India & World UpdatesHappeningsBreaking News
বাংলাদেশে সঙ্কট গভীরতর, আলোচনায় নারাজ আন্দোলনকারীরা
ওয়েটুবরাক, ১৯ জুলাই : বাংলাদেশে শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে আরও তিন জনের। বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রেন চলাচল। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। এমনকি, মিছিল, সমাবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। তাতেও আন্দোলন থামেনি। এই আবহে বাংলাদেশের নরসিংডি জেলার একটি জেলে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। জেল ভেঙে পালিয়ে যান বহু বন্দি। জেলের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘কত জন পালিয়েছেন, জানি না। তবে সংখ্যাটা শতাধিক হবে।’’
শুক্রবার তিন জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। তাঁদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় মিলেছে। তৃতীয় জনের পরিচয় জানা যায়নি। সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। অন্য দিকে, বেসরকারি সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সরকার এবং পড়ুয়াদের সংঘাতের জেরে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেই ২৮টি দেহের সন্ধান মিলেছে।
আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাংলাদেশে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। বাংলাদেশের ডাক, টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জানান, গুজব ছড়ানো বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা।
রাজধানী ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শুক্রবার দুপুর থেকেই পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রেন পরিষেবাও। রাজধানী ঢাকার মধ্যে কোনও ট্রেন চলাচল করবে না। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বন্ধ রেল পরিষেবা। শুক্রবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ঢাকায় কোনও ট্রেন প্রবেশ করবে না। এমনকি, ঢাকা থেকে কোনও ট্রেন কোথাও যাবেও না। সরকারি সূত্রে খবর, আন্দোলনকারীরা যাতে ট্রেন পরিষেবা না পান, সে কারণেই এই ব্যবস্থা।
তার পরেও আন্দোলন দমানো যায়নি বাংলাদেশে। শুক্রবারও ঢাকার উত্তরা, মহম্মদপুর, বাড্ডা-সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছর্রা গুলি, রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ।
সরকার পক্ষের দাবি, পড়ুয়াদের বদলে জামাত এবং বিএনপি কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। শাসক দল আওয়ামি লিগের কর্মীদের উপরও হামলা চালানো হচ্ছে। রাজধানীর আকাশে নজরদারির জন্য টহল দিয়েছে হেলিকপ্টারও। কিন্তু পড়ুয়ারা অনড়। দেশে কোটা সংস্কার করতেই হবে। সরকারের তরফে আলোচনার ডাক দেওয়া হয়েছিল। এ-ও জানানো হয়েছিল, হাসিনার সরকারও কোটা সংস্কারেরই পক্ষে। কিন্তু পড়ুয়ারা আলোচনা প্রস্তাব ফিরিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁদের সাফ জবাব, ‘‘রক্ত মাড়িয়ে আলোচনা নয়।’’
১৯৭২ সাল থেকেই চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাংলাদেশে। ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মুজিবুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য চাকরিতে আলাদা আসন সংরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া, সংরক্ষণের সুবিধা পান নারী, সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের জন্যও কিছু সংরক্ষণ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এ ভাবে মোট ৫৬ শতাংশ আসন চলে গিয়েছে সংরক্ষণের খাতায়। বাকি ৪৪ শতাংশ আসন রয়েছে সাধারণের জন্য। যেখানে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে।