NE UpdatesHappeningsBreaking News

মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটিয়ে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় দেশ

ওয়েটুবরাক, ২১ জুলাই : শত শত পুরুষ  উল্লাসে মেতে উঠেছেন৷ সঙ্গে দুই মহিলা৷ একেবারে বিবস্ত্র৷ হাঁটার মধ্যেই চলছে যৌন হয়রানি৷ যে যেখানে পারছেন, ছুঁয়ে দেখছেন৷ পরে খেতের মধ্যে নিয়ে হল গণধর্ষণ৷

ঘটনা ৪ মে-র৷ এফআইআর হয়েছে ১৮ মে৷ ঠিক দুই মাস পরে ১৯ জুলাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ভিডিয়ো৷ সাড়া পড়ে দেশ জুড়ে৷ মুখ্য অভিযুক্ত হুইরেম হিরোদাস মেইতেই নামে ২৮ বছর বয়সি যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ এ পর্যন্ত এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ বলেন, দোষীদের একজনও রেহাই পাবে না৷ ভিডিয়ো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, আরও কারা  ছিলেন সে দিনের ঘটনায়৷
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য স্বীকার করেন, গত দুই-আড়াই মাসে এই ধরনের ঘটনা শতাধিক ঘটেছে৷ শত শত এজাহার জমা পড়েছে৷ বুধবার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই কড়া পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা৷ বীরেন সিংহ দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন৷ সে জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থার আশ্বাস দেন তিনি৷
প্রশ্ন ওঠে, তবে কি পুলিশ ভিডিয়ো প্রকাশের অপেক্ষায় ছিলেন? নইলে এতদিনে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ হলো না? মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশের ডিজিপি থেকে অনেকে সহমর্মিতা প্রকাশ করলেও এই প্রশ্নের জবাব নেই তাঁদের কারও কাছে৷
জবাব দিয়েছেন সেই ধর্ষিতা রমণী৷ “ব্যবস্থা নেবে পুলিশ! এরাই তো আমাদের ওই উল্লসিত পুরুষদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন৷ আমাদের বিফানম গ্রাম পুরো লুটপাট করে প্রতিটি ঘরে মেইতেইরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে৷ সবাই প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে,” বললেন ধর্ষিতাদের একজন৷ তাঁর কথায়, “আমরাও ছুটছিলাম৷ থাউবাল পুলিশ আমাদের পথরোধ করে৷ পাঁচজনকে ধরে তাদের হাতে তুলে দেয়৷” পাঁচজনের মধ্যে ভিডিয়োতে থাকা দুই ধর্ষিতা ছাড়াও ছিলেন আরও এক মহিলা৷ ছিলেন এক ধর্ষিতার বাবা-ভাইও৷ এঁরা আর বেঁচে নেই৷ “তাদের হত্যা করে, আমাদের সঙ্গে যে মাত্রার যৌন অত্যাচার সম্ভব, সবকিছু করে চলে যায় এরা৷ আমরা প্রায় অজ্ঞান হয়েই পড়েছিলাম৷ একে বাঁচা বলে না বলেই এরা আমাদের হত্যা করেনি৷ বেঁচে রইলাম আমরা দুই মহিলা”, কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি৷
পঞ্চাশোর্ধ্ব তৃতীয় মহিলা অবশ্য জানান, তাকেও সমস্ত কাপড় খুলতে বাধ্য করে এরা৷ পরে এদিকে-ওদিকে হাত পড়ছিল৷ কেউ কেউ মজা করেও নগ্নদেহে চড়-থাপ্পড় মারছিল৷ তবে তাকে কেউ ধর্ষণ করেনি বলেই জানান তিনি৷ তাঁর কথায়, ২১ বছরের তরুণীকে পেয়ে সবাই তাকে খাবলে খেতেই লাফাচ্ছিল৷ বাবা-ভাইও তার সঙ্গে ছিল৷ ৫৬ বছর বয়সী প্রৌঢ়কে পুত্র-কন্যার সামনে প্রথমেই মেরে ফেলা হয়৷ পরে দিদিকে গণধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে ১৯ বছরের তরুণও খুন হয়৷
ওই অবস্থায় কারা ভিডিয়ো করল, কার মাধ্যমে তা ভাইরাল হল, কেউ বলতে পারছেন না৷ তবে এটি আরও আগেই ছড়িয়ে পড়ত, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় পোস্ট হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে৷ এর আগে প্রায় একই ধরনের অন্য একটি ভুয়ো ভিডিয়ো মণিপুরের ঘটনা বলে নিন্দার ঝড় তুলেছিল৷ এর পরেই পুলিশ একে ভুয়ো বলে জানিয়েছিল৷
বুধবার নতুন ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে অবশ্য পুলিশের আর মুখরক্ষার জন্য কোনও শব্দ ছিল না৷ মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সবাই৷
বড়কর্তারা কেউ মুখ না খুললেও নাম উল্লেখ না করার শর্তে এক মাঝারি মাপের পুলিশ অফিসার জানান, ওই গ্রামের গাঁওবুঢ়া কাঙপকপি জেলার সাইকুল থানায় লিখিত এজাহার দেন৷ ঘটনাস্থল নংপক সেকমা থানার আওতায় বলে এজাহারটি সেখানেই পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু ৮০০ থেকে হাজার মানুষের কথা উল্লেখ থাকায় পুলিশ আর একে নিয়ে এগোয়নি৷
তরুণী ধর্ষিতা জানান, কাউকে তিনি চিনতে পারেননি৷ শুধু একজন তার ভাইয়ের বন্ধু ছিল বলে পুলিশকে তার নামই প্রকাশ করেছে৷ তবে সে-ই ধৃত হিরোদাস মেইতেই কিনা, তা পরিষ্কার বলতে চাইছেন না৷
ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশন এবং জাতীয় জনজাতি কমিশনকে এর তদন্ত করতে অনুরোধ জানায়৷ তাদের কথায়, সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ভিডিয়োই প্রমাণ করে, এই ধরনের কত অমানবিক ঘটনা যে ঘটে চলেছে!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also

Close
error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker