Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
মেলা শুরু হতেই বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখেন সুনীল বিশ্বাস
ওয়েটুবরাক, ১৬ মার্চঃ এক বছর পরে শিলচরে ফের নাগরদোলার ওঠানামা। চলছে ‘অক্টোপাস’, ‘থ্রিডি অ্যাডভেঞ্চার’। সেইসঙ্গে শুরু সুনীল বিশ্বাসের বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখা। মেলা ফুরোলেই তিনি বাড়ি যাবেন। শিলচর থেকে পশ্চিম দিনাজপুরে।
গত বছরের মার্চে করোনাত্রাসে আচমকা শিলচরের গান্ধীমেলা বন্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় নাগরদোলা, অক্টোপাস, থ্রিডি অ্যাডভেঞ্চার সবই। আর তাতেই যে জীবনের ঘোরা-চলা প্রায় বন্ধ হতে চলেছে, তা সে দিন টের পাননি সুনীলবাবু। লকডাউনের জন্য মেলার মাঠেই আটকে রইলেন জুলাই পর্যন্ত। পরে শহরে বেরনোর অনুমতি মিলল, কিন্তু শহর-ছাড়ার ব্যবস্থা নেই। আরও কয়েকমাস পরে শিলচর রেললাইনে ফের যুক্ত হল। সবাই বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাঁকে কে ছুটি দেয়! লক্ষ লক্ষ টাকার সামগ্রী ফেলে রেখে তিনি যাবেন কোথায়! তাই পশ্চিমবঙ্গের এক নাগরদোলা কোম্পানির ম্যানেজার আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠলেন চৌকিদার। সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে তিনি একা থেকে গেলেন শিলচরের মাঠে।
কোম্পানির উদ্দেশ্য, কোথাও একটা মেলার বায়না পেলে সমস্ত জিনিসপত্র তুলে নিয়ে যাবেন। নইলে একুশের গান্ধীমেলা সেরে আসা। কিন্তু করোনার আতঙ্ক কী আর কমে! এই অবস্থায় এ বার গান্ধীমেলা না করারই সিদ্ধান্ত নেয় শিলচর পুরসভা। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে! তবে এগিয়ে আসে একটি বেসরকারি সংস্থা। ডিকে এন্টারপ্রাইজ৷ তাঁদেরও বহু জিনিস মেলার মাঠে পড়ে রয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুরসভার অনুমতি নিয়ে শুরু করল ডিজনিল্যান্ড মেলা।
সুনীলবাবু জানান, ‘লকডাউনের দরুন বিভিন্ন কোম্পানির ৬০-৬৫জন কর্মী আটকে পড়েছিলেন। ছিলেন সার্কাসের মহিলারাও। এর মধ্যে বর্ষার দিনে মাঠে একহাঁটু জল। সবাইকে নিয়ে কী যে অসহায়ত্ব! এক প্রসূতি শিলচরেই সন্তানের জন্ম দিলেন।’
এখন সে সব ভুলে থাকতে চান ৬২ বছরের সুনীলবাবু। তবু স্মৃতিতে ভিড় করে। বললেন, ‘এক চা বাগানে চাকরি করতাম। ২০০৮ সালে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। তখনও এত বিপর্যস্ত বোধ করিনি। গত এক বছরে কত দিন যে গিয়েছে, একটি টাকাও পকেটে নেই।’ তবে শিলচরবাসীকে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন, ‘কোনও দিন না খেয়ে ঘুমোতে হয়নি। লকডাউনের সময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ত্রাণ বণ্টন করেছে। আশেপাশের দোকানদাররা কিছু বাকিও দিয়েছেন।’
আর তাঁর কৃতজ্ঞতা মোবাইল ফোনের আবিষ্কারকের প্রতি। বললেন, ‘নামধাম জানি না। তবু তাঁকে নমস্কার। মোবাইলটা না থাকলে স্ত্রী-ছেলের কথা ভেবে বোধ হয় পাগলই হয়ে যেতাম।’