NE UpdatesBarak UpdatesIndia & World UpdatesHappenings
‘অতিমারির বিরুদ্ধে অসম—একটি যৌথ আহ্বান’, অভিযানে নেমেছে রাজ্যের সাত সংগঠন
ওয়েটুবরাক, ৩০ মে: ‘অতিমারির বিরুদ্ধে অসম—একটি যৌথ আহ্বান’ শীর্ষক এক অভিযানে নেমেছে ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি, অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন, সিটিজেন্স ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস, সংখ্যালঘু গণতান্ত্ৰিক যুব ছাত্ৰ ফেডারেশন, প্রয়াস, কোরাস এবং নারী মুক্তি সংস্থা৷ চলছে স্মারকপত্রে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান৷ ইতিমধ্যে রাজ্যের শতাধিক সমাজকর্মী, লেখক, শিল্পী স্বাক্ষর করেছেন। এই অভিযানে এরা সাহায্য নিচ্ছেন চেঞ্জ ডট অর্গ নামের বিখ্যাত ওয়েবসাইটের।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকপত্রে তাঁরা লিখেছেন, অতিমারির দ্বিতীয় তরঙ্গের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র সরকার ব্যর্থ। দেশের বহু স্থানে সামান্য চিকিৎসা সাহায্যের দাবি জানালেও দেশদ্রোহের মামলা হচ্ছে, নাসা প্রয়োগের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রতিবেশী রাজ্য মণিপুরে এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অসমেও মুখ্যমন্ত্রী-স্বাস্থ্যমন্ত্রী সক্রিয় বলে সংবাদ সামনে এলেও বাস্তবে বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে রোগীরা বেড পাচ্ছেন না৷ আর কোথাও পেলেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
স্মারকপত্রে তাঁরা আরও লিখেন, “আমরা সবাই যখন প্রতিনিয়ত কাছের মানুষের মৃত্যুসংবাদ পাচ্ছি, তখন কৃষি আইন বাতিল করে আন্দোলনরত কৃষকদের ঘরে পাঠাবার আয়োজন দেখছি না। অতিমারি মোকাবিলায় যখন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অর্থের টান পড়ছে, তখন বিলাসবহুল নতুন সংসদ ভবন তথা সেন্ট্রাল ভিস্টা তৈরি হচ্ছে। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি তৈরি হচ্ছে। পশ্চিমবাংলায় নবনির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেবার আয়োজন হচ্ছে।”
তাঁদের অভিযোগ, অসমেও এখানে ওখানে জনজাতি ও সংখ্যালঘু কৃষকদের উচ্ছেদের আয়োজন হচ্ছে৷ অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের বিনা প্রমাণে ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করে বিভাজনের রাজনীতি করতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অতিমারির আতঙ্কের দিনেই যখন সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে, তাদের তখন ঘর ছাড়াবার আয়োজন হচ্ছে। একইরকম ভাবে চূড়ান্ত এনআরসি-কে খসড়া নাম দিয়ে আবার পুনর্নিরীক্ষণের বন্দোবস্ত করে ইতিমধ্যে কোভিডে এবং কাজ হারিয়ে আতঙ্কিত ভাষিক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আরও বড় আতঙ্কের দিকে ঠেলে দেবার আয়োজন হচ্ছে। চা বাগিচাগুলোতে বাকিদের মতো কোভিড বিধি না মেনে দিনভর কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে বাগানে বাগানে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ঘটছে।
তাই তাঁদের দাবি, সমস্ত মানুষের বিনামূল্যে টিকা প্রদান ও অতিমারি চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। টিকা উৎপাদনের ফর্মুলার মেধাসত্ত্ব সরকারের হাতে রাখতে হবে, কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের অবাধ সুযোগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। উৎপাদন, দাম ও বণ্টনের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে একই দামে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে সামগ্রী প্রদান করতে হবে। মহকুমা ভিত্তিতে ব্যক্তিগত হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে পর্যাপ্ত বেড বিশেষ করে আইসিইউ তৈরি করে অতিমারি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ১০৮ অ্যাম্বুলেন্স কর্মী সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বকেয়া মিটিয়ে দিয়ে মাইনে নিয়মিত করতে হবে। যারা বেকার এবং কাজ হারিয়েছেন সমস্ত মানুষের জন্যে ৭৫০০ টাকা করে মাসিক বেকার ভাতা দিতে হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনরেগার অধীনে ৪৯.৬ শতাংশের বেশি কাজ সম্পূর্ণ হয় নি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯.৫৮ শতাংশের বেশি কাজ সম্পূর্ণ করা হয়নি। এনরেগার এই অসম্পূর্ণতা দূর করে এর পরিসর বাড়াতে হবে। যাতে প্রবাসী শ্রমিকেরা ফিরে এলেও গ্রামে বা শহরে তাঁদের উপযুক্ত কাজ পান। চা-শ্রমিকদের উপরেও কোভিড বিধি বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং লকডাউন শুরুর সময়ের ছুটি দিতে হবে।
অক্সিমিটার, বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী, খাদ্যতেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কালো বাজারি ও মূল্যবৃদ্ধি দমন করবার দাবিও তুলেছেন তাঁরা৷
সংগঠনগুলোর হয়ে প্রাথমিক ভাবে স্বাক্ষর করেছেন অরিন্দম দেব ও হরকুমার গোস্বামী, বিপুল হাজরিকা ও মৃণাল কান্তি সোম, নন্দ ঘোষ ও জয়নাল আবেদিন, আসাদুল হক চৌধুরী ও রিয়াজ উদ্দিন খন্দকার, পাপিয়া দাস ও পীযুষ চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ দাশ ও নীলু দাস, সুকল্পা দত্ত ও সবিতা দাস।