Barak UpdatesBreaking News

অটো বনাম টোটো, শিলচরে ই রিকশা আটক করছে পরিবহণ বিভাগ

অটো বনাম টোটো অর্থাৎ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ই রিকশা। সরকারের গেজেট নোটিফিকেশন এবং ই-রিকশার আত্মপ্রকাশের বিষয়টি নিয়ে দুটি সংগঠনের মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকেই সংঘাত চলছে। দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি, আন্দোলনের হুমকি, প্রশাসনকে চরমপত্র ইত্যাদি একের পর এক দেওয়া হলেও সেই অর্থে প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামেনি।কিন্তু সোমবার থেকে হঠাৎ করেই কাছাড় জেলা পরিবহণ বিভাগ টোটো আটক অভিযানে নেমেছে। ফলে কঠিন সমস্যায় পড়েছেন ই রিকশার চালকরা।

কিন্তু কেন এই অভিযান ? ২০১৬-র মাঝামাঝি কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে যে গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছে, শহরাঞ্চলে এই যাত্রীবাহী রিকশা চলতে পারবে না। এটি চলবে গ্রামাঞ্চল বা কোনও ছোটো শহরে। তাছাড়া গ্রামের সঙ্গে শহরের সংযোগের কাজটিও করবে এই ই রিকশা। এই গেজেট নোটিফিকেশনকে সামনে রেখেই আন্দোলনে নেমেছিল শহরের বিভিন্ন অটোরিকশা সংস্থা। তাদের বক্তব্য, যদি সরকার এই গেজেট নোটিফিকেশন লাগু না করে বা এর মাধ্যমে পদক্ষেপ না নেয় তাহলে কেন তা জারি করা হয়েছে। সংঘাতের সূত্রপাত এখানেই।

অটোচালক ও মালিক সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করে। জেলাশাসক ও জেলা পরিবহণ আধিকারিককে এ নিয়ে স্মারকপত্রও দেওয়া হয়। তারা হুমকি দেন, সরকার ব্যবস্থা না নিলে অটো চলাচল বন্ধ করে দেবেন। আন্দোলনে নেমেও প্রথম পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করে তা স্থগিত রাখে অটোরিকশা চালক ও মালিকদের যৌথ মঞ্চ। পরবর্তীতে ফের আন্দোলনের কথা জানালে জেলাশাসক এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার কথা বলেন।

এদিকে, নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের পরও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় অটোরিকশার যৌথ মঞ্চ চরমপত্র দিয়ে জানিয়ে দেয়, ২৯ অাগস্টের মধ্যে গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
অন্যদিকে জেলা পরিবহণ বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা জানান, গেজেট নোটিফিকেশনের জন্যই শহরে চলাচলকারী ই রিকশাগুলোকে আটক করা হচ্ছে। কিন্তু দু’ বছর পর কেন এই ধরপাকড় অভিযান– এমন প্রশ্নে অবশ্য জুতসই জবাব মেলেনি বিভাগের কাছে। তবে ওই বিভাগীয় কর্তা বলেন, বিভিন্ন সময়ে তারা অভিযানে নামলেও রাজনৈতিক চাপে পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

শিলচর শহরে চলাচলকারী ই রিকশা সংস্থার এক পদাধিকারী বলেন, গেজেট নোটিফিকেশন জারি করার পরপরই কেন প্রশাসন ই রিকশা গুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি। এতদিন পর হঠাৎ করে ই-রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় এর সঙ্গে যুক্ত বহু চালক ও মালিক আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছেন। অনেকে আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ই-রিকশা কেনায় প্রতি মাসে কিস্তির টাকা রোজগার করেই পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে তাদের পরিবারের সদস্যদের অন্নসংস্থান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পরিবহণ বিভাগ বহু টোটো চালককে লাইসেন্স পর্যন্ত দিয়েছেন। তাদের চলাচলের পারমিট দেওয়া হয়েছে। যেসব টোটো আটক করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেকেরই নথিপত্র ঠিকঠাক রয়েছে বলে দাবি করেছেন সংস্থার ওই কর্মকর্তা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের সাফকথা, শহরে ই রিকশা চালানোর ক্ষেত্রে অনুমতি না থাকলে তা স্পষ্ট ভাষায় লিখে দিতে হবে।

তবে অনেকে আবার টোটো আটক অভিযানে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। তাদের ধারণা, কোনও একটি গোষ্ঠীকে বোনাস পয়েন্ট দিতেই এমন শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক ২০১৬ সালের আগস্টে এক গেজেট নোটিফিকেশনে জানিয়েছে যে, ই রিক্সা বা ই-কার্ট গুলোকে রাস্তায় চলাচলের জন্য কোনও পারমিটের প্রয়োজন হবে না। তবে রাজ্য সরকার ট্রাফিক আইন অনুযায়ী এগুলোর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। যেমন কোনও নির্দিষ্ট এলাকা বা নির্দিষ্ট রাস্তা ই রিকশাগুলোর জন্য বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। প্রথম পর্যায়ে ই রিকশাগুলো ট্রাফিক আইনের আওতায় ছিল না। কিন্তু ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সংসদে মোটর ভেহিকলন আইন সংশোধন করে ই রিকশাকে চলাচলের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় ৫১০০টি ই রিকশা বিতরণ করেছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker