NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
মুখ থুবড়ে পড়ছে বরাকের যোগাযোগ, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইল বরাকবঙ্গ
ওয়েটুবরাক, ৪ জুন : ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর প্রায় এক কোটি মানুষ বড়াইল ও মেঘালয়ের পাহাড় বেয়ে আসা রেল ও সড়কপথের বেহাল দশার জন্য বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। প্রকৃতির রুদ্ররোষে এই অঞ্চলের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত অবস্থায়। ভারীবর্ষণ হলেই এই জীবনদায়ী রেল ও সড়ক পথ স্তব্ধ হয়ে পড়ছে। ফলে বার বার অবরুদ্ধ হয়ে বরাক, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং মণিপুরের পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনযাপন করছেন। এই অবস্থার স্থায়ী সমাধানকল্পে অবিলম্বে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। গত মাসের ১৫ তারিখও অনুরূপ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল বরাকবঙ্গ ।
এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাধিকা রঞ্জন চক্রবর্তী ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তার পরিবর্তনে সহানুভূতিশীল মন নিয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রকে এগিয়ে আসা দরকার। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত লামডিং- বদরপুর রেলপথ, হাফলং- শিলচর মহাসড়ক এবং জোয়াই-বদরপুর জাতীয় সড়ক কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। কখন পথ বন্ধ হবে আর কখন সচল থাকবে এই দোলাচল এক জটিল মানবিক উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এতে শুধু যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে তা নয়,বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীরও মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে।
লামডিং-বদরপুর রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তরের পরও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিশ্চয়তা আসেনি, এ কথা উল্লেখ করে বরাকবঙ্গের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ৫৮টি স্থানে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০২৩ সালেও বেশ কয়েকটি জায়গায় রেললাইনে ধস নামে। গত দেড় মাসে কয়েকবার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রেল চলাচল বন্ধ ছিল। একইভাবে বড়াইল পাহাড়ের উপর দিয়ে আসা মহাসড়ক ও জাতীয় সড়ক ভারি বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । জোয়াই- বদরপুর ৬ নং জাতীয় সড়কের সোনাপুর ও লুমসুলুঙ এলাকায় ধস নামায় পথটি বারবার বন্ধ হয়েছে । এই অবস্থায় দক্ষিণ অসম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সাবলীল করতে বিকল্প পথের নির্মাণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চন্দ্রনাথপুর- লঙ্কা প্রস্তাবিত বিকল্প নতুন লাইনটি নির্মাণে তড়িৎ গতিতে সরকারি অনুমোদন প্রদানের দাবি জানিয়ে বরাকবঙ্গের চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৮৪ সালে রেলের কারিগরি সংস্থা ‘ রাইটস ‘ অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক এলাকা দিয়ে প্রস্তাবিত লাইনটি নির্মাণের প্রস্তাব দিলেও অর্থের অভাব দেখিয়ে তা ফাইলচাপা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২ সালে পাহাড় লাইনে বড় বিপর্যয়ের পর এই পথটির ফাইনাল লোকেশন সার্ভে করতে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে প্রশাসনকে অর্থ মঞ্জুরি দেয় রেল মন্ত্রক। কিন্তু এক বছর অতিক্রান্ত হলেও বিষয়টি ধোঁয়াশায় রয়েছে। মহাসড়কের কাজ কুড়ি বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি । মেঘালয়ের মধ্য দিয়ে সোনাপুর হয়ে আসা জাতীয় সড়কের বিকল্প নির্মাণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরাক নদীকে জাতীয় জলপথ-১৬ হিসেবে ঘোষণা করার পরও বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল এখনও কাগজেই বন্দি রয়েছে। এই গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে বরাকবঙ্গের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়। চিঠির প্রতিলিপি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী নীতিন গাডকারি, জাহাজ চলাচল মন্ত্রী সর্বানন্দ সাোনোয়াল, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও বরাক উপত্যকার দুই সাংসদকে দেওয়া হয়েছে।