Barak UpdatesHappeningsAnalyticsBreaking News

লোকগণনায় মাতৃভাষা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না, বলল বরাক বঙ্গ

১৫ ডিসেম্বর : আগামী বছর লোকগণনায় অসমে বসবাসকারী সকলের মাতৃভাষা অসমিয়া লেখানোর জন্য এআইইউডিএফ সুপ্রিমো বদরুদ্দিন আজমল যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে বরাকউপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। বাংলা, অসমিয়া, আজমল, এআইইউডিএফ শব্দগুলির কোনওটার উল্লেখ না করেও তারা জানায়, ‘আগামী বছর অনুষ্ঠেয় লোকগণনায় সরকারি নথিতে নিজের মাতৃভাষার প্রকৃত পরিচয় উল্লেখ না করার জন্য কোনও কোনও মহল থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোকে যে আবেদন জানানো হচ্ছে, সেটা সংবিধানের ভাবধারার পরিপন্থী।’
লোকগণনায় ভাষা ইস্যুতে চলতি বিতর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বরাক বঙ্গ পরিষ্কারভাবে বলেছে, ‘লোকগণনার নথিতে মাতৃভাষা কী লেখানো হবে, সেটা একান্তভাবেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজস্ব স্বাধীনতার বিষয়। কোনও কিছুর  দোহাই দিয়ে কেউ এ নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে না। এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেই দলিত করবে, জাতিবিদ্বেষী অশুভ তৎপরতায় প্ররোচনা জোগাবে।’
বরাক বঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন, এ দেশের সংবিধান প্রতিটি জনগোষ্ঠীকে নিজের মাতৃভাষা চর্চা, বিকাশ ও আত্মপরিচয় প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। এই অধিকার সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত রয়েছে বলেই এ দেশে গণতন্ত্র শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই এই ব্যবস্থাকে ক্ষুন্ন  করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। সার্বিকভাবে  তা হবে কল্যাণকর।
সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, অসম একটি বহুভাষিক, বহুজাতিক ও  বহুধর্মীয় রাজ্য, যেখানে প্রতিটি জনগোষ্ঠী নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নিয়ে জীবন নির্বাহ করছে। সমন্বয়ের এই আবহে এ রাজ্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও এক অনন্য চরিত্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, রাজ্যের এই বহুভাষিক চরিত্রকে বিনষ্ট করার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনও তা চলছে। ভাষা ও আত্মপরিচয়ের অধিকারকে খর্ব করার জন্য সুকৌশলে চলছে ভাষা আগ্রাসন। সংখ্যাগুরুর ভাষাকে সামনে রেখে নিযুক্তির ক্ষেত্রে বাঙালি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর কর্মপ্রার্থীদের প্রতি চলছে প্রতিকারহীনভাবে সীমাহীন বঞ্চনা।
তাঁর কথায়, নিযুক্তি বঞ্চনার পাশাপাশি ভাষিক পরিচয়কে সামনে রেখে ডি ভোটার ও নাগরিকত্বের নামে সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন থেকে নানাভাবে চরম হেনস্থা করা হচ্ছে। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো রাজ্যের কলঙ্ক হয়ে উঠেছে। দেশের শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে নবায়িত এনআরসির  চূড়ান্ত খসড়াকে ঝুলিয়ে রেখে একটি সংখ্যলঘু জাতিগোষ্ঠীর দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়ে তালিকা ফের পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু ভাষাভাষী মানুষকে তার ভাষিক পরিচয়ের জন্য রাষ্ট্রহীন নাগরিকে রূপান্তরেরও চক্রান্ত চলছে।
এই পটভূমিতে বিপন্ন মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সমন্বয়ের দোহাই দিয়ে প্রকৃত ভাষা পরিচয় লোকগণনায় প্রকাশ না করার আর্জি বাস্তবিকপক্ষে বিস্ময়কর বলেই মনে করে বরাক বঙ্গ। তাদের দাবি, এ রাজ্যে বসবাসকারী প্রত্যেকেই নিজস্ব পরিচয় অক্ষুন্ন রেখে রাজ্যের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই অবদানকে খাটো করে দেখা বাস্তবকে অস্বীকার করারই নামান্তর হবে। সহাবস্থানের এই ধারা অক্ষুন্ন থাকলেই রাজ্যে বসবাসকারী সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে। পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করা হলে সেটা সামগ্রিকভাবে রাজ্যের অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠবে। তাই বরাকবঙ্গ  লোকগণনায় ভাষা ইস্যুতে উদ্দেশ্যমূলক  কোনও প্রচারে বিভ্রান্ত না হতে সব জনগোষ্ঠীর কাছেই আবেদন রেখেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker