Barak UpdatesHappenings
ফোরাম এগিয়ে গেলেও ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি জটিলতা বাড়িয়েই চলেছে, অভিযোগ
৬ ডিসেম্বর: সরকারি আধিকারিকদের চূড়ান্ত অসহযোগিতায় কাছাড় জেলায় স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলন পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে। রোগীরা রক্তের জন্য হাহাকার করছেন। কিন্তু তাঁরা জাতীয় রক্তনীতি লঙ্ঘন করে একের পর এক ফরমান জারি করছেন৷ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এই অভিযোগ করে বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম৷ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি আশু পাল ও সাধারণ সম্পাদক করুণাময় পাল বলেন, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যবিবরণী লিখতে গিয়ে সভার সিদ্ধান্ত বদলে দিচ্ছেন৷ এমনকি জেলার মন্ত্রী তথা শিলচর মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পরিমল শুক্লবৈদ্য ফোরামের রক্তদান আন্দোলনকে ক্ষিপ্রতর করতে চাইলেও একাংশ পদাধিকারী তা মেনে নিতে পারছেন না৷
মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের বর্তমান ইনচার্জ ডা. রাজীব বিশ্বাসের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন তাঁরা৷ বলেন, তিনি ওই দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সংঘাতের সূচনা৷
আশু পাল ও করুণাময় পাল বলেন, প্রথমদিকে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জাতীয় রক্তদান নীতি মেনেই প্রত্যেক রক্তদাতাকে ডোনার কার্ড দিতেন৷ ওই দাতা বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনে ওই কার্ড দিয়ে রক্ত দিতেন৷ কিন্তু ডাঃ বিশ্বাস প্রথমেই স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের অধিকারে কোপ বসান। ভারতীয় রক্তনীতি উল্লঙ্ঘন করে এক নির্দেশ জারি করে তিনি রক্তদাতাদের ডোনার কার্ড দেওয়া বন্ধ করে দেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, কার্ডের বিনিময়ে রক্ত দেওয়ার প্রথাও আর ব্লাড ব্যাঙ্ক মেনে চলবে না। দেশের রক্তনীতিতে বলা হয়েছে, রিপ্লেসমেন্ট রক্তদানকে নিরুৎসাহিত করে স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে সংগৃহীত রক্তের উপরেই বেশি করে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে৷ সেখানে তিনি বলেন, রিপ্লেসমেন্ট রক্তদাতা নিয়ে যেতে না পারলে যত সিরিয়াস রোগীই হোন না কেন, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত দেওয়া যাবে না। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্যও বিনা রিপ্লেসমেন্টে রক্ত দেওয়া তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন।
ডোনার কার্ড সংক্রান্ত বিবাদ এবং নানা অপবাদের পর ২০১৯ সালের মে মাস থেকে মেডিকেল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে শিবির করা বন্ধ রেখেছে ফোরাম। ফলে রক্ত নিয়ে আরও বেশি সংকটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তা দেখে ফোরামই একাধিকবার অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে এই অচলাবস্থা দূর করার আবেদন জানায়।আশুবাবুরা জানান, সংকটের অবসানকল্পে তাঁরা উপত্যকার জনপ্রতিনিধিদের কাছেও আবেদন জানিয়েছিলেন। মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য ছাড়া কেউ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেননি। কিন্তু মন্ত্রীর উপস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যবিবরণী লিখতে গিয়ে বদলে ফেলেছে৷ আলোচনায় ঠিক হয়েছিল, ফোরামের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত শিবির থেকে যে পরিমাণ রক্ত সংগৃহীত হবে, তার ৭০ শতাংশ ব্যবহার করবে ব্লাড ব্যাঙ্ক। ৩০ শতাংশ রক্ত দেওয়া হবে তাদের, যারা ফোরামের মাধ্যমে রক্তের জন্য আবেদন করবেন।
এ ছাড়া, ব্লাড ব্যাঙ্কের কাজকর্মে স্বচ্ছতা রাখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে৷ সেখানে রক্তদাতা সংগঠনগুলোর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে। মোট পাঁচটি সিদ্ধান্ত হয় সে দিনের সভায়৷ কিন্তু সভার এক মাস পর সেইসব সিদ্ধান্ত সমূহ সংবলিত এক বয়ানে ৩০ শতাংশ রক্তের জায়গায় ১৫ শতাংশ রক্তের কথা লেখা হয়েছে। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, “যদি এটা রাজ্যের রক্ত সঞ্চরণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন পায়”। দ্বিতীয়ত, ব্লাড ব্যাঙ্কের স্বচ্ছতা সম্পর্কিত কমিটি গঠনের কথার কোনও উল্লেখই নেই। ফলে মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে রক্তদান শিবির করা বন্ধই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফোরাম।
আশু পাল, করুণাময় পাল আরও জানান, গত বছর মার্চ মাস থেকে শিলচর সিভিল হাসপাতালে একটি সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলা হয়েছে। ফোরাম সেই ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে শিবির অনুষ্ঠিত করছিল। তারা শিবিরের রক্তদাতাদের ডোনার কার্ড দিচ্ছিলেন এবং কার্ডের বিনিময়ে রক্তও দিচ্ছিলেন।
কিন্তু লিখিত নির্দেশ ছাড়াই গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সিভিল হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং রেডক্রশ ব্লাড ব্যাঙ্ক স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের কার্ড দেওয়া এবং কার্ডের বিনিময়ে রক্ত দেওয়ার প্রথা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে রক্তের প্রয়োজনে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে৷ ফোরাম আন্তরিকতার সঙ্গে এই সঙ্কট নিরসন করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলেও রহস্যজনক কারণে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি জটিলতা বৃদ্ধি করেই চলেছে বলে অভিযোগ করেছে ফোরাম৷
মঙ্গলবার শিলচরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ফোরামের জেলা সভাপতি মনোজকুমার পাল, সম্পাদক সব্যসাচী রুদ্রগুপ্তও মত বিনিময় করেন৷