Barak UpdatesHappeningsBreaking News
অসিত দত্ত, তপোধীর ভট্টাচার্য, অতীন দাশরাও কি দুষ্কৃতী? দীপায়নকে সুরক্ষা মঞ্চের প্রশ্ন
ওয়েটুবরাক, ১৩ সেপ্টেম্বরঃ ফের বিতর্কে জড়ালেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। সেলফ অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার যে নির্দেশ দিয়েছে সরকার, তাতে নিজের কৃতিত্ব দাবি করতে গিয়ে শিলচরের জনগণকেই অপমান করলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সে জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ। শিলচরের বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বিত সংগঠন এই সুরক্ষা মঞ্চ।
সোমবার স্থগিতাদেশ জারির পরই সামাজিক মাধ্যমে দীপায়নের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। হাসি-তামাশাও করেন অনেকে। এর পরই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা একটি চিঠির প্রতিলিপি সাংবাদিকের পাঠিয়ে দাবি করেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুরকর বৃদ্ধি ইস্যুতে কথা বলেছিলেন। আর্জি জানিয়েছিলেন, করপোরেশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত সেলফ অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সঙ্গে সঙ্গে ওই চিঠিতে নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন। বিধায়কের দাবি, ওই চিঠি তিনি হাতে হাতে নিয়ে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক সিংঘলের কাছে যান। এর পরই ওই স্থগিতাদেশ বেরোয়।
এই দাবি নিয়ে প্রচুর পাল্টা যুক্তি থাকলেও প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কী লিখলেন দীপায়ন? তিনি চিঠিতে স্থগিতাদেশের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন, সেলফ অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধীরা এবং সেইসঙ্গে একদল দুষ্কৃতী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের জিজ্ঞাস্য, ওই দুষ্কৃতীরা কারা। বিরোধী রাজনৈতিক দলের বাইরে সেলফ অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছেন প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, প্রবীণ ইঞ্জিনিয়ার হরিদাস দত্ত, ফুডগ্রেইনস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা অসিত দত্ত, বিশিষ্ট সাংবাদিক অতীন দাশ। তবে কি তাঁদেরই দুষ্কৃতী বললেন দীপায়ন চক্রবর্তী? মঞ্চের কথায়, তাঁদের মতো যাঁরা সভা-সমিতিতে অংশ নিয়েছেন, এর বাইরে স্থগিতাদেশ চেয়ে নীরবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহরের বিরানব্বই শতাংশ মানুষ। দীপায়ন চক্রবর্তী তাঁদের দুষ্কৃতী বলেননি তো? তাঁরা বিধায়কের কাছে এর স্পষ্টীকরণ দাবি করেন। বলেন, দুষ্কৃতী আখ্যায়িত করার জন্য তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
অতনু ভট্টাচার্য, অজয় রায়, হিল্লোল ভট্টাচার্যরা বলেন, চিঠিতে তারিখ লেখা রয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর অর্থাত সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ফর্ম জমার শেষদিন। এতদিনে ঘুম ভাঙল বিধায়কের? তিনি নিজেই আগে বলেছিলেন, এই ফর্ম পূরণের সঙ্গে করবৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ তিনি নিজেই চিঠির বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন, করবৃদ্ধি। তাঁদের কথায়, এই ভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নিজেই নাগরিকদের দুষ্কৃতী আখ্যা দিয়ে দীপায়ন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিধায়ক পদের যোগ্য নন। তাই তাঁকে পদত্যাগ করতেও বলেন তাঁরা। আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী বিধায়ককে ক্রেডিট নেওয়ার খেলা বন্ধ করতে পরামর্শ দেন।
মঞ্চের কর্মকর্তা দুলাল মিত্র বিস্মিত, এইভাবে চিঠি লিখতে পারেন একজন বিধায়ক! তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ফর্ম জমা না দেওয়া জনতার মধ্যে বিজেপি কর্মীরাও রয়েছেন। নইলে শুধু সাত-আট শতাংশ ফর্ম জমা পড়ত না। অরিন্দম দেব, সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্থগিতাদেশ যথেষ্ট নয়। এ বার এই সরকারি নির্দেশ বাতিলের জন্য দাবি তুলতে হবে।
মহীতোষ পালের প্রশ্ন, এত এত দুষ্কৃতীর ভোটে যিনি নির্বাচিত, তিনি কি আদৌ ভদ্রলোক? প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিকের বক্তব্য, পুরসভার দায়িত্ব শুধু কর বৃদ্ধি বা স্থগিতাদেশেই শেষ হয়ে যায় না। পরিষেবাও প্রদান করতে হয়। তিনি পুজোর আগে নালা-নর্দমা সাফাই করতে পুরসভার কাছে অনুরোধ জানান। পুজোতে যেন বৃষ্টি হলে কোমরজল না জমে। তিনি চতুর্দিকে জমে থাকা জঞ্জাল দ্রুত অপসারণেরও অনুরোধ করেন। প্রয়োজনে প্রাক্তন পুর সদস্য বা নাগরিক স্বার্থ সুরক্ষা মঞ্চের পরামর্শ নিতে বলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাধন পুরকায়স্থ, কিশোর ভট্টাচার্য, শান্তিকুমার সিংহ, সঞ্জিত দেবনাথ, বনানী রায়চৌধুরী প্রমুখ।