্বস্তরের জনগণ তথা বিশিষ্টজনের এ ব্যাপারে কথা বলা উচিত যাতে পরীক্ষার গুণগত মান বজায় থাকে, তা না হলে অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবে৷ তখন তারা দেশের সমৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলবে৷ এই অবস্থায় সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ হবে না যে, এখানকার ছাত্রছাত্রীরা চাকরি পাচ্ছে না৷ কারণ না পাওয়াটাই স্বাভাবিক, তারা যে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে না ।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker